এনায়েত বাজার মোড় ফেলে একটু সামনে গেলেই ডান দিকে একটি গলি ভেতরের দিকে চলে গেছে। ওই গলি দিয়ে একটু এগুলোই হাতের বাম পাশে চোখে পড়বে পুরাতন একটি তিন তলা ভবন। লাল রঙের এই ভবনেই শৈশব-কৈশোর কেটেছে ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর। ওই ভবনের দোতলার একটি কক্ষে থাকতেন এই গিটার লিজেন্ড। আর রাতে ছাদেই গিটার বাজাতেন তিনি। এরপরই আস্তে আস্তে তার সুর ছড়িয়ে পড়েছে উপমহাদেশের আকাশে। আইয়ুব বাচ্চুর চাচাতো ভাই সোলায়মান খোকা এমনটাই জানালেন। বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে তিনি বলেন, আইয়ুব বাচ্চু আমার থেকে দুই বছরের ছোট ছিল। আমাদের দুজনের মধ্যে ছিল খুব মিলও। একসাথে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতাম। সাইকেল নিয়ে অনেক দূরে চলে যেতাম। তখন সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল রবিবার, আমরা ছুটি দিনে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। তিনি আরও বলেন, এটি সম্ভবত ১৯৭২ বা ৭৩ সালের কথা। আমি আর বাচ্চু একসাথে প্রথম ঢাকা গিয়েছিলাম। আমার দুলাভাই আমাদের দুজনকে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা অনেক ঘুরে বেড়িয়েছি। আইয়ুব বাচ্চুর সংগীত চর্চা নিয়ে জানতে চাইলে সোলায়মান খোকা বলেন, বাচ্চু তখন ক্লাস এইট কী নাইনে পড়ে। তখন জেঠা (বড় চাচা) তাকে একটা গিটার কিনে দিয়েছিলেন। ও সব সময় ওই গিটার বাজাতো। রাতে ছাদে গিয়ে গিটার বাজাতো। তার একটা টেপরেকর্ডার ছিল। ওই টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে। পরে সে শুনতো। আমাদেরকেও শুনাতো। তখন আমরা তার প্রশংসা করতাম। বাচ্চু পড়াশোনাকে তেমন প্রাধান্য দিত না। গান বাজনা নিয়ে সব সময় পড়ে থাকত। একই ধরনের মন্তব্য করেন প্রতিবেশী আইয়ুব বাচ্চুর কাছাকাছি বয়সী মোহাম্মদ এবায়দুল্লাহ। তিনি বলেন, আমার বয়স তখন ১০/১২ বছর আইয়ুব বাচ্চু ভাই তখন মিউনিসিপাল স্কুলে ক্লাস এইটে পড়তেন। কিন্তু তার মনোযোগ যেন ছিল চায়ের দোকানে বসে বসে গিটার বাজানো। আর আমাদের সিঙ্গারা, চমুচা খাওয়াতেন। তিনি বলেন, আইয়ুব বাচ্চু ভাইদের পরিবার অনেক ধার্মিক ছিলেন। গান বাজনা খুব একটা পছন্দ করতেন না। অনেক কষ্ট করেই তিনি গান করতেন। আইয়ুব বাচ্চুর ছোট চাচির শাহেদা বেগমের ভাই ফকির আহমদ বলেন, আমরা যখন বোনের বাসায় আসতাম তখন দেখতাম সে এই ছাদেই বেশি সময় কাটাতো। ছাদে বসে গিটার বাজাতো। ঘুড়ি উড়াতে সে ভীষণ পছন্দ করতো। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৮ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের মাধ্যমে সংগীত জগতে তার পথচলা শুরু হয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোলস ব্যান্ডে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। এর প্রথম অ্যালবাম এলআরবি বাজারে আসে ১৯৯২ সালে। এটাই দেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম। এলআরবির অন্য অ্যালবামগুলো হলো সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারি মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), স্পর্শ (২০০৮), যুদ্ধ (২০১২) এবং সর্বশেষ রাখে আল্লা মারে কে (২০১৬) । ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত রক্তগোলাপ হলো তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। তার সাফল্যের শুরুটা হয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ময়নার (১৯৮৮) মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালে বাজারে আসে তার তৃতীয় একক অ্যালবাম কষ্ট। এর প্রায় সবকটি গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে কষ্ট কাকে বলে, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, অবাক হৃদয়, আমিও মানুষ গানগুলো। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো হলো সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)। আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চলো বদলে যাই। এর কথা ও সুর তারই। শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় আরও রয়েছে শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি, ঘুম ভাঙা শহরে, হকার, সুখ, রুপালি গিটার, গতকাল রাতে, তারা ভরা রাতে, এখন অনেক রাত ইত্যাদি। রক ঘরানার গানের এই শিল্পী আধুনিক আর লোকগীতিতেও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান লুটতরাজ ছবির অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে। এছাড়া আম্মাজান ছবির শিরোনাম গানও জনপ্রিয়। এমএ/ ১২:৩৩/ ১৯ অক্টোবর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2QZv0iq
October 19, 2018 at 06:40AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন