নিউইয়র্ক, ১১ ডিসেম্বর- যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান খন্দকার আবদুল্লাহ পুলিশের উচ্চপর্যায়ের নির্বাহী পদে যোগ দিচ্ছেন। বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী হিসেবে পরিচিত এনওয়াইপিডির ক্যাপ্টেন পদে যোগদান করছেন ৩৩ বছর বয়সী খন্দকার আবদুল্লাহ। রাজনৈতিক আনুকূল্য পেলে খন্দকার আবদুল্লাহ হতে পারেন নিউইয়র্ক নগরীর প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ কমিশনার। ক্যাপ্টেনের পর নিউইয়র্ক পুলিশের পরের ধাপের পদবি পুলিশ কমিশনার, যা রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। খন্দকার আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, ২১ ডিসেম্বর তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিবাসী হয়ে ১৯৯৩ সালে খন্দকার আবদুল্লাহ আমেরিকায় আসেন। নিউইয়র্কের বাংলাদেশিবহুল এলাকা কুইন্সের এস্টোরিয়া আর উডসাইড এলাকায় তাঁর বেড়ে ওঠা। ২০০৫ সালের সামারে নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগে যোগ দেন খন্দকার আবদুল্লাহ। তিনি কলেজে পড়ার সময় জব ফেয়ারে দেখেন, এনওয়াইপিডিতে লোক নেওয়া হচ্ছে। প্রথমে অনেকটা খেয়ালের বশে তিনি খণ্ডকালীন ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দেন পুলিশ বিভাগে। ইউনিভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেন পুলিশ ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেওয়ার। অভিবাসী পরিবারের সন্তান হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার স্বপ্ন তাঁকে পেয়ে বসে সেই সময়েই। ২০০৭ সালে পুলিশ অফিসার হিসেবে শপথ নেন খন্দকার আবদুল্লাহ। তিনি বললেন, যে নগরী আমাকে, আমার মতো অভিবাসীদের অনেক দিয়েছে, সে নগরীর নিরাপত্তার শপথ নেওয়ার দিনটি ছিল বড় আবেগের। পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষণের পরই খন্দকার আবদুল্লাহর প্রথম দায়িত্ব পড়ে ইস্ট নিউইয়র্কের অপরাধবহুল এলাকা বলে পরিচিত ব্রুকলিনের ৭৫ প্রিসিংটে (পুলিশ অফিস)। ২০১৩ সালে খন্দকার আবদুল্লাহ এনওয়াইপিডির কর্মকর্তা হিসেবে সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এবার দায়িত্ব পড়ে সাউথ ব্রংকসে, যা নিউইয়র্ক পুলিশের সার্ভিস এলাকা-৭ নামে পরিচিত। অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সাদাপোশাকের পুলিশের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। লং আইল্যান্ড সিটির ১০৬ প্রসিঙ্কটেও এক বছর সার্জেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের আগস্টে খন্দকার আবদুল্লাহ লিউটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি পান। লিউটেন্যান্ট পদে পদোন্নতির পরই তাঁকে নিউইয়র্কে নগরীর ২৮ প্রিসিংট দায়িত্ব প্রদান করা হয়। নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ হার্লেম এলাকায় লিউটেন্যান্ট খন্দকার আবদুল্লাহ কমান্ডিং অফিসারের একান্ত প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন নিজের সততা, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তায়। এ সময়ে অপরাধসংশ্লিষ্ট সমস্যা চিহ্নিতকরণ, অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ, কার্যকর কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং পরিকল্পনা ও গৃহীত কৌশলের সাফল্য নিয়ে কাজ করে কৃতিত্ব দেখান খন্দকার আবদুল্লাহ। একই সময়ে খন্দকার আবদুল্লাহ নগরীর কৌঁসুলিসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ পান। হার্লেম এলাকায় তাঁকে স্পেশাল অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ দায়িত্ব তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৮এই দুই বছর পালন করেন। পরপরই তিনি পুলিশের পেশাদারি দেখাশোনাসহ নানা প্রশাসনিক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। বিভাগীয় চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ১০ ডিসেম্বর খন্দকার আবদুল্লাহকে জানানো হয়, তিনি ২১ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এনওয়াইপিডির সদস্যসংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। নিয়মিত বাহিনীতে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি আছেন। নিউইয়র্ক নগরীর ট্রাফিকসহ পুলিশের অন্যান্য বিভাগ মিলে এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ক্রিমিনাল জাস্টিসে স্নাতক খন্দকার আবদুল্লাহ তাঁর কর্মের জন্য এর মধ্যে পুলিশের আটটি মেডেল লাভ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ নগরী নিউইয়র্কে খন্দকার আবদুল্লাহর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে অনেক খুনি, মাদকসম্রাটসহ দুর্ধর্ষ অপরাধী। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার তালতলা গ্রামের প্রয়াত খন্দকার মদব্বির আলী ও মুহিবুন্নেসা চৌধুরীর ছেলে খন্দকার আবদুল্লাহ শিশুকালে আমেরিকায় এলেও এখনো সাবলীল বাংলায় কথা বলেন। দুই সন্তানের জনক খন্দকার আবদুল্লাহ স্ত্রীকে নিয়ে লং আইল্যান্ড এলাকায় থাকেন। খুশির সংবাদ জানার পর তিনি বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। খন্দকার আবদুল্লাহ বলেন, যাঁরা স্বদেশিদের সাফল্যে সদা গর্ববোধ করেন, তাঁদের প্রতি আমার সব ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। তাঁদের মুখ উজ্জ্বল হলেই নিজেকে ধন্য মনে করি। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো এআর/০৬:৫০/১১ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2RLUXTz
December 12, 2018 at 12:45AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top