সিলেট, ০৭ নভেম্বর- সিলেট থেকে ভারতের সীমান্ত মাত্র ঘণ্টাখানেকের দূরত্ব। জিম্বাবুয়ের কোচ লালচাঁদ রাজপুতের নিজের শহর মুম্বাই তামাবিল-ডাউকি সীমান্ত থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে। রাত পোহালেই ভারতে দীপাবলির উৎসব, জ্বলবে অজস্র দীপশিখা। তবে বাড়ি থেকে দূরে থাকা কোচকে এক দিন আগেই যেন দীপাবলির উপহার দিলেন শিষ্যরা। জিম্বাবুয়ের কোচ হিসেবে এটাই যে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর প্রথম জয়। শুধু কি তাই? ২০০১ সালে বাংলাদেশকে চট্টগ্রামে হারানোর ১৮ বছর পর কাল দেশের বাইরে প্রথম জিতল জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিকদের উৎসব মাটি করে দিয়ে জিম্বাবুয়ের উৎসব তাই বাঁধনহারা। ছবি তোলা, গান ছেড়ে নাচা, একসঙ্গে হৈ-হল্লা করাসবই তো হয়েছে জিম্বাবুয়ের ড্রেসিংরুমে। দলের মুসলিম ধর্মাবলম্বী একমাত্র সদস্য সিকান্দার রাজা সন্ধ্যায় গেছেন শাহজালাল (রহ.) মাজারে। কোচ রাজপুত নিশ্চিত, এই জয়ের রেণু পৌঁছে গেছে হারারে-বুলাওয়েতেও, আমি নিশ্চিত, জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বোর্ড, সাধারণ মানুষ, পুরো দেশই এ জয়ে গর্বিত। দুটো দলের মানসিকতাই গড়ে দিয়েছে পার্থক্য, এমনটাই মনে করেন ২০০৭ সালে ভারতের প্রথম বিশ্ব টি-টোয়েন্টি শিরোপা জয়ের সময় ম্যানেজার থাকা এই সাবেক ক্রিকেটার, মানসিকতায় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে দুটো দলের। প্রথম দুই দিনে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যাট করেছে, তারা দেখিয়েছে তাদের মানসিক দৃঢ়তা। প্রথম দিন থেকেই উইকেটে বল ঘুরছিল। ব্যাটসম্যানরা খানিকটা দুশ্চিন্তায় ছিল। আমি তাদের বলেছিলাম নিজের রক্ষণে ভরসা রাখতে আর ধৈর্য ও মানসিক দৃঢ়তা ধরে রাখতে। আমাদের ক্রিকেটাররা সেটা দেখিয়েছে। ওয়ানডে সিরিজে ৩-০-তে হারের পর জয়ের ক্ষুধাটাই জিততে মরিয়া করেছে জিম্বাবুয়েকে, আমরা জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত ছিলাম, আমরা খুব করে জিততে চেয়েছিলাম। কারণ আমরা আগের ম্যাচগুলো হেরেছিলাম। সাফল্যের ক্ষুধা থাকলে সাফল্য আসবেই। মাভুতা ওয়ানডেতে ভালো করেনি, তবে টেস্টে সে ম্যাচ জেতাতে পারবে সেই বিশ্বাস আমার ছিল। টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে ধৈর্যের খেলা। অনেক সংকটপূর্ণ মুহৃর্ত আসবে, সেই সময় কঠিন সময় পার করতে হবে। ওরা কঠিন সময়টা বেশ ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। ওয়ানডে সিরিজে ভালো ফর্মে ছিলেন শন উইলিয়ামস। চট্টগ্রামে শেষ ওয়ানডেতে শতরানের পর সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে তাঁর ধৈর্যশীল ৮৮ রানের ইনিংসটাই প্রথম ইনিংসে ভালো একটা সংগ্রহে পৌঁছে দিয়েছিল। কোচ রাজপুত পঞ্চমুখ তাঁর প্রশংসায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ থেকেই সে ভালো ব্যাটিং করছে। সে-ই আমাদের প্রধান খেলোয়াড়, সে-ই সবচেয়ে ভালো ফর্মে আছে আর বিপদে তার ব্যাটটাই চওড়া হচ্ছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ মাত্র একজন পেসার নিয়ে টেস্ট একাদশ সাজানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে গেলেও রাজপুত তাঁর দলের মাধ্যমে দেখিয়েছেন এখানে মাঝারি পেসেও ঠিক জায়গায় বল করলে উইকেট পাওয়া সম্ভব। সেটাই বলেছেন তিনি, গতকাল (পরশু) আমাদের ১০টা উইকেট বাংলাদেশের স্পিনাররা নিলেও আমরা দেখিয়েছি এখানে মিডিয়াম পেস বোলিংয়েও উইকেট পাওয়া যায়। প্রথম ইনিংসে ওরা (কাইল জারভিস ও টেন্ডাই চাতারা) দুজন মিলে ৫ উইকেট নিয়েছে। এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজে লেগেছে রাজপুতের সব পরিকল্পনাই, মাঠে সেসব কার্যকর করেছেন ক্রিকেটাররা। কাল সকালে মাঠে আসার আগেই অনেকটা বুঝে গিয়েছিলেন, ৩২১ রানের পাহাড় ডিঙানো কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু অসাবধানতায় যেন অঘটন না ঘটে, সে জন্য শিষ্যদের বলেছিলেন, টেস্টের শেষ দিন আর দীপাবলি উৎসবের দিনটা পড়েছে একই তারিখে। তোমরা দীপাবলি উৎসবে আমাকে এই টেস্ট জয়টা উপহার দাও। এমইউ/১১:৪০/০৭ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2FkMtRN
November 07, 2018 at 05:41PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন