চট্টগ্রাম, ২৩ নভেম্বর- চট্টগ্রামে নিজের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করে কীর্তি গড়েছেন নাঈম হাসান। তার বোলিং নৈপূণ্যে প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের লিড পাওয়া বাংলাদেশ, দ্বিতীয় ইনিংসে সুবিধা করতে পারেনি। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকালে ১৭ ওভারে ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ এগিয়ে ১৩৩ রানে। হাতে আছে আরও পাঁচ উইকেট। জয় পেতে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুরে দিতে হবে টাইগারদেরকে। সে জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ দল। এমনটিই বলছেন তরুণ অফ স্পিনার নাঈম হাসান। শুক্রবার খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে নাঈম বলেন, পুঁজি আমাদের যাই থাক না কেন। আমরা জয়ের জন্যই লড়াই করব। প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ দল। দলীয় ১৩ রানে জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। প্রথম ইনিংসে ৪৪ রান করা ইমরুল দ্বিতীয় ইনিংসে ফেরেন মাত্র ২ রান করে। এরপর কোনো রান যোগ করার আগেই সাজঘরে ফেরেন অন্য ওপেনার সৌম্য সরকার। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া সৌম্য, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্রাথওয়েটের বলে ক্যাচ তুল বিদায় নেয়ার আগে করেন ১১ রান। রোস্টন জেচের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন প্রথম ইনিংসে ১২০ রান করা মুমিনুল হক। দ্বিতীয় ইনিংসে ১১ বলে মাত্র ১২ রান করে ফেরেন বাংলাদেশের টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। দলের কঠিন চাপের মুহূর্তে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাত্র দুই বল খেলে দলীয় ৩৫ রানে ফেরেন সাকিব (১)। এর আগে প্রথম ইনিংসে তিনি করেছেন ৩৪ রান। ৩৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়া দলকে খেলায় ফেরানোর আগেই ফের বিপদে পড়ে যান মোহাম্মদ মিঠুন। ৩৫ বলে ১৭ রান করে দেবেন্দ্র বিশুর বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মিঠুন। এর আগে প্রথম ইনিংসে ২০ রান করেছেন তিনি। নাঈম-সাকিব স্পিন ঘূর্ণিতে ২৪৬ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ চার স্পিনার ও এক পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়,উইকেট শিকারের জন্য স্পিনারদের দিকে তাকিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। আস্থার প্রতিদানও দিলেন তারা। টপাটপ করে একের পর এক উইকেট তুলে নিলেন তারা। বিশেষ করে নাঈম হাসান ও সাকিব আল হাসান। অভিষিক্ত অফস্পিনারের ৫ উইকেট এবং অধিনায়কের ৩ উইকেট শিকারে ২৪৬ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এখনও ৭৮ রানে এগিয়ে সাকিব বাহিনী। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩২৪ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা শুভ হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সূচনালগ্নেই ফেরেন কাইরন পাওয়েল। টিম বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তাইজুল ইসলাম। তার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ক্যারিবীয় ওপেনার। অল্পক্ষণ পর সাকিব আল হাসানের জোড়া আঘাতে চাপে পড়ে উইন্ডিজ। সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন শাই হোপ। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বলির পাঁঠা হয়ে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ক্রেগ ব্র্যাথওয়েট। চাপের মুখে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন রোস্টন চেজ। সুনিল আমব্রিসকে নিয়ে ধীরে ধীরে চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন তিনি। তাকে যথার্থ সঙ্গ দিতে থাকেন আমব্রিসও। তবে তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান নাঈম হাসান। দুর্দান্ত ডেলিভেরিতে শর্ট লেগে ইমরুল কায়েসের তালুবন্দি করে চেজকে (৩১) ফেরান তিনি। অভিষেক ম্যাচে এটি তার প্রথম উইকেট। এতে সফরকারীদের ওপর চাপ অব্যাহত থাকে। একটু পরেই আমব্রিসকে (১৯) এলবিডব্লিউ করে ফেরান এ অফস্পিনার। ফলে মহাবিপর্যয়ে পড়ে ক্যারিবীয়রা। এ পরিস্থিতিতে নেমে আপাতদৃষ্টিতে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করার কথা একজন ব্যাটসম্যানের। তবে ঠিক উল্টো পথে হাঁটেন শিমরন হেটমায়ার। ক্রিজে এসেই ঝড় তোলেন তিনি। তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন জোগান শান ডাওরিচ। তাতে এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশ বোলিং লাইনআপ। তবে দমে যাননি টাইগার বোলাররা। চেষ্টা চালিয়ে যান তারা। পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফল হিসেবে সাফল্যও পান। অবশেষে থামতে বাধ্য হন হেটমায়ার। রূদ্রমূর্তি ধারণ করা ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুর্দান্ত ডেলিভেরিতে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি করে তাকে ফেরান তিনি। তাতে ভাঙে ৯২ রানের জুটি। ফেরার আগে টি-টোয়েন্টি মেজাজে ৪৭ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৩ রান করেন হেটমায়ার। এর আগে প্রথম দিনের ৮ উইকেটে ৩১৫ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। তাইজুল ইসলাম ৩২ এবং নাঈম হাসান ২৪ রান নিয়ে খেলা শুরু করেন। যতটা সম্ভব সংগ্রহ বাড়িয়ে নেয়া লক্ষ্য ছিল টাইগারদের। এজন্য তাইজুল ইসলাম এবং নাঈম হাসানের দিকে তাকিয়ে ছিল। তবে এদিন খুব বেশি দূর যেতে পারেনি এ জুটি। শুরুতেই জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে শাই হোপকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাঈম (২৬)। খানিক বাদেই একই বোলারের এলবিডব্লিউ ফাঁদে পড়ে ফেরেন মোস্তাফিজুর রহমান। এতে ৩২৪ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৪টি করে উইকেট শিকার করেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও জোমেল ওয়ারিক্যান। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (প্রথম দিন শেষে ৩১৫/৮) ৯২.৪ ওভারে ৩২৪ (নাঈম ২৬, তাইজুল ৩৯*, মোস্তাফিজ ০; রোচ ১৭-২-৬৩-১, গ্যাব্রিয়েল ২০-৩-৭০-৪, চেজ ১১-০-৪২-০, ওয়ারিক্যান ২১.৪-৬-৬২-৪, বিশু ১৫-০-৬০-১, ব্র্যাথওয়েট ৮-১-১৯-০) সূত্র: যুগান্তর এমএ/ ০৬:৪৪/ ২৩ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2PPYt2b
November 24, 2018 at 12:58AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন