ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর- বাংলাদেশে ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের আয়-ব্যয়ের যে হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিশেষভাবে সবার নজর রাজনৈতিক নেতা আর সেলেব্রিটি প্রার্থীদের হলফনামা এবং আয়কর রিটার্নের দিকে যেখানে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। নির্বাচনের নিয়মানুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থীদের এই হলফনামা দাখিল করতে হয়। এই হলফ নামায় প্রার্থীদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত ও আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য দিতে হয়। এসব তথ্য দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে ভোটাররা তাদের ভোট দেয়ার আগেই প্রার্থী সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে পারেন। এই তথ্য নির্বাচন কমিশন বা ইসির ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয় - যাতে যে কেউ চাইলেই এটি দেখতে পারেন। আর এ তথ্য নিয়ে বিভিন্ন দলের ছয় জন তারকা প্রার্থীর আয়-ব্যয়ের হিসেবের অংশবিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বিবিসি বাংলা। বিবিসি বাংলার ওই প্রতিবেদনটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো: মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা (নড়াইল-২ আওয়ামী লীগ) ক্রিকেট জগত থেকে মাশরাফীর রাজনীতিতে সরে আসার সিদ্ধান্তকে ঘিরে অনেক বাদানুবাদ হয়েছে ভক্তদের মধ্যে। তার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ ছিল প্রবল। তিনি তার আয় এবং সম্পদের যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, তার কাছে নগদ অর্থ রয়েছে এক কোটি ৩৭ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা। তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত রয়েছে প্রায় ছয় কোটি টাকা। এছাড়া চাকরি থেকে তিনি আয় দেখিয়েছেন ৩১ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা। কৃষিখাত থেকে আয় হয়েছে পাঁচ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। পাশাপাশি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দ্যা ম্যাশ লিমিটেড থেকে তার আয় হয়েছে সাত লক্ষ ২০ হাজার টাকা। বেবি নাজনীন (নীলফামারী-৪, বিএনপি) কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন নীলফামারীর সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী। দলের পক্ষে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র ও সাবেক সাংসদ মো. আমজাদ হোসেন সরকারও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের পর তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। বেবি নাজনীন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক। তিনি যে হলফনামা দাখিল করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, তার কাছে বর্তমানে নগদ টাকা রয়েছে পাঁচ লক্ষ। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া রয়েছে এক লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার। ৪৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী। ৬৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র এবং ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট। পেশা থেকে তার আয় হয়েছে পাঁচ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। মমতাজ বেগম (মানিকগঞ্জ-২ আওয়ামী লীগ) লোকসঙ্গীত শিল্পী মমতাজ প্রথমবার সংসদে যোগদান করেন ২০০৯ সালে। তিনি ৯ম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। এরপর ২০১৪ সালে ১০ম সংসদ নির্বাচনে তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তার হলফনামায় দেখা যাচ্ছে, তার আয় আনুমানিক ৩৯ লক্ষ টাকা। তার কাছে নগদ রয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা। স্বামীর নামে রয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। তার নিজের নামে ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে ৮৬ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। স্বামীর নামে ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। এর বাইরে মধু উজালা কোল্ড স্টোরেজের শেয়ার রয়েছে তার নামে সাড়ে তিন কোটি টাকার। আর তিন সন্তানের নামে শেয়ার রয়েছে ৬৫ লক্ষ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে মমতাজের রয়েছে মহাখালীতে পাঁচ কাঠা জমির ওপর পাঁচ তলা ভবন, যার মূল্য ধরা হয়েছে ছয় কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা। আর মানিকগঞ্জে ২১ শতক জমির ওপর দালান, যার মূল্য ৫৭ লক্ষ টাকা। মো. মাসুদ পারভেজ (বরিশাল-২ জাতীয় পার্টি): চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রয়োজক, পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা নামেই বেশি পরিচিত। তিনি একসময় ছাত্রলীগ করতেন। পরে তিনি ২০০৯ সালে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ গ্রহণ করে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। মি. পারভেজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্বাচন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবেও নিয়োগ লাভ করেন। তিনি হলফনামায় জানিয়েছেন, পেশা থেকে তার আয় আট লক্ষ ১৮ হাজার টাকা। ব্যাংকে নগদ গচ্ছিত রয়েছে ১৬ লক্ষ টাকা। মূলধনী লাভ দেখিয়েছেন তিন লক্ষ ১০ হাজার টাকা। ঢাকার উত্তরায় তার বাড়ির মূল্য ধরা হয়েছে নয় লক্ষ টাকা। এর বাইরে কাকরাইলে অফিসের মূল্য ১৬ লক্ষ, বান্দরবানের রাবার বাগানের মূল্য দুই লক্ষ, তুরাগের দিয়াবাড়ীতে ৪৫ শতক জমির মূল্য এক কোটি ৮০ লক্ষ আর কক্সবাজারে ৩৮ শতাংশ জমির মূল্য দেখিয়েছেন ১৩ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা। রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা (সিরাজগঞ্জ-১ বিএনপি): কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ, যিনি কনকচাঁপা নামেই বেশি পরিচিত, লড়ছেন সিরাজগঞ্জ-১ অর্থাৎ কাজীপুর আসন থেকে। এটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। কনকচাঁপা তার হলফনামায় জানিয়েছেন, পেশা থেকে তার আয় হয়েছে ছয় লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। অন্যান্য সূত্রে আয় হয়েছে চার লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ অর্থ রয়েছে ৬৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রয়েছে ৬৯ লক্ষ টাকা। শেয়ার রয়েছে তিন লক্ষ ৩১ হাজার টাকার। কৃষি জমি রয়েছে ২০ লক্ষ টাকার। অকৃষি জমি, ২৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার। আর তার অ্যাপার্টমেন্টের দাম ধরা হয়েছে ৪০ লক্ষ টাকা। মো. আশরাফুল হোসেন আলম, হিরো আলম (বগুড়া-৪, স্বতন্ত্র): চলতি বছর বাংলাদেশের মানুষ যে দুজনকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি গুগল করেছেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন হিরো আলম। তার আসল নাম মো. আশরাফুল হোসেন আলম। তার নির্বাচনী আকাঙ্খার কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই তাকে নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। মনোনয়ন প্রক্রিয়ার গোড়াতে তিনি ধাক্কা খেলেও পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান। এরপর থেকে তিনি বগুড়া-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। তার প্রতীক সিংহ। হিরো আলমের হলফনামায় দেখা গেছে তার আয় মোট দুই লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা। পেশা থেকে আয় দুই লক্ষ ৫২ হাজার টাকা। বাকিটা কৃষিখাত থেকে। নয় শতক জমির ওপর তার পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে, পাশাপাশি দেড় বিঘা জমির ওপর রয়েছে পৈত্রিক কৃষিজমি। বিবাহসূত্রে পাওয়া ১০ ভরি স্বর্ণালংকারের কথা তিনি তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। আর/০৮:১৪/১৫ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2GqXtO2
December 15, 2018 at 04:47PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন