ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর- সংস্কৃতির প্রতিটি শাখাতেই যাতাযাত ছিলো তার। অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার, সংলাপকার, গীতিকার, নাট্যকার, গল্পকার, ঔপন্যাসিক কোথায় ছিলেন না তিনি? ১২ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে এতোবার জাতীয় পুরস্কার কেউ আর পায়নি আমাদের দেশে। তিনি আমজান হোসেন। যে নামটি আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের পাতায় গত শতাব্দিতেই সোনার অক্ষরে লিখিত হয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রের এক দিকপাল এবা সেরা মহীরুহদের একজন তিনি। ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন আমজাদ হোসেন। কিশোর বেলা থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন।ক্লাস থ্রিতে প্রথম ছড়া লিখেন যা প্রকাশিত হয়েছিল আজাদ পত্রিকায় শিশুদের পাতায়। ১৯৫৬ সালে মেট্রিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কাউকে না জানিয়ে গোপনে কলকাতার দেশ পত্রিকায় একটি কবিতা লিখে পাঠান। কবিতা প্রকাশের আগেই দেশ পত্রিকা থেকে সম্পাদক সাগরময় ঘোষ আমজাদ হোসেনকে একটি চিঠি পাঠান্। যেখানে লিখা ছিল, কল্যাণীয়েষু, পুনশ্চ. এই যে তুমি কেমন আছ, কী অবস্থায় আছ জানি না। তোমার কবিতা পেয়েছি। তোমার হাতে/কলমে সরস্বতীর আশীর্বাদ আছে। আমার এই পত্র পাওয়া মাত্রই তুমি কলিকাতায় চলিয়া আস। তোমার থাকা-খাওয়া-শিক্ষা সমস্ত কিছুর ভার আমার ওপরে। শুভেচ্ছান্তে সাগরময় ঘোষ।কিন্তু কলকাতায় যাওয়ার কথা কাউকে বলতে পারেননি ভয়ে। ১৯৫৯ সালের শেষের দিকে ঢাকায় চলে আসেন আমজাদ হোসেন। ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চা করা শুরু করলেন। নাটকের কাজের জন্য লাঞ্চ বাবদ দৈনিক ২০ টাকা করে পেতেন। শূরু হলো তার নতুন যাত্রা। সড়ক, সিটি ডেভেলপমেন্ট ডিভিশন ওয়ান ও বিভিন্ন অফিস পাড়ার জন্য নাটক করতেন, জেলখানার কয়েদিদের জন্যও নাটক করেছিলেন। ঢাকা হলের এক বড় ভাই শওকত আলী বাড়ীতে যাবে তাই শুন্য ঘরটিতে আমজাদ হোসেনকে কদিন থাকতে অনুরোধ করলেন। সেই ঘরে বসেই ভাষা আন্দোলনের উপর একটি নাটক লিখলেন যার নাম ধারাপাত। নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পর ইত্তেফাকে কভার ফিচার হয়। সৈয়দ শামসুল হকও সাপ্তাহিক চিত্রালিতে ধারাপাত নাটকটির প্রশংসা করে ছোট্ট কলাম লিখেন। ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন জুলেখার মধ্য দিয়ে পরিচালক হয়ে আসেন। ছবি মুক্তির হিসাবে আমজাদ হোসেন হলেন আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির তালিকায় ৩০তম পরিচালক যে তালিকার ১নং স্থানটি দখল করে আছেন মুখ ও মুখোশ এর পরিচালক আব্দুল জব্বার। এরপর জহির রায়হান প্রযোজিত ও মোস্তফা মেহমুদ, রহিম নেওয়াজ ও নুরুল হক বাচ্চুর সাথে পরিচালনা করেন দুইভাই ছবিটি। ১৯৬৯ সালে করাচি থেকে ফিরে জহির রায়হান আমজাদ হোসেনের সাথে আবার যুক্ত হলেন এবং দুজনে মিলে নির্মাণ করলেন জীবন থেকে নেয়া নামের এক কালজয়ী ঐতিহাসিক ছবি যেখানে আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব ঘটনাবলির এক দলিল হিসেবে ঠাই করে নিয়েছে।এক সাক্ষাৎকারে আমজাদ হোসেন জানিয়েছিলেন জীবন থেকে নেয়া ছবিটি নিয়ে পেছনের কথা। তার নির্মিত ভাত দে ছবিটি বিখ্যাত সবসময়। তিনি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ছয়টি ভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন এবং এক আয়োজনে পাঁচটি বিভাগে (গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রের জন্য) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। যে নির্মাতা নাটকের কাজের জন্য লাঞ্চ বাবদ দৈনিক ২০ টাকা করে পেতেন। সেই নির্মাতাই বাংলা ছবির কিংবদন্তি হয়ে উঠলেন নিজেকে প্রমাণ করে। তিনি এবার বিদায় নিলেন। যাওয়ার আগে অনেক কিছুই দিলেন আমাদের। শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মারা গেলেন। সাধারণ মানুষের এই আমজাদ হোসেনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ ৪২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু সময় যে শেষ এ কিংবদন্তির। তাই যেতেই হলো! এমইউ/০৪:৫০/১৫ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2S53b9u
December 15, 2018 at 10:51PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top