মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: বিশ্বনাথের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) তিনি নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় থেকে মনোময়নপত্র ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। ফলে আবারো আলোচনায় চলে এসেছেন মুহিবুর রহমান।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিষয়টি নিশ্চিত হতে মঙ্গলবার রাতে মুহিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন ‘দলের নেতাকর্মীরা আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তারা (নেতাকর্মী) আমার পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তবে আজ রাতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ঢাকা থেকে আসার পর আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো কি না এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব।’ নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সিলেট-২ আসনে আওয়ামীলীগ তথা মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বলয়ের নেতা মুহিবুর রহমান ৭০ দশকের শেষের দিকে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের আমলে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপর ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সিলেট-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের পূর্বে মুহিবুর রহমান যোগদান করেন আওয়ামী লীগে। ঐ নির্বাচনে (২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন) আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের মধ্যে সৃষ্টি হয় দন্ধ। তখন দুই নেতা পক্ষ অবলম্বন করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এক পর্যায়ে মুহিবুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেলেও শেষ পর্যন্ত শফিকুর রহমান চৌধুরী দলীয় ও মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন শফিক চৌধুরী। তখন দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে মুহিবুর রহমান সংসদ নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান।
এরপর উপজেলা নির্বাচনেও মুহিবুর রহমান প্রার্থী হলে শফিকুর রহমান চৌধুরী দলীয় ভাবে সমর্থন দিয়ে এডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদকে উপজেলা নির্বাচনে দাঁড় করান। এই নির্বাচনে মুহিবুর রহমান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন ভোট পেয়ে ২য় বারের মত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর থেকে দুই জনের মধ্যে (শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহিবুর রহমান) দন্ধ চরম আকার ধারন করে। এই দন্ধের জের ধরেই ২০১০ সালের জানুয়ারীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে মুহিবুর রহমান’সহ তার অনুসারী ১৫জন নেতাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। পরবর্তীতে মুহিবুর রহমান ছাড়া ১৪ নেতার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচেন ফের শফিক চৌধুরী ও মহিবুর রহমান মনোনয়ন যুদ্ধে অবতির্ণ হলে বঞ্চিত হন দু’জনই। আসনটি চলে যায় জাতীয় পার্টির কব্জায়। মহাজোটের প্রার্থী হয়ে এমপি হন ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মুহিবুর রহমান বিদ্রুহী প্রার্থী হলেও তিনি পরাজিত হন। নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্য চলে যান মুহিবুর রহমান। সেখানে গিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় কাজ শুরু করেন তিনি। ২০১৬ সালে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সাথে নিয়ে দেশে ফিরেন মুহিবুর রহমান। এরপর থেকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে মাঠে কাজ চালিয়ে যান মুহিবুর রহমান। কিন্ত আসন্ন নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মুহিবুর রহমান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এমনটাই গুঞ্জন চলছে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2FGlOyK
November 28, 2018 at 11:40AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন