ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর- ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর ছিল হুমায়ূন-এর ৫ম কেমোথেরামির দিন। আমরা তখন নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় ১৪৮-০১ নম্বর বাসার দোতলায় থাকি। নিচতলাটা খালি। দোতলার উপরে ছোট্ট একটা অ্যাটিক। অর্ধেক উচ্চতার ওই অ্যাটিকে হুমায়ূন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। কিন্তু জায়গাটা তাঁর খুব পছন্দের। তার ট্যানটা বাবা নিষাদ হুমায়ূনকে সঙ্গে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি সেখানে ছবি আঁকেন। সারা অ্যাটিক রঙে মাখামাখি হয়ে যায়- বাধা দেবার কেউ নেই। কোনো ছবির নীল আকাশটায় তুলো তুলো মেঘগুলো সাদা রঙ করতে করতে কোমল গলায় পুত্রকে জিজ্ঞেস করেন ছবিটা কেমন হয়েছে বাবা? ছবিতে গাছের নিচে দাঁড়ানো একাকি এক নারীকে দেখিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় পুত্র নিষাদ বলে এখানে নিষাদ একে দিলে আরও ভালো হবে বাবা। ছবির ভেতরে মা একা একা দাঁড়িয়ে আছে, ভয় পাবে। হুমায়ূন পুত্রের হাতে রংতুলি তুলে দেন। নিষাদ নিজেই একটা ছোট বাচ্চা একে দেয় ছবির মেয়েটির পাশে। এভাবে চলতে থাকে পিতা-পুত্রের রঙের খেলা। কোনো কোনো ছবি দেখে পুত্র হঠাৎ বলে ওঠে এই ছবিটা একদম পচা হয়েছে বাবা। পুত্রের সমালোচনায় কপাল কুচকে মনোযোগী হয়ে কিছুক্ষণ ছবির দিয়ে তাকিয়ে থাকেন হুমায়ূন। তারপর ঘ্যাচাং করে ছিড়ে ফেলেন সেই ছবি! গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বলেন, আসলেই ছবিটা ভালো হয়নি বাবা। পচা হয়েছে। মাঝে মাঝে একা আমি অ্যাটিকে যাই, ছেড়া টুকরোগুলো হাতে করে জুড়ে দেখি। আমার বড় ভালো লাগে। ১১ ডিসেম্বর রাতে আমাকে অ্যাটিকে ডাকলেন হুমায়ূন। তার সামনে একটা সাদা কাগজ- পানিতে ভেজানো। তিনি পানি থেকে কাগজটা তুললেন। তারপর একটু একটু করে জলরঙ এর ছোপ পরতে লাগলো ভিজে পাতায়। হুমায়ূন টুকটুক করে আমার সাথে গল্প করছেন। ৭ বছর আগের সেই একই দিনের গল্প। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি তার হাতের কাগজটার দিকে! কি সুন্দর জলছবি তৈরি হয়ে গেছে মুহূর্তের মধ্যে! ছবিখানা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে হুমায়ূন বললেন, এই নাও- তোমার বিয়েবার্ষিকীর উপহার... ১২ ডিসেম্বর সকাল ১১টা। হুমায়ূন আর আমি বসে আছি মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো অংকোলজি ডিপার্টমেন্ট-এর সাজানো লবিতে। অল্পক্ষণের মধ্যেই ডক্টর স্টিফেন আর ভিচ আমাদের ডেকে নিলেন তার ঘরে। পরিচিত হাসিখানা ছুড়ে দিয়ে বললেন, Howre you doin Dr. Ahmed? Youre looking happy today! Is there anything that I missed..! হালকা রসিকতায় ভ্রু নাচালেন তিনি। হুম তুমি রসিকতা করছো! একটু পরেই তো আমাকে গাদাখানেক সুঁই ফোটাবে! আজ আমার বিয়েবার্ষিকী, কোথায় দুজন মিলে একটু ঘুরবো ফিরবো! তা না... আমি বসে আছি কেমোথেরাপির অপেক্ষায়! সরু চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন ডক্টর ভিচ! হাতের কাগজটায় খসখস করে লিখলেন কি যেন! তারপর বললেন তোমাদের আজ ছুটি দিয়ে দিলাম। কেমোথেরাপি কাল হবে। যাও সুন্দর করে বাঁচো আজকের দিনটা। আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। ম্যানহাটন এর রাস্তায় রাস্তায় এলোমেলো হেঁটে বেড়ালাম! শুধু আমরা দুজন! পথচারীদের জিজ্ঞেস করে করে চায়না টাউন খুঁজে বের করে দুপুরের খাবার খেলাম। দৌড়ে গিয়ে বাস ধরলাম- টিকেট ছাড়া সাবওয়েতে ঢুকে পরলাম!!! সে কি পাগলামি আমাদের দুজনের..! সে কি ছেলেমানুষী..!!! হ্যাঁ... আমরা দুজন... আমরা কেঁদেছি- আমরা হেসেছি, আমরা ভালবাসায় ভেসেছি... আমরা ছোট ছোট চাহনিতে মুহূর্তটা বেঁধেছি- ১২ ডিসেম্বর ২০১১... একসাথে আমাদের শেষ বিয়েবার্ষিকী। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) আর/০৮:১৪/১৩ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2EqLMEZ
December 13, 2018 at 04:48PM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
তুর্কি সিরিজ আরতুগ্রুলে মজেছেন ভারতের মুসলিমরা
07 Oct 20200টিমুসলিম বিশ্বে দারুণভাবে সাড়া ফেলে তুরস্কের টিভি সিরিজ দিরিলিস: আরতুগ্রুল। এখন কাশ্মীরসহ ভারতের মুসলি...আরও পড়ুন »
আবারো ভাইরাল শাহরুখকন্যার ছবি
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ৭ অক্টোবর- উষ্ণতায় ভরা চোখ ঝলসানো ছবি শেয়ার করে ফের ভাইরাল হলেন বলিউড বাদশাহর কন্যা সুহানা ...আরও পড়ুন »
এবার সুশান্ত-ভক্তের আত্মহত্যার হুমকি
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ০৭ অক্টোবর- বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর প্রায় চারমাস পার হলেও এখন পর্যন্ত তা...আরও পড়ুন »
প্রায় একমাস পর জামিন পেলেন রিয়া চক্রবর্তী
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ০৭ অক্টোবর- ৯ দিন জেলে কাটিয়ে অবশেষে জামিন পেলেন সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্...আরও পড়ুন »
কাজলের বাগদান সম্পন্ন, বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন ৩০ অক্টোবর
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ৭ অক্টোবর- তামিল, তেলেগু ও হিন্দি ছবির জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল আগারওয়ালের বিয়ের গুঞ্জন শোনা ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.