মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বিশ্বনাথ প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্ব-পরিবারের বসবাস করে আসছেন। শীতকালে অনেক প্রবাসী স্ব-পরিবারে দেশে আসেন। এবার অনেক প্রবাসী দেশে আসবেন বলে দেশে থাকা তাদের স্বজনরা জানান। দেশে এসে অনেকেই জমি ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন। সিলেটের বিশ্বনাথে একটি ৫তলা বাসার দ্বিতীয় তলা ভবন ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে চলছে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে রেজিস্ট্রেশনের কাজ করতে হয় এ অফিসে। দীর্ঘ দিনেও অফিসের নিজস্ব ভবন না থাকায় দলিল করতে আসা লোকজনকে পুহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। অনেক বৃদ্ধ মানুষ দু-তলা ভবনে যাতায়াত করতে কষ্ট হয়। তারপরও বাধ্য হয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে দু-তলা ভবনে যেতে হয়। প্রতি মাসে বেশ কিছু দলিল সম্পাদন হয়। ফলে সরকারি কোষাগারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জমা হলেও নিজস্ব ভবন নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অফিসটির দু’তলায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজ করতে হয়। এতে রেজিস্ট্রি করতে আসা অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিরা বিপাকে পড়ছে। দলিল লেখক রয়েছে প্রায় ৪৭জন।
এদিকে, দীর্ঘদিন যাবত সাব-রেজিষ্টারের পদ শুন্য থাকায় প্রবাসী অধ্যুষিত এই বিশ্বনাথের জমি-জমা বেচা-কেনায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকার ক্রেতা-বিক্রেতাদের। বর্তমানে সপ্তাহে দুইদিন খন্ডকালিন সাব-রেজিষ্টার সহিবুর রহমান প্রধান রেজিষ্টারী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
গত সপ্তাহে সরেজমিনে বাসা ভাড়ায় অবস্থিত সাব-রেজিষ্টার অফিস ঘুরে দেখাগেছে, পরিত্যক্ত সাব-রেজিষ্ট্রারী অফিসের পাশে হাজী মোহাম্মদ আলী ভিলা ৫তলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিশ্বনাথ সাব-রেজিষ্ট্রারী অফিসের কার্যক্রম করা হয়। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছোট ছোট ৮টি রুমে চলছে সাব-রেজিষ্টার অফিসের কাজ। অফিসের স্টাফরা চাপের মধ্যে কাজ করছেন। রেজিষ্টারী কাজে আসা মানুষের নেই কোন তেমন বসার স্থান। ছোট রুমেগুলো গাদাগাদি করে অফিস করছেন প্রায় ১৬জন কর্মকর্তা-কর্মচারী-নকলনবীশ। প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা বাসা ভাড়ায় চলে অফিস। বছরের পর বছর মোটা অংকের অর্থ ভাড়া প্রদান করা হচ্ছে। ফলে সরকারের বিপুর পরিমান অর্থ অজ্ঞাত কারণে খোয়া যাচ্ছে।
বিশ্বনাথ সাব-রেজিষ্টারী অফিস সূত্রে জানাগেছে, ষাট-এর দশকে ১তলা ভনের ৩ কক্ষ বিশিস্ট উপজেলার সাব-রেজিষ্টারী অফিস ভবনটি উপজেলা সদরে নির্মান করা হয়। এর পর থেকে পর্যন্ত ভবনের উল্লেখ¬যোগ্য কোন সংস্কার না হওয়ার কারনে ভবনটি করুন দশায় পরিনত হয়। যার ফলে ভবনের বিভিন্ন অংশের দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল, ছিটকে পড়ছে ছাদের প্লাস্টার, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ছাদের ফাঁটা (ছিদ্র) দিয়ে ভিতরে পড়ার কারনে রেকর্ড রুমে থাকা প্রায় ১০ হাজারেরও বেশী মূল্যবান দলিল নষ্ট হওয়ায় আশংকা দেখা দেয়। তাছাড়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ১১৫টি মৌজার রেকর্ডপত্র রয়েছে। ২০০৯ সালে ২৮ জানুয়ারী ও একই বছরের ৯ আগস্ট পৃথক পৃথক ভাবে স্মারকের মাধ্যমে সাব-রেজিষ্টারী অফিস ভবনের এ বেহাল দশার কথা নির্বাহী প্রকৌশলৗ গণপূর্ত ও ইমারত বিভাগ সিলেটকে জানানো হয়। অবশেষে ২০১২ সালের শেষের দিকে সাব-রেজিষ্টারী অফিস ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করে গণপূর্ত বিভাগ। এরপর ২০১৩ সাল থেকে ভাড়া বাসায় সাব-রেজিষ্টারী অফিসের কার্যক্রম চলে আসছে।
এব্যাপারে সাব-রেজিষ্টারী অফিসে দলিল করতে আসা বৃদ্ধ আব্বাছ আলী বলেন, অফিসের দ্বিতীয় তলায় ছিড়ি বেয়ে উপর উঠতে অনেক কষ্ট পুহাতে হয়। প্রবাসী এলাকায় একটি সাব-রেজিষ্ট্রার ভবন না থাকা এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক।
নকলনবীশ প্রদ্বীপ কুমার ঘুষ বলেন, ভাড়া বাসায় অফিস করতে আমাদের পুহাতে হয় অনেক দুর্ভোগ। বৃদ্ধ মানুষ দলিল করতে অফিসের দ্বিতীয় তলায় উঠতে অনিহা প্রকাশ করেন। অফিস ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহবান জানান।
বিশ্বনাথের খন্ডকালীন সাব-রেজিষ্টার সহিবুর রহমান প্রধান বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ভাড়া বাসায় কার্যক্রম চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাব-রেজিষ্টার অফিস ভবন নির্মিত হচ্ছে। অথচ আমাদের নিজস্ব জায়গা থাকা সত্ত্বেও অফিস ভবন নির্মাণ হচ্ছেনা। জরুরী ভিত্তিত্বে অফিস ভবন নির্মাণের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2Q6DioG
October 30, 2018 at 09:13PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন