ঢাকা, ১৪ অক্টোবর - ভাগ্যের করুণ পরিহাস বুঝি একেই বলে। যার হাতের শৈল্পিক ছোঁয়াতে নায়িকারা পর্দায় হাজির হয়েছেন স্বপ্নের রানী হয়ে, তার হাতেই আজ ভিক্ষের থালা। মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি সাজিয়েছেন শাবানা, ববিতা, অঞ্জু, মৌসুমীর মতো নন্দিত নায়িকাদের। আজ ভিক্ষে করছেন পথে পথে। হায় জীবন! নাম কাজী হারুন। চলচ্চিত্রপাড়ায় খুবই পরিচিত তিনি। আর হবেনই বা কেন? বেদের মেয়ে জোছনার মতো ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে তিনি মেকআপম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি অন্য জীবন, শঙ্খমালা, গোলাপী এখন ঢাকা, জীবন সংসারসহ শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি ও প্রশংসা। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হৃদয় থেকে হৃদয় ছবিতে কাজের জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। সেই মেকাআপম্যান হারুনের সংসার চালাতে এখন ভিক্ষে করতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ির ফরিদাবাদ বস্তিতে স্ত্রী মহুয়া আকতারকে নিয়ে থাকেন তিনি। তিনটি বাড়িতে কাজ করে ঘর ভাড়া দেন স্ত্রী মহুয়া, আর ভিক্ষা করে জীবনধারণের খরচ চালান হারুন। শুধু দারিদ্রতাই নয়, হারুনের দারুণ এক প্রতিপক্ষ তার শারীরিক অসুস্থতা। যার সুচিকিৎসা তিনি করাতে পারছেন না তিনি। সিনেমায় নেই অনেকদিন। তাই ভিক্ষার টাকাতেই কোনোমতে চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা। কাজী হারুনের স্ত্রী মহুয়া আকতার বলেন, বেশ ভালোই ছিলেন তারা বিয়ের পর থেকে। অর্থের অভাব ছিলো না। কিন্তু ২০০৯ সালে কাজী হারুনের ব্রেইন স্ট্রোক হবার পর থেকেই দিন বদলে যায়, আসে হতাশা আর কষ্টের দিন। স্ট্রোকের পর শরীরের ডান পাশ অকেজো হয়ে যায়। অসুস্থ হওয়ার কারণে আর কাজ করতে পারছিলেন না। শুরু হয় অর্থকষ্ট। চলচ্চিত্রের কেউ এসে খবরও নেননি কখনো। অভিমান আর কষ্টে বাধ্য হয়েই ২০১১ সাল থেকে তিনি ভিক্ষা করতে শুরু করেন হারুন। মহুয়া আরও জানান, মেয়ের বিয়ের খরচ যোগাতে ২০১০ সালে তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সোনার মেডেল। সেটাতে এক ভরি স্বর্ণ ছিল। তখন স্বর্ণের দাম ছিল মাত্র আট হাজার টাকা। আর যে পুরস্কারটি ছিল, সেটি বিক্রি করতে পারিনি। কারণ পিতলের কোনো দাম নাই। সেটা ফেলে দিয়েছেন হারুন। এর কোনো মূল্য বা এর প্রতি কোনো আবেগ আর কাজ করে না তার মধ্যে। মহুয়া বলেন, বস্তিতে দেড় হাজার টাকা দিয়ে একটা ছোট রুমে ভাড়া থাকি আর সে। আমি তিনটি বাড়িতে কাজ করি। সেখানে থেকে পাঁচশ করে দেড় হাজার টাকা পাই, সেই টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া দিই। আর তিনি ভিক্ষা করে দিনে দু-তিনশ টাকা পান, সেই টাকা দিয়ে বাজার আর উনার ওষুধ কিনি। খুব সমস্যা হয় আমি অসুস্থ হলে। উনাকে দেখারও কেউ নেই আমি ছাড়া, আর আয়ও বন্ধ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মহুয়া বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের চাই। আমাদের চেনাজানা বড় কোনো লোক নেই। কে আমাদের তার কাছে নিয়ে যাবে? সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করলাম, তিনি যেন আমাদের পাশে দাঁড়ান। আমার স্বামী শিল্পী মানুষ। পথে পথে ভিক্ষে করে বেড়ান। এলাকার লোক এটা দেখে কষ্টও পায়, অনেকে তাচ্ছিল্যও করে। সবাই বলে প্রধানমন্ত্রীর নাকি অনেক বড় মন। তিনি নিশ্চয় আমাদের কষ্টটা বুঝবেন। তিনি তো কত শিল্পীকেই সহযোগিতা করেন। মহুয়ার প্রত্যাশা, যে হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিন গুণের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন, সেই হাতে এবার মমতা আর আস্থার হাতটাও তিনি রাখবেন। তথ্যসূত্র: জাগোনিউজ২৪ এনওবি/২২:৫৪/১৪ অক্টোবর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2NFh4Ip
October 15, 2018 at 05:06AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন