ঢাকা, ২৯ নভেম্বর- ঠিক এক মাস পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অঘ্রানের মাঝামাঝি শীতের আগমনের ঠিক আগে এখন সারা দেশে বইছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। ডঙ্কা বেজে গেছে আগেই, এখন চারদিকে নির্বাচনী আমেজ। অফিস-আদালত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তা-ঘাট, রেস্তোরাঁ এমনকি বাড়ির ড্রয়িং রুমেও যত আলোচনা-পর্যালোচনা, গুঞ্জন- সবই নির্বাচন নিয়ে। মোটকথা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখন টক অব দ্য কান্ট্রি, থাকবে আগামী একমাস পুরোটা। এমন নির্বাচনী আমেজের মধ্যে আগামীকাল ৩০ নভেম্বর, শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলায় শুরু বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। ক্রিকেট এখন বাঙ্গালির ভাললাগা। ভালবাসা ও আশা ভরসা। তাই কোন ক্রিকেট সিরিজ বা ম্যাচ মানেই দেশের একটা বড় অংশের ক্রিকেট উৎসব আনন্দে মেতে ওঠা। কিন্তু এবার নির্বাচনের ডামাডোলে সে উৎসাহ-উদ্দীপনায় কিছুটা হলেও ভাটা। তারপরও একটি বিশেষ কারণে ঢাকা টেস্টের প্রতি উৎসাহ-আগ্রহ আছে অনেকেরই। কারণ চট্টগ্রামে ৬৪ রানে প্রথম টেস্টে জয়ের কারণে সাকিব বাহিনীর সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তুলোধুনো করার হাতছানি। ইতিহাস জানাচ্ছে, গত ১৮ বছরে ৫৭টি টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের সিরিজ পরাজয় আর তুলোধুনো হবার রেকর্ডই বেশি। আর প্রতিপক্ষকে হোয়াইট বা বাংলাওয়াশের রেকর্ড একদমই হাতে গোনা; মোটে দুটি। যার একটি এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেই। ২০০৯ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ তে জিতেছিল টাইগাররা। আর অন্যটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০১৪ সালে দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ানদেরকে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাওয়াশ করে ছেড়েছিল মুশফিকুর রহীমের দল। শেরে বাংলায় এ ম্যাচ জিতলেই তৃতীয়বারের মত কোনো টেস্ট খেলুড়ে দলকে তুলোধুনো করার কৃতিত্ব অর্জিত হবে। কাজেই ঢাকা টেস্টে ক্যারিবীয়দের হোয়ইটওয়াশ করার হাতছানি টাইগারদের সামনে। সাকিবের নেতৃত্বে কি তা পারবে বাংলাদেশ? চট্টগ্রামের মত ঢাকাতেও টাইগারদের বিষাক্ত স্পিন ছোবলে ধরাশায়ী হবে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের দল? জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই প্রমাণ হয়েছে- সাকিব, তাইজুল, মিরাজ ও নাঈম- এই চতুষ্টয়ের গড়া স্পিন ভেলকিতে ক্যারিবীয় বধ সম্ভব। আর তাই শেরে বাংলায়ও স্পিন ফ্রেন্ডলি টার্নিং উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকরা। খালি চোখে এ টেস্ট তাই ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয়বার হোয়াইটওয়াশের মিশন। কিন্তু এর বাইরেও এ টেস্টের আরও একটা অন্য রকম বৈশিষ্ট আছে। একটা ভিন্ন হিসেব নিকেশও আছে। এ ম্যাচ জিতলে সমালোচকদের মুখও বন্ধ করা যাবে। অনেক সমালোচকরা বলেন, ২০০৯ সালের জুলাইতে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বাংলাদেশ যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে তুলোধুনো করে রাজ্য জয়ের আনন্দে দেশে ফিরেছিল সেই দলটি ছিল আসলে ক্যারিবীয় এ দল। বোর্ডের সাথে ঝুট-ঝামেলার কারণে ওই সিরিজের বাইরে ছিলেন তখনকার ক্যারিবীয় তারকারা। তাদের বদলে একঝাঁক নতুন ক্রিকেটারে গড়া দল নিয়ে বাংলাদেশের সাথে টেস্ট সিরিজ খেলতে নামে ক্যারিবীয়রা। সেটা অবশ্য মিথ্যাচার নয়। ইতিহাসও এমন সাক্ষীই দিচ্ছে। ফ্লয়েড রেইফারের অধিনায়কত্বে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে কিংসটাউনে যে দলটি খেলতে নেমেছিল- সেই দলে ছিল নতুনের সমারোহ। সাত-সাতজনের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল সেই ম্যাচ এবং সিরিজে। মাশরাফি প্রথম টেস্টেই বোলিং করতে গিয়ে আহত হয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়ায় ভারাপ্রাপ্ত অধিনায়ক হন সাকিব। মাঠে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বেই ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশের কৃতিত্ব দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার আবার ক্যারিবীয়দেরকে টেস্টে বাংলা ওয়াশের হাতছানি, এবারও সাকিবই অধিনায়ক। সাকিব কি ভাবছেন এ নিয়ে? আজ মিডিয়া কনফারেন্সেও উঠলো সে প্রশ্ন। সঙ্গে বলা হলো, নয় বছর আগে ঘরের মাঠের ক্যারিবীয়রা ছিল অতি দূর্বল। কমজোরি। সাকিব উত্তর দেয়ার আগে রসিকতা করলেন। হাসতে হাসতে বললেন, হ্যাঁ, তা ঠিক। তবে তখন কিন্তু টেস্টে আমরাও ভাল দল ছিলাম না। সাকিবের কথা শুনে মনে হলো সে সিরিজের কথা ঠিকই মাথায় আছে তার। কথা-বার্তায় সাকিব জানিয়ে দিলেন, লক্ষ্য আছে এ ম্যাচ জিততে ক্যারিবীয়দের কাজটা সহজ হবে না। তাই কন্ঠে ভাল খেলার তাগিদ। তার ধারনা, ক্যারিবীয়রা সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করবে। তাই এ টেস্ট হবে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। তাইতো টাইগার অধিনায়কের মুখে এমন কথা, সুযোগ আছে, বাট সুযোগটা কাজে লাগাতে অনেক হার্ড ওয়ার্ক করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই উইন্ডিজ দল আরও ভালো করার জন্য এক্সাইটেড থাকবে। ওরা ওদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবে যেন ওরা ভালো করতে পারে, জিততে পারে। আমাদের জিততে হলে ওদের থেকে আরও ভালো পারফর্ম করতে হবে। চট্টগ্রামে যে পারফর্মেন্স করেছি তারচেয়েও ভালো পারফর্ম করতে হবে এখানে জিততে হলে। আমাদের নিজেদের ওপরেও নিজেদের একটা চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জটা আমি বিশ্বাস করি, আমরা ওভারকাম করতে পারবো। তার জন্য আমাদের মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী হতে হবে। ফিজিক্যালিও আমাদের অনেক টাফ হতে হবে। সেই কঠিন কাজটি করে দেখাতে পারলে এবার পুরো শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই বাংলাওয়াশ করা যাবে। তখন আর কেউ ফোড়ন কাটতে পারবে না। বরং বলা হবে, টেস্টে এখন পুরোশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও হোয়াইটওয়াশ করতে পারে টাইগাররা। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ আর/০৬:১৪/২৯ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2Q2tDnm
November 30, 2018 at 05:58AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন