ঢাকা, ০৮ নভেম্বর- বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া পর প্রায় আঠারটি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সময়টা নেহায়েত কম নয়। টেস্টের ধীর-স্থির মেজাজ ও মানসিকতার সাথে মানিয়ে নেয়ার মত সময় আমরা পেয়েছি। পরিণত ক্রিকেট উপহার দেয়ার মত কোচিং স্টাফ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও কম নয়। হয়তো ঘরোয়া ক্রিকেটের মান উন্নয়নের সুযোগ আছে। তবে সবমিলিয়ে যে ফলাফলটা সাদা পোশাকে আসছে তা এককথায় হতাশাজনক। সর্বশেষ তিনটি সিরিজে প্রতিপক্ষের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। এর আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটাই কেবল ১-১ এ ড্র করতে পেরেছিল টাইগাররা। বিদেশের মাটিতে অবস্থা আরে ভয়াবহ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে তো মাত্র ৪৩ রানে অল আউট হয়ে এক লজ্জার রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। কোচ হিসেবে সেটাই ছিল স্টিভ রোডসের প্রথম এসাইনমেন্ট। সবচেয়ে দৃষ্টিকটূ বিষয়টা হল ব্যাটিং ধস। বোলাররা অনেকে ক্ষেত্রেই প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট তুলে নিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজটা করতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। উইলো হাতে তাদের আসা-যাওয়ার দৃশ্যটা এতোটাই নিয়মিত ছিল যে, এ নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে দেশে-বিদেশে। অনেকে তো বাংলাদেশের টেস্ট খেলার সামর্থ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। কদিন আগেই বীরেন্দর শেবাগ ইএসপিএন ক্রিকইনফোর পাতায় লিখেছেন, বাংলাদেশ এখনও অর্ডিনারি দল। তারা যেসব ম্যাচ জেতে সেখানে টস, পিচ কন্ডিশন এসবের ভূমিকা থাকে। এমন কথা শোনার পর আপনার রেগে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঠের খেলায় টাইগারদের যে অবস্থা তাতে তো কিছু বলারও থাকছেনা আমাদের। হ্যাঁ ওয়ানডেতে আমাদের সামর্থ প্রশ্নাতীত। সেটা সবাই স্বীকার করে। কিন্তু টেস্টে আমরা এখনও ম্যাচিউরিটি ও ধারাবাহিকতার প্রমাণ দিতে পারিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিলেট টেস্টে শোচনীয় হারের পর নতুন করে ভাবতে হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে। ১৫১ রানের হারটা যেমন পোড়াচ্ছে; তেমনি চোখে বিঁধছে দুই ইনিংসের একটিতেও দুইশ রান না করতে পারার আক্ষেপ। এরকম ছন্নছাড়া ব্যাটিং দিয়ে জিম্বাবুয়ের মত দুর্বল প্রতিপক্ষের গায়েও আজকাল আর আঁচড় কাটা যায়না। স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে আমাদের ব্যাটিং লাইনআপের সামর্থ নিয়ে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এমন ব্যাটিং মেনে নেয়া যায়না কোনোভাবেই। কিন্তু ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরোতে হলে কী করবে বাংলাদেশ? এখন সেটাই মূল চিন্তার বিষয়। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও দিচ্ছেন অনেক পরামর্শ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসের মতে, এই দলের টেস্ট মেজাজ ছিল না। এভাবে টেস্ট খেলে জেতা সম্ভব নয়। কাউকে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ব্যাট করতে দেখা যায়নি। এমন হার মেনে নেয়া কঠিন। তবে সমস্যার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়ার পক্ষপাতী নন তিনি। এজন্যই আশাবাদী হচ্ছেন পরবর্তী টেস্ট নিয়ে, আশা করছি ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু তার জন্য অবশ্যই বাংলাদেশকে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। জিম্বাবুয়েকে সহজে হারানো যাবে এমন আশা করে জয় পাওয়া সম্ভব নয়। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করার পর থেকেই কিছুটা আত্মপ্রসাদে ভুগছিল বাংলাদেশ। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ফলে টেস্টে বেশ হালকাভাবে নেয়া হয়েছে জিম্বাবুয়েকে। ফলাফলটা ভালো হয়নি সঙ্গত কারণেই। এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ রকিবুল হাসান জানালেন প্রতিপক্ষকে সিরিয়াসলি না নেয়ার কথা। তিনি বললেন, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের কোনো পরাশক্তি নয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনি কাউকে অবহেলা করতে পারেননা। প্রতিপক্ষ যেই হোক আপনাকে খেলতে পবে সিরিয়াসলি। সেদিক থেকে আমরা কিছুটা সন্তুষ্টিতে ভুগেছি। দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়েও সোচ্চার রকিবুল। তবে এটাই শেষ কথা নয় বলে মনে করছেন তিনি। বললেন, দেখুন আমরা টেস্টের মানসিকতার সাথে এখনও খাপ খাওয়াতে পারছিনা এটা সত্য। তাই বলে ছেলেরা একদম খারাপ করছে তা আমি বলবনা। ক্রিকেটে খারাপ ফলাফল আসতেই পারে। তাতে হতাশ হওয়া যাবেনা। এদের মাঝে ট্যালেন্ট আছে। আমি মনে করি, কোচিং স্টাফও ভুলগুলো নিয়ে কাজ করছেন। তবে সর্বোপরি আমাদের টেস্টসূলভ ব্যাটিংটা আয়ত্ত্ব করতে হবে। এখানে ধীর-স্থির মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে। ভালো বল ছাড়তে হবে এবং শট সিলেকশানে সাবধান হতে হবে। দ্রুত রান করার চেয়ে উইকেটে টিকে থাকার দিকে নজর দিতে হবে বেশি। রকিবুলের কথার সাথে মিল পাওয়া যায় অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর বক্তব্যের। শোচনীয় ব্যাটিংয়ের পর তিনি নিজের ব্যাখা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, এমন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দেয়া আসলে খুবই কঠিন। একটা জিনিস বলতে পারি, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যেই ধরণের ডিসিপ্লিন থাকা উচিত, আমার মনে হয় না আমরা সেই ডিসিপ্লিন দেখাতে পেরেছি। কারণ উইকেট বেশ ভালো ছিল। হয়তো আজকেও দুই একটি বল টার্ন করেছে। এছাড়া আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। ডিসিপ্লিনের ইস্যুটা আমাদের আরেকটু ভালো করে দেখতে হবে। নিজেদের ওপর বিশ্বাসটা আরেকটু বাড়াতে হবে। এসব নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। কারণ বেশ কয়েকটি টেস্ট আমাদের ব্যাটিং খুব বাজে হচ্ছে। একটা উপায় বের করতে হবে। এ বিষয়ে কোচ স্টিভ রোডস বেশ বস্তুনিষ্ঠ। তিনি তার পর্যালোচনায় মনে করছেন সিলেটে প্রথম ইনিংসেই হয়েছে বেশি। সেটাই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলেছে। নিজের প্রতিক্রিয়ায় রোডস বলেন, আমরা টস হেরে ফিল্ডিংয়ে গেলাম, তারপর তাদের ২৮২ রানে গুটিয়ে দিলাম। এরপর প্রথম ইনিংসে আমাদের ৩৫০ বা ৪০০ রান করা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা হলো না। এই কারণে সবসময়ের মতো শেষে ব্যাটিং করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ল। কোচের কথার সাথে একমত হলেও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট মনে করছেন, সমস্যাটাকে আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, টেস্ট কিন্তু হঠাৎ করে ভালো খেলার জিনিস নয়। এজন্য ঘরোয়া ক্রিকেটের পাইপলাইন উন্নত করতে হবে। ডমেস্টিক ক্রিকেটের মান উন্নয়ন না হলে টেস্টে ভালো খেলার মানসিকতা তৈরী হবেনা। তবে তিনিও এমকত যে, বাংলাদেশ অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে। আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেখুন এই দলটা কিন্তু অনেক ভালো। এদের সামর্থ আছে ভালো কিছু করার। আমি মনে করি জিম্বাবুয়েকে পরের টেস্টেই তারা বুঝিয়ে দেবে নিজেদের শক্তিমত্তা। ক্লাস ও টেম্পারমেন্ট নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার পাশাপাশি নিয়মিত টেস্ট খেলাটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।পর্যালোচনায় সত্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু সেটা ধরে সংশোধন করা ও ভালো করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারাই হল আসল বিষয়। বিশেষজ্ঞদের এসব বিষয় আমলে নিলে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটেও নিজেদের সামর্থের প্রমাণ দিতে পারবে অচিরেই। তথ্যসূত্র: বিডি২৪লাইভ আরএস/ ০৮ নভেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2qyuOLY
November 08, 2018 at 10:31PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top