ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর- সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংটা হয়নি প্রত্যাশামাফিক। মাত্র ১২৯ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হারতে হয়েছিল ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ম্যাচ শেষে পু্রস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও সে ম্যাচের ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়ে কিছুই বলতে চাননি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অন্যসব ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতার সে ম্যাচেও উজ্জ্বল ছিলেন সাকিব, খেলেছিলেন ৬১ রানের ইনিংস। সে ধারাবাহিকতা তিনি বজায় রেখেছেন মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও। খেলেছেন ২৬ বলে ৪২ রানের হার না মানা ইনিংস। তার সাথে এবার যোগ দিয়েছেন অন্যরাও। লিটন ৬০, মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ৪৩ ও সৌম্যের ৩২ রানের ইনিংসে বাংলাদেশও দাঁড় করিয়েছে ২১১ রানের পাহাড়। শুধু ব্যাট হাতে নিজের কাজ করেই থামেননি সাকিব। পরে বল হাতেও একাই ভেঙে দিয়েছেন ক্যারিবীয়দের মেরুদণ্ড। ৪ ওভারের স্পেলে মাত্র ২০ রান খরচায় নিয়েছেন ৫টি উইকেট। নিঃসন্দেহে দিনের সেরা পারফরমার সাকিবই। তবে ম্যাচ শেষে জয়ের কৃতিত্বটা তিনি দিতে চাইলেন দলের অন্য ব্যাটসম্যানদেরকেই। সিলেটে দ্রুতগতির ও তুলনামূলক বাউন্সি উইকেটে ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলেও, জ্বলে উঠেছেন চিরচেনা মিরপুরের টিপিক্যাল স্লো অ্যান্ড লো উইকেটে। তাই তো ম্যাচ শেষে মিরপুরের উইকেটকেই নিজেদের জন্য ভালো মেনে নিলেন সাকিব। সবসময় মিরপুরের উইকেটের অনিশ্চয়তা সম্পর্কে একটা চাপা অভিযোগ থাকলেও এবারের শেরেবাংলার উইকেট নিয়ে সাকিবের কোনো অভিযোগ নেই। কেন নেই? তার ব্যাখ্যাও আছে। ম্যাচপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান বলেন, মিরপুরের উইকেট আমি মনে করি সময় পেলে বেশ ভালোই প্রস্তুত করার সুযোগ আসে। আমি মিরপুরের উইকেটকে খারাপ বলতে পারব না। কারণ আমার ক্যারিয়ারের অর্ধেকই এখানে। বোলিং ব্যাটিংয়ের অনেক সাফল্যই এখানে। আমার কাছে মিরপুরের উইকেটই ভালো। যত আনপ্রেডিক্টেবল আর রহস্যময়ই বলা হোক না কেন, সাকিবের ধারণা শেরেবাংলাই টাইগারদের সবচেয়ে লাকি ভেন্যু। টিম বাংলাদেশের সাফল্যের সেরা ভেন্যু। আজ ম্যাচ শুরুর আগে টিম মিটিংয়ে সহযোগীদের উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করতে গিয়েও সাকিব বলেন, আমি আজ ম্যাচ শুরুর আগে বলেছি এই কন্ডিশনটা ওদের (ক্যারিবীয়দের) থেকে আমাদের বেশি ফেভারেবল হওয়া উচিত। আমরা এখানে সবসময় ম্যাচ খেলি। আমাদের প্রতিটা প্লেয়ার ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে শেরেবাংলায় অসংখ্য ম্যাচ খেলেছে। আমাদের জন্য এই মাঠ অনেক পরিচিত। সেই হিসেবে সিলেট অত পরিচিত না, আমরা খুব কম ম্যাচ খেলেছি, হয়তো যারা ওই রকম বেশি ডোমেস্টিক খেলে না তাদের জন্য নতুন কন্ডিশন বলবো সিলেটকে। সেইদিক থেকে মিরপুর আমাদের জন্য অনেক পরিচিত। এছাড়া দর্শক ও সমর্থকদের সাপোর্টটা খুব ইম্পরট্যান্ট থাকে মিরপুরে। শেরেবাংলার দর্শকদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দলকে ভালো খেলতে একটু বেশি উদ্দীপ্ত করে। নেক্সট ম্যাচের আগে। আমার কাছে মনে হয় এটাও অনেক পজেটিভ একটা দিক। ব্যাট-বল উভয়দিকেই দিনের সেরা পারফরমার, মিলেছে ম্যাচ সেরার স্বীকৃতিও। কেমন লাগছে এমন ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স করতে পেরে? এ প্রশ্নের জবাবে নিজের কৃতিত্বের কথা বলার আগে বারবার ব্যাটসম্যানদের বিশেষ করে মাহমুতউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের প্রশংসা সাকিবের মুখে। সাকিবের ভাষ্য, আসলে ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলে বড়-সড় স্কোর গড়ায় আমরা সাহস পেয়েছি। তবে ৫ উইকেট শিকার করতে পেরে বেশ উল্লসিত সাকিব। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেই ফেললেন, টেস্ট ও ওয়ানডেতে ৫ উইকেট থাকলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আগে কখনো ৫ উইকেট পাইনি। আজই প্রথম পেলাম। খুব ভালো লাগছে। প্রেস কনফারেন্সে কথা বলার সময় বোঝা যাচ্ছিল ভেতরে ঠান্ডা জমে আছে তার, কথা নাকে জড়াচ্ছিল। অনেক কথার ভিড়ে তার শরীরের প্রসঙ্গও উঠল। সাকিব ভণিতা না করে বলেই ফেললেন, এখন জ্বর নেই। তবে ঠান্ডাটা আছে। ল্যুজ মোশনও কমেছে। এ রকম শরীর নিয়ে সন্ধ্যার পর শিশির ভেজা বলে স্পিনার হিসেবে সফল হওয়া ৪ ওভারে প্রতিপক্ষের ইনিংসের অর্ধেকটার পতন ঘটানো সহজ কাজ নয়, বেশ কঠিন। এতগুলো প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে দলের সাফল্যের নায়ক হয়েও নির্বিকার সাকিব। নিজের কথা না বলে বারবারই বললেন, আসলে শিশির একটা বড় ফ্যাক্টর। বল করতে সমস্যা হয়েছে সবার। পেসারদেরও সমস্যা হয়েছে। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লিটন ও সৌম্যর প্রশংসা করলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ভূমিকাকে একটু বেশিই মূল্য দিতে চান সাকিব। তার ব্যাখ্যা, দারুণ শুরুর পরেও মাঝে দুই উইকেট পড়ে যাওয়ায় খানিক বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। একটু চিন্তা এসে বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু রিয়াদ ভাই উইকেটে এসে চটজলদি সেট হয়ে রান গতি বাড়িয়ে ফেলায় চাপ কমে যায়। ব্যাটসম্যানদের অ্যাপ্রোচ ও সামর্থ্যের প্রয়োগের প্রশংসা করে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, আমাদের ব্যাটসম্যানরা আগের ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়েছে। সিলেটে করা ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটিয়ে সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যাট করেছে সবাই। সিলেটের অ্যাপ্রোচে সমস্যা কী ছিল? আজ খেলা শেষের কথোপকথনে তার ব্যাখ্যা দিয়ে সাকিব বলেন, সিলেটে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলাররা গড়পড়তা ১৪০ কিলোমিটার গতিকে বল করেছেন। আর আমরা সেগুলোকে ১৮০ কিলোমিটার গতিতে মারতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনি। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ আর/০৮:১৪/২১ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2V3UWN1
December 21, 2018 at 03:43PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top