চট্টগ্রাম, ২০ অক্টোবর- কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ব্যান্ডদল সোলসর সদস্য পার্থ বড়ুয়া বলেছেন, বাচ্চু ভাই আমাদের দেশের প্রথম প্রফেশনাল গিটারিস্ট। তিনিই প্রথম সাহস দেখিয়েছিলেন গিটার বাজিয়ে প্রফেশনালি পূর্ণ সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা যায়। শনিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে এসব অনুভূতির কথা জানান তিনি। পার্থ বড়ুয়া বলেন, বাচ্চু ভাই আমার শিক্ষক ছিলেন। আমাকে নিজ হাতে তৈরি করেছেন। গিটার শিখিয়েছিলেন ভালোবেসে। তারপর অনেকদিন তার সঙ্গে কিবোর্ড বাজিয়েছি। তিনিই আমাকে ঢাকায় নিয়ে গেছেন। আমার পেশাদার গানের জীবনের শুরুটাও তার হাত ধরে। তিনি আরও বলেন, উনি যে কোনো ধরনের মিউজিশিয়ান ছিলেন সাধারণ দর্শক সেটা খুব বোঝে। হয়তো তার গান শুনে গিটার বাজানো দেখে সবাই তার ভক্ত হয়েছেন। উনি অনেক বড় মাপের মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন। ওনার গান শুনে কখনও মনে হতো না ইংরেজি গান শুনছি। যত কিছুই হোক শুনে মনে হতো বাংলা গান শুনছি। এমন একজন মিউজিশিয়ান হারিয়েছি যা কখনও পূরণ হবার না। বাচ্চু ভাইয়ের মতো শিল্পী আর বাংলাদেশে আসবে কি-না সন্দেহ আছে। পার্থ বলেন, আমি আমার ভাইকে হারিয়েছি। আমার অভিভাবককে হারিয়েছি। সেই সাথে দেশ হারিয়েছে একজন মেধাবী গিটারিস্ট। ওনার প্রস্থানটা অনেক আগেই হয়ে গেল। আর কিছুদিন থাকলে আরও অনেক কিছুই দিতে পারতেন তিনি। সবাই দোয়া করবেন আমাদের পথিকৃৎ, এ শিক্ষকের জন্যে। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে যাতে ওপারে ভালো থাকেন। এর আগে বাদ আসর চট্টগ্রামের বায়তুল ফালাহ মসজিদের ময়দানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আইয়ুব বাচ্চুর চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই তাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় এনায়েত বাজারের চৈতন্যগলি বাইশমহল্লা কবরস্থানে। সেখানে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ আবু তালেব মো. আলাউদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন আইয়ুব বাচ্চুর বাবা মোহাম্মদ ইছহাক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান, পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, নগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। এর আগে বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আইয়ুব বাচ্চুর কফিন রাখা হয় তার নানার বাড়ি নগরের পূর্ব মাদারবাড়ি বালুর মাঠে। এরপর বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত তার কফিন সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। সেখানে বাদ আসর জানাজা হয়। জানাজায় হাজারও মানুষ অংশ নেয়। জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দান পরিণত হয় জনসমুদ্রে। মাঠ ছাড়িয়ে পাশের সড়কেও সাধারণ মানুষ অবস্থান নেয়। আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদে জড়ো হন নারী ও শিশুরা। এদিকে জানাজার আগে প্রিয় শিল্পীকে একনজর দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে ভিড় করে হাজার হাজার মানুষ। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে হাতে ফুলসহ নানা প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা যায়। অনেকে প্রিয় শিল্পীর নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গত (১৮ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার সকালে না ফেরার দেশে চলে যান আইয়ুব বাচ্চু। শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরদেহ নেয়া হয় তার গানের স্টুডিও মগবাজারে এবি কিচেনে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর মরদেহ নেয়া হয় চ্যানেল আই কার্যালয়ে। সেখানে তৃতীয় জানাজা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহ রাখা হয় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। এমএ/ ০৭:২২/ ২০ অক্টোবর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2R4xWdU
October 21, 2018 at 01:35AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন