আয়ান বাবুটা, সোনামনিটা, আল্লাহ্ তোমাকে ভালো করে দিবেন, সুস্থ করে দিবেন।- মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন কিংবদন্তি ব্যান্ড সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। সদ্য প্রয়াত এ জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর এক অজানা মহানুভবতার গল্প তুলে ধরেছেন আবু বকর সিদ্দিকী নামে জনৈক ব্যক্তি। নেত্রকোনার কৃষ্ণপুর বড়বাড়ির অধিবাসী ওই ব্যক্তি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দাবি জানিয়েছেন যে, ২০১৪ সালে তার বোনের আড়াই বছরের ছেলেকে বাঁচাতে চিকিৎসার্থে প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চু আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন। সেই সময় আয়ানের জন্য সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন আবু বকর। সেই পোস্ট পড়েই আইয়ুব বাচ্চু সাহায্যের জন্য হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন আবু বকর। শনিবার দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে দেয়া তার স্ট্যাটাসটি ইতিমধ্যে তুমুল আলোচিত ও শেয়ার হয়েছে। তার সেই স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল- ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমার আড়াই বছর বয়সী ভাগিনা আয়ানকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে জরুরি ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন করানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। অপারেশনটা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। আয়ানকে বাঁচাতে হলে এই অপারেশনের কোনো বিকল্প ছিল না। বিভিন্ন সোর্স থেকে অপারেশনের জন্য টাকা সংগ্রহ করার পরও প্রায় দেড় লাখ টাকার ঘাটতি ছিল, যা কোনোভাবেই এই অল্প সময়ের মধ্যে জোগাড় করতে পারছিলাম না। তখন আর উপান্তুর না দেখে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ফেসবুকে আয়ানের অপারেশনের জন্য সাহায্য চেয়ে একটি পোস্ট দিই। সময় হাতে ছিল আরও সাত ঘণ্টা। কিন্তু সকাল ৯টা পর্যন্ত কারও কোনো সাহায্য না পেয়ে হতাশ হয়ে গেলাম। ডাক্তার সাহেবকে অনুরোধ করলাম অপারেশন শুরু করার প্রস্তুতি নিতে এবং সংগৃহীত টাকা পেমেন্ট করে বকেয়া টাকার জন্য তিন ঘণ্টা সময় নিলাম। অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ঠিক তখনই এক মহান ব্যক্তির আগমন ঘটল সেখানে। এসেই তিনি আয়ানের অভিভাবককে খুঁজতে লাগলেন। আমরা তখন তার সঙ্গে কথা বললাম এবং খুবই অবাক হলাম ওনাকে দেখে। জানতে পারলাম উনি ফেসবুকের পোস্টটা দেখে আয়ানকে দেখতে এসেছেন। জরুরি বিভাগ থেকে আয়ানকে অচেতন এবং অক্সিজেন মাস্ক পরানো অবস্থায় অপারেশন থিয়েটারের সামনে আনা হয়। ওই ভদ্রলোক আয়ানকে দেখে কাছে গেলেন এবং আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দুই-তিনবার বললেন, আয়ান বাবুটা, সোনামনিটা, আল্লাহ্ তোমাকে ভালো করে দিবেন, সুস্থ করে দিবেন। এ কথাগুলো বলে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলেন। তার কান্না দেখে আমরাও কেঁদে ফেললাম। যাই হোক, কিছুক্ষণ পর এর মধ্যেই আয়ানকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হল। প্রায় চার ঘণ্টা লাগল অপারেশন শেষ হতে। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে অপারেশন সফল হল। ওই বিশেষ ব্যক্তিটি তখন জানালেন সম্পূর্ণ বকেয়া টাকা তিনি পরিশোধ করে দিয়েছেন এবং অনুরোধ করলেন যে উনি জীবিত থাকাবস্থায় আমরা যাতে ওনার এই আর্থিক সহযোগিতার কথা কাউকে না বলি। আজ উনি জীবিত নেই। তাই নিজেকে কোনোভাবেই আর আটকাতে পারলাম না, বলে ফেললাম। উনি আর কেউ নন- প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু। মহান আল্লাহ্তায়ালা এই মহামানবকে বেহেশত নসিব করুক... আমিন, আমিন, আমিন। প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার মাত্র ৫৬ বছর বয়সে আইয়ুব বাচ্চু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জনপ্রিয় এ শিল্পীর মৃত্যুতে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারবাদক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। ১৯ অক্টোবর পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। সূত্র: যুগান্তর এমএ/ ০২:২২/ ২১ অক্টোবর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2yOLsL6
October 21, 2018 at 08:27PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top