মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বিশ্বনাথ উপজেলাকে বাল্যবিয়েমুক্ত উপজেলা ঘোষণার পরও যেন বাল্যবিয়ের হিড়িক পড়েছে। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি বাল্যবিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে উপজেলা প্রশাসন বাল্যবিয়েগুলো ভঙ্গ করে দেয়। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সংবাদকর্মীদের তথ্যমতে উপজেলা প্রশাসন ও রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদ একটি বাল্যবিয়ে ভঙ্গ করে। এরআগে আরও কয়েটটি বাল্যবিয়ে উপজেলা প্রশাসন ভঙ্গ করে দেয়। এলাকায় যেন বাল্যবিয়ে হিড়িক পড়েছে। তবে এলাকায় বেশিরভাগ বাল্যবিয়ে ভূয়া সনদে আয়োজন করা হচ্ছে। আর এসব জন্মনিন্ধন সনদ সিলেট সিটি কর্পোরেশন আনা হয়। ফলে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা পড়তে হয়ে চরম বিপাকে। এলাকায় বাল্যবিয়ে বন্ধ করার জন্য প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকসহ এলাকার সুশীল সমাজের মানুষ সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। যার ফলে বাল্যবিয়ে ভঙ্গ করার সম্ভব হচ্ছে।
এদিকে, গত ২০১৬ সালে আগষ্ট মাসে বিশ্বনাথ উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হয়। উপজেলাকে বাল্যবিয়ে ঘোষণার পরও বাল্যবিয়ের আয়োজন নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। টনক নড়ে প্রশাসনের। ফলে বাল্যবিবাহ ভঙ্গ করতে বাধ্য হন অনেক বর-কনের পরিবার।
অপরদিকে, সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃংঙ্খলা কমিটির সভায় বাল্যবিয়ে নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা হয়। এসময় ইউএনও গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি বাল্যবিয়ে ভঙ্গ করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এলাকায় যাতে বাল্যবিয়ে না হয়, সেজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এলাকায় বাল্যবিয়ে সর্ম্পক আরও প্রচার-প্রচারনা চালাতে হবে।
জানাগেছে, সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার বেলা আড়াইটায় উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের নকিখালীস্থ শাহ উসমান কমিউনিটি সেন্টারে বিশ্বনাথ উপজেলার উজাইজুরী গ্রামের মৃত আবদুল মুতলিবের মেয়ে আমিনা বেগম (১৯)’র সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নতুন পারকুল গ্রামের ছমরু মিয়ার ছেলে কাওছার আহমদ (১৯)’র বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বর ও কনের পরিবারের পক্ষ হতে নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনদের আমন্ত্রণও জানানো হয়। কনের পরিবার দরিদ্র হলেও তারা তাদের সাধ্যানুযায়ী কমিউনিটি সেন্টারে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য তৈরি করেন খাবার। গতকাল শুক্রবার বেলা ২টায় বর যাত্রীর বহর নিয়ে সেন্টারে উপস্থিত হন বর। বিয়ে পড়াতে কাজীও সেন্টারে উপস্থিত হন। কিন্তু বিয়ের জন্য কনের উপযুক্ত বয়স হলেও বরের বর্তমান বয়স ১৯ বছর। সরকারের আইন অনুযায়ী বরের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে। তাই এই বাল্য বিয়ে পড়াতে অপারগতা প্রকাশ করেন কাজী। বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সেন্টারে উপস্থিত হন। এসময় বিশ্বনাথ থানার এস.আই স্বাধীন চন্দ্র তালুকদার, স্থানীয় ইউপি সদস্য ইছাক আহমদ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মিনা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তারা বর ও কনের জন্মনিবন্ধন সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বিয়ে ভঙ্গ করার নির্দেশ প্রদান করেন ইউপি চেয়ারম্যান। ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গেই ‘বর ও কনে’ পক্ষের অভিভাবকরা বিয়ে ভঙ্গের সম্মতি প্রদান করেন। এসময় বরের বয়স ২১ বৎসর না হওয়া পর্যন্ত এই বিয়ে হবে না মর্মে বর পক্ষ লিখিত অঙ্গিকারনামা প্রদান করেন। এরপর কনে ছাড়াই বরযাত্রীসহ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি ফিরলেন বর।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক বলেন, এলাকায় সচেতনার অভাবে বাল্যবিয়ের আয়োজন করা হয়। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় বাল্যবিয়ে সর্ম্পকে প্রচারনা করতে হবে। যারা বাল্যবিয়ে দেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তিনি আহবান জানান।
বিশ্বনাথকে বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা ঘোষনার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, উপজেলায় কোনো অবস্থাতে বাল্যবিয়ে হতে দেয়া হবেনা বলে তিনি জানান।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2yR5zIp
October 21, 2018 at 01:11PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন