কলকাতা, ২১ অক্টোবর- এক জনের ক্ষেত্রে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর মূলে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন সহকর্মীরা। আর এক জনের আত্মহত্যার পিছনে কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। দুক্ষেত্রেই সহকর্মীরা কাজের ভয়ঙ্কর চাপ এবং স্বল্প বেতনের অভিযোগ তুলেছিলেন। চলতি বছরে শহরে দুটি বেসরকারি হাসপাতালে দুজন নার্সের অকালমৃত্যুতে অবশেষে নড়েচড়ে বসল রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে কর্মরত নার্সদের বেতন এবং কাজের পরিবেশ খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়ল স্বাস্থ্যভবন। মূল কমিটি হয়েছে রাজ্য-স্তরে। যার মাথায় রাখা হয়েছে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট) রঞ্জন মজুমদারকে। তিন সদস্যের বাকি দুজন হলেন নার্সিং সার্ভিসের ডিএডিএইচএস ঝর্ণা দাস এবং এনআরএস হাসপাতালের নার্সিং সুপার মনীষা ঘোষ। এ ছাড়া প্রতি জেলায় একই উদ্দেশ্যে কমিটি গড়তে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। প্রসঙ্গত, গত বছর মার্চে রাজ্য সরকার ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট নিয়ে যে নতুন আইন চালু করেছে তাতে বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমের এ-টু-জেড, সব কিছুতেই নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরকে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশেই বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমের নার্সদের বেতন ও কাজের সময় এবং পরিবেশ নিয়ে গুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালের নার্সদের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালের নার্সদের বেতনের পরিমাণ খুবই কম বলে দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ করে আসছে নার্সদের বিভিন্ন সংগঠন। বছর দুয়েক আগে একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, বেসরকারি হাসপাতালের নার্সদের ন্যূনতম বেতন হতে হবে ২০ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ আদালত যখন এই রায় দেয় তখন দেশে সরকারি হাসপাতালগুলিতে নার্সদের গড় সর্বনিম্ন বেতন ছিল অবশ্য আরও বেশি, ২৬ হাজার টাকা। দুবছর কেটে গেলেও বহু বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোম সর্বোচ্চ আদালতের রায় পর্যন্ত কার্যকর করেনি। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর এড়ায়নি। গত বছর টাউন হলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে একটি হাসপাতালের সিইও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুযোগ করেন, তাঁদের হাসপাতাল থেকে এক সঙ্গে বেশ কয়েক জন নার্স সরকারি হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। ফলে তাঁদের হাসপাতালে পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী যেন বিষয়টি দেখেন। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী ওই হাসপাতাল কর্তাকে বলেন, আপনারা উপযুক্ত বেতন দেন না। সরকার দেয়। তাই নার্সরা বেসরকারি সংস্থা ছেড়ে সরকারি সংস্থায় যোগ দিচ্ছেন। এই ব্যাপারে সরকার কী করতে পারে? বিগত কয়েক বছরে এ রাজ্যে নার্সিং নিয়ে পঠনপাঠনের সুযোগ যেমন বেড়েছে, তেমনই সরকারি হাসপাতালে চাকরিও মিলছে তুলনামূলক বেশি। জেলায় জেলায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার ফলেও নার্সের প্রয়োজন বেড়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে চাকরির সুযোগ-বৃদ্ধি পেলেও কাজের বোঝার তুলনায় বেতন খুবই কম। দুই বেসরকারি হাসপাতালে দুজন নার্সিং ছাত্রীর মৃত্যুতে প্রকাশ্যে ভিন্ন কারণ দেখানো হলেও দুক্ষেত্রেই কাজের চাপের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। সল্টলেকের হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় নার্সিং ছাত্রীর মৃত্যুতে সুচিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি সহকর্মীদের বক্তব্য ছিল, অসুস্থতার কথা বলা সত্ত্বেও ওই ছাত্রীকে ছুটি দেওয়া হয়নি। বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষায় অসফল ছাত্রীর প্রতি অভিভাবকের সামনে মানহানিকর মন্তব্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। অসম্মান সইতে না পেরেই ওই ছাত্রী আত্মতহ্যার পথ বেছে নেন বলে পরিবারের অভিযোগ। সহপাঠী ও সহকর্মীদের আরও অভিযোগ ছিল, কাজের চাপেই তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী ঠিকমতো পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেননি। তথ্যসূত্র: এসময় একে/০৬:২৮/২১ অক্টোবর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2Ez6Fij
October 22, 2018 at 12:26AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top