মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ ( সিলেট) থেকে :: তাহসিনা রুশদীর লুনা। যার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি নিখোঁজ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক, সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর সুযোগ্য সহধর্মিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের সাবেক এজি এস, স্বামী ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর বাংলাদেশ রাজনীতিতে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন তিনি। তাহসিনা রুশদীর লুনা সিলেটের বিশ্বনাথের গৃহবধূ। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের প্রায় সাড়ে ৬ বছর পূর্ণ হয়েছে ইতিমধ্যে। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ প্রসঙ্গে ও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গত বুধবার দুপুরে সিলেটের বিশ্বনাথের রামধানা গ্রামে ইলিয়াস আলীর বাড়িতে বিশ্বনাথের পাঠক জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল গ্লোবালনিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারের মিলিত হন সিলেট-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা।
ইলিয়াস আলী নিখোঁজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, আজ দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৬ বছর ধরে স্বামী ইলিয়াস নিখোঁজ। কিন্তু আজো তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অনেক বার প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো সাড়াও পাইনি। এরআগে ২০১২ সালের ২ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলাম। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করার আশ্বাস দেন। কিন্তু এখনও ইলিয়াস আলীকে ফিরে না পেয়ে হতাশায় ভুগছি।
ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর দায়েরকৃত জিডি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লুনা গ্লোবালনিউজ ২৪ ডটকম কে বলেন, হাইর্কোটে একটি রিট হয়েছিল। রিটের প্রেক্ষিতে আদালত প্রতিমাসে পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলেন। কিন্তু কয়েক মাস প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও পরে আর কোনো প্রতিবেদন দাখিল কিংবা পুলিশ আমাদের পরিবারের কারো সঙ্গে এবারের কোনো যোগাযোগ করেনি।
ইলিয়াস আলীকে কি আর ফিরে পাওয়া সম্ভব জানতে চাইলে লুনা বলেন, সরকার আন্তরিক হলে ইলিয়াসকে খোঁজে পাওয়া সম্ভব। কেননা গুম-নিখোঁজ হওয়ায় অনেক ব্যক্তি তাদের পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। আমরাও বিশ্বাস করি ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন! আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইলিয়াসের অপেক্ষায় থাকব।
স্বামীর কথা বলতে গিয়ে বার বার আবেগ আল্পুত হয়ে পড়েন লুনা। তার একটাই দাবি যে কোনো কিছুর বিনিময়ে স্বামীকে ফেরত চাই। তিনি এখনও মনে করেন তার স্বামী বেঁচে আছেন, পরিবারের মাঝে আবার ফিরে আসবে? এখন তিনি শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে ইলিয়াস ফিরে আসার পথে চেয়ে রয়েছেন।
লুনার কাছে প্রশ্ন ছিল ইলিয়াস আলীর সঙ্গে সর্বশেষ কি কথা হয়েছিল, উত্তরে তিনি বলেন, নিখোঁজের দিন আমার ছেলেকে তিনি (ইলিয়াস) ডাক্তার নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার দেখিয়ে বাসার ফেরার পর ছেলের চিকিৎসা সর্ম্পকে শেষ কথা হয়েছিল তার (ইলিয়াস আলীর) সঙ্গে।
ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর স্বামী বাড়ি বিশ্বনাথের রামধানায় কম আসার কারনে জানতে চাইলে লুনা বলেন, সংসারে কাজ ও সন্তানের লেখা-পড়ার কারণে স্বামীর বাড়ি রামধানায় আসা হত কম। ইলিয়াস আলীর নিজ এলাকায় বিএনপি অধিক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। ইলিয়াস আলীর ভালবাসার কারণে এলাকার অসংখ্য নেতাকর্মী নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। মাঝে মাঝে তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে বিশ্বনাথে স্বামীর বাড়িতে আসা হয়।
ইলিয়াস নিখোঁজ আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাহসিনা রুশদীর লুনা গ্লোবালনিউজ ২৪ ডটকম কে বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর সারা দেশের ন্যায় তাঁর জন্মস্থান সিলেটের বিশ্বনাথবাসী ইলিয়াস সন্ধান দাবি দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ রাস্তা নেমে আসে। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল সিলেটের বিশ্বনাথে ইলিয়াস সন্ধান আন্দোলন করতে গিয়ে তিনজন প্রাণ দিয়েছে। অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দেয়া হয়েছে। কারাববণ করেছেন কয়েকশত নেতা। সেইদিন দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন ইলিয়াসকে বিশ্বনাথবাসী কত ভালবাসেন। যা গোটা বাংলাদেশে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। হত্যা-হামলা-মামলা অনেক নির্যাতন করেও ইলিয়াস নিখোঁজ আন্দোলন দমন করা সম্ভব হয়নি। সিলেটে এখন তাঁর সন্ধান আন্দোলন অব্যাহত রয়েছেন বলে তিনি জানান।
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করার কারণ জানতে চাইলে লুনা সাংবাদিক কে বলেন, সিলেট-২ আসন (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন আমার স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী। তিনি এই জনপদের উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন তা বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর’র মানুষ কোনদিন ভুলবে না। বিশেষ করে বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর যোগাযোগ ব্যবস্থার যে উন্নয়ন সাধন তিনি করেছিলেন-আজ পর্যন্ত কেউ তার ধারে কাছে যেতে পারেননি। তিনি আজোও নিখোঁজ। তাকে সরকার গুম করে ফেলেছে। আমাদের বয়োবৃদ্ধ নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার জেলে রেখেছে। আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা। হাজার হাজার কর্মী কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমি নির্বাচনে অংশগ্রহন করার মূললক্ষ এই এলাকার মানুষ কে অভয় দেয়া। তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদেরকে উজ্জীবিত করা এবং তাদের প্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীকে আবার তাদের মাঝে ফিরিয়ে আনা। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। এরজন্য আমি ও আমার দল এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা এই নির্বাচনটাকে আন্দোলন হিসেবে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন যদি কিছুটাও সুষ্ঠ হয় তবে আমাদের বিজয়কে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। কারণ বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর ইলিয়াস আলী ছিলেন পরীক্ষিত নেতা। তার উন্নয়নের সুফল এখনো মানুষ ভোগ করছে। মানুষ বিশ্বাস করে, আমি নির্বাচিত হলে আমার স্বামীর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করব। বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর কে উন্নয়নের দিক দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবো কয়েক ধাপ। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে ভুল করবে না। নির্বাচনের বর্তমানে যে পরিবেশ, তা আমাদের জন্য কঠিন লড়াই। এরপরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য আমরা নির্বাচন করছি। ভোটাররা যাতে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য ভোটারদের কেন্দ্রে আসা নিশ্চিত করতে হবে নেতাকর্মীদের। যদিও এই নির্বাচনে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকার কথা ছিল, এখন সেটা নেই।
সুষ্ঠ নির্বাচন হলে আপনে যদি হেরে যান এ নির্বাচন মেনে নিবেন কি এমন প্রশ্নের উত্তরে লুনা বলেন, নির্বাচন ৫০ ভাগ সুষ্ঠ হলে হেরে যাওয়ার কথা নয়। কারণে এ আসন বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর উপজেলাবাসী ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রিয় নেতার গুমের জবাব দিয়েছিলেন। যার ফলে ওই দুই উপজেলায় বিএনপির চেয়ারম্যান-ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে এলাকার জনগন তাদের প্রিয় মানুষ ইলিয়াস আলী নিখোঁজের জবাব দিবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তারপরও হার-জিত থাকবেই।
নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্ধি প্রার্থীকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে লুনা সাংবাদিক কে বলেন, নির্বাচনে যারা অংশগ্রহন করে, তাদের কোনো ভাবে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। প্রতিদ্ধন্ধি প্রার্থী যেই হোক, তার সঙ্গে ভোটের মাধ্যমে আমাদের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৪ সালের ৫জানুয়ারী ভোটার বিহীন নির্বাচন হয়েছিল। যার ফলে অনেক আসনে বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এবার বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট তাদের সে সুযোগ দেয়নি। একাদশ নির্বাচনের সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ভোট বিপ্লব ঘটবে।
বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তাহসিনা রুশদীর লুনা সাংবাদিক কে বলেন, দেশে রাম-রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বিচার ব্যবস্থা ও দলীয়করণ করা হয়েছে। জুলুমের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। মানুষের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নেই। খুন-গুম-সন্ত্রাস মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। উন্নয়নের নামে দেশে চলছে হরিলুঠ। গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা আজ রুদ্ধ এ অবস্থা চলতে দেয়া যায়না। এর একটা পরিবর্তন দরকার।
তাঁর নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরে বিএনপির বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে প্রশ্নে করলে লুনা বলেন, বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরে প্রতিটি ঘরে ঘরে ইলিয়াস আলী তার সৈনিক তৈরি করে রেখে গেছেন। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিএনপির আর্দশে লালিত হওয়ার ট্রেনিং দিয়ে গেছেন। বর্তমানে বিএনপি আরও সুসংগঠিত হয়েছে। তার প্রমাণ বিশ্বনাথবাসী ইলিয়াস আলী গুমের পর দেখিয়েছেন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর বিশ্বনাথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সেই আন্দোলনে আমাদের তিন ভাই প্রাণ দিয়েছিল। বাংলাদেশে ইতিহাসে এটা বিরল! সে কারণে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বনাথ উপজেলাকে অন্য ভাবে দেখে,অন্যভাবে মূল্যয়ান করে। কারণ এটা ইলিয়াস আলীর এলাকা।
স্থানীয় বিএনপির কোন্দল সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি লুনা সাংবাদিক কে বলেন, সিলেট-২ আসনে বিএনপির দলীয় কোন্দল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ কিছু কোন্দল থাকে। আর এই কোন্দল দলীয় ভাবেই মিমাংসা করা হয়। আমার নির্বাচনী এলাকায় ছোটখাটো দু-একটি কোন্দল আছে তা দলীয় কোন্দল নয়, এটা ব্যক্তিবিশেষের। সময় মতো তা মিমাংসা হয়ে যাবে। ব্যক্তিবিশেষের কোন্দল নির্বাচন কিংবা দলের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
সর্বশেষ বিএনপির থেকে মনোনীত প্রার্থী ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার ভোটাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সময় ঘরে বসে থাকবেন না। চোখ কান খোলা রেখে কাজ করবেন। ইনশাআল্লাহ ভোটে জিতে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে। মুক্ত হবে সবার প্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মুক্ত হবে বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মী। মুক্ত হবে গণতন্ত্র। পরিশেষে তিনি নিখোঁজ স্বামী ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসার আলীকে ফিরে পাওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2Rp7iNn
November 30, 2018 at 07:45PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন