ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর- হঠাৎ করেই কয়েকটি গান সবার মুখে মুখে। অপরাধী একটি, নতুন করে অন্য গায়কিতে ধরা পড়ল এই মন তোমাকে দিলাম। পাড়ার দোকানদারের মোবাইল থেকে শুরু করে করপোরেট অফিসের কর্মকর্তার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বাজে গানগুলো। ফেসবুক পেজ আর ইউটিউবে লাখ লাখ ভিউ, চলে শেয়ার। শুরু হয়, আলোচনা, তর্কবিতর্ক। আর সেই গানের শিল্পীরা হয়ে ওঠেন মুহূর্তে জনপ্রিয়। গোটা ব্যাপারই চিনি ভাইরাল নামে। এ বছর এমন ভাইরাল হওয়া উল্লেখযোগ্য তিন শিল্পী আরমান আলিফ, টুম্পা খান ও মাহতিম শাকিব। তাঁদের গান ভাইরাল হওয়ার পরে এখন কেমন চলছে তাঁদের কাজ? বদলে যাওয়া জীবনের সেই বয়ান শোনা গেল গত রোববার বিকেলে। হঠাৎ করেই সবকিছু হয়ে গেল কথা ছিল তিনটায় বসব আমরা। ঠিকঠাক হাজির তরুণ শিল্পী আরমান আলিফ। লাল চায়ের সঙ্গে চলে আলাপ। প্রথমেই বলে নিই, এ বছরেরই এপ্রিল মাসে আরমানের গাওয়া অপরাধী গানটি ইউটিউবে ঝড় তোলে। ইউটিউব ট্রেন্ডে অনেক বাঘা বাঘা শিল্পীকেও পেছনে ফেলে দিয়ে। মাসের মধ্যেই কোটি কোটি ভিউ হয়। অনলাইনজুড়ে চলে এই গান নিয়ে আলোচনা। বললাম, একসময় কেউ চিনত না। এখন রাতারাতি জনপ্রিয়। কেমন চলছে বদলে যাওয়া জীবন? আরমান বললেন, অপরাধী গানটি আমারই লেখা। এটা ভাইরাল হওয়ার পর লেখালেখির দিকে পুরো মনোযোগ দিয়েছি। একে একে আমার অন্য গানগুলো লিখি ও গাই। অপরাধীর পরে একে একে করলেন নেশা, বেইমান, কাচের জানালা ইত্যাদি। গানের সঙ্গে সখ্যের গল্পটা আরমানের বেশ পুরোনো। নার্সারিতে পড়ার সময় প্রথম মঞ্চে গান করেন, এক নয়ন তো দেখে নারে আরেক নয়নরে। তারপর ঘরোয়াভাবেই চলে গাওয়া। নিজে গিটার দিয়ে গান গেয়ে, মোবাইলে ভিডিও করে ইউটিউবে ছাড়েন। তখনো তিনি অখ্যাত। তারপর অপরাধী গানটি হয়ে যায় ভাইরাল। এবার একবারে শিল্পী হিসেবে পরিচয়একনাগাড়ে বলে চলেন আরমান। আরও যোগ করলেন, নার্সারিতে প্রথম গান করার পর মা দেখলেন যে এত মানুষের সামনে এই ছোট ছেলে গান করেছে। তাহলে ওকে গান করতে দিই। কিন্তু কখনো ওইভাবে কোথাও গান শেখা হয়নি। আরমান আলিফ কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে একটি ব্যান্ডও তৈরি করেন চন্দ্রবিন্দু বিডি নামে। ২০১৭ সালে ব্যান্ডটির যাত্রা শুরু হয়। ভাইরাল হওয়ার পরে যথারীতি জনপ্রিয় তিনি। কেমন চলছে এখন? আরমানের সহজ উত্তর, এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। হঠাৎ করেই যেন সবকিছু হয়ে গেল। তবে হ্যাঁ, এখন বেশ কাজ করছি, স্টেজ শো করছি। আর আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা যা চেয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। কথা চলে। আরমান বলেন ভাইরাল হওয়ার পরে তাঁর কিছু ভালো লাগার ঘটনাও। একদিন হাতিরঝিলে পদচারীসেতুর কাছে দাঁড়ানো। একজন ছেলে নেমে এসে তাঁর পাশের বন্ধুদের হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আরমানের কাছে চলে আসে। তাঁকে জড়িয়ে ধরে কানে ফিস ফিস করে বলে, ভাই, লাইফে এখন পর্যন্ত আপনার জন্য বাঁচা। ভালো থাকবেন। এরপর সে আর কোনো কথা না বলে হনহন করে চলে গেল। এ ঘটনায় হতবাক আরমান। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে আর কোনো কথা বলল না। একবার তাকালও না। চলে গেল। এটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা ছিল। নেত্রকোনায় জন্ম আরমান আলিফের। ভাইরাল হওয়ার পরে গ্রামের বাড়িতে ভক্তরা কেউ গান শুনতে আসেন, কেউ সেলফি তুলতে। এখন পড়ছেন কমার্স কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে, ইচ্ছাপড়ালেখা ও গান দুটোকেই সমানতালে চালিয়ে যাওয়া। আমি এখন গান নিয়ে সিরিয়াস কথা চলতে চলতেই আরেক ভাইরাল শিল্পী টুম্পা খান চলে আসেন। আরমানকে বিদায় জানাই। কথা শুরু টুম্পার সঙ্গে। বলে নিই, টুম্পা খান এই অপরাধী গানই কাভার করে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিলেন। তারপর এখন তিনি সংগীতশিল্পী। বড় বড় শিল্পীর সঙ্গে গান করছেন। তপু থেকে তাহসান খান আছেন সে তালিকায়। করছেন প্লে ব্যাকও। বদলে যাওয়া জীবন কেমন চলছে? টুম্পা খানের উত্তর, মে মাসে আমার গানটি ভাইরাল হয়। তারপর থেকেই ব্যস্ততা বেড়েছে। এই তো শো করছি, গান গাইছি। সেলফির আবদার তো আছেই। একটা সময় কেবল শখের বশেই গান করতেন। এখন পুরোদস্তুর পেশাদারি কায়দায় গানে হাঁটাচলা। কেমন চলছে এখন? টুম্পা বলেন, এখন আমি গান নিয়ে সিরিয়াস, ভাইরাল হওয়ার আগে গান নিয়ে অতটা সিরিয়াস ছিলাম না। রাস্তায় বের হলে মানুষ চেনে। সবাই সেলফি তোলার আবদার করে। এরই মধ্যে বেশ কিছু গান গেয়েছেন টুম্পা। দুঃখ বন্ধু, অষ্টপ্রহর, হয়নি বলা গানগুলোর কথা বলা যায়। যদিও কাভার গান দিয়েই আলোচনায় এসেছিলেন টুম্পা। শুধু সেলফি তোলার আবদারই রাখতে হয় না টুম্পাকে, মাঝে মাঝে ঘটেছে ভক্তদের সঙ্গে নানা স্মরণীয় ঘটনাও। টুম্পা বলেন, আমার এক কাজিনের বাসা মিরপুরে। পাশের বাসা থেকে একজন নারী জানালা দিয়ে আপুকে বলছেন, দেখো, এ রকম একটা মেয়ে সুন্দর একটা গান করেছে। ওর নাম টুম্পা। আপু দেখল যে এটা আমি। তখন সে কিছু বলেনি। এরপর আমি যখন কাজিনের বাসায় গেলাম, তখন আমাকে জানালার পাশে নিয়ে তাঁকে ডাক দিলেন। উনি আমাকে দেখে তো খুবই অবাক। চিৎকার করে উঠেছিলেন। এ ঘটনাটি বেশ স্মরণীয় টুম্পার জীবনে। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে জন্ম টুম্পার। পড়ালেখা করেছেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে। শখের বসেই গান শেখা। টুম্পার আছে একটি ইউটিউব চ্যানেলও। সেখানে কাভার করা গান প্রকাশ করেন। তাঁর এখন একটাই স্বপ্নভালো শিল্পী হওয়া। নতুন আরেকটা জীবন শুরু আড্ডা দিতে দিতে হাজির শিল্পী মাহতিম শাকিব। সাবিনা ইয়াসমিনের এই মন তোমাকে দিলাম গানটি কাভার করে গত মে মাসে প্রকাশ করলে ভাইরাল হয় গানটি। মাহতিমের মিষ্টি গায়কি ভালো লেগে যায় দর্শকদের। মাত্র আট দিনেই বাজিমাত করে গানটি। ২০১০ সালে মার্কস অলরাউন্ডার প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্স আপ হন। তখনো গান অতটা দানা বেঁধে ওঠেনি। মাহতিম বলেন, ওই প্রতিযোগিতার পরে আসলে আমি আমার ট্র্যাক চেঞ্জ করেছিলাম। আমি একটু সময় নিতে চেয়েছিলাম। আমি সময় নিয়েছি। এরই মধ্যে ২০১৩ সালে আমার ভোকালও চেঞ্জ হয়ে যায়। বাচ্চাদের ভোকাল থেকে একটু পরিপক্ক হয়েছে। এসবের পরে ২০১৪ সাল থেকে আমি আবার গানটা শুরু করি। ছোট থেকেই মাবাবার ইচ্ছা মাহতিম শিল্পী হবেন। কিন্তু মাহতিম গানটাকে বুঝতে শুরু করেন ২০১৩ সালের পরেই। তিনি বলেন, একদিন দেখলাম আমি আর গান গাইতে পারছি না। মানে গলায় সমস্যা। তখন থেকেই গানটাকে মিস করা শুরু করি। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেল, ন্যাচারালি ভোকাল চেঞ্জ হয়েছে। তার আগ পর্যন্ত যেটা হতো যে, বাবামা ঠেলত। যাও, গান গাও। প্র্যাকটিস করো। কত বড় বড় মিউজিশিয়ান প্র্যাকটিস করে। তোমার মিউজিশিয়ান হওয়ার কোনো স্বপ্ন নেই? তারপর শুরু সিরিয়াসলি গান শেখা। মাঝে মাঝে কাভার গান করা। আর মে মাসে হঠাৎ করেই একটি গান ভাইরাল হয়ে তাঁকে নিয়ে এল অন্য জগতে। মাহতিম বলেন, অ্যাকচুয়ালি ইট ওয়াজ ভেরি গুড টার্নিং পয়েন্ট ইন মাই লাইফ। ১৮ মের আগ পর্যন্ত একটা জীবন নিয়ে এগোচ্ছিলাম, এরপরে নতুন আরেকটা জীবন শুরু হলো। কিছু মানুষ রাস্তায় বের হলে চিনতে পারছেন। কিছু মানুষ গান শুনে অ্যাপ্রিশিয়েট করছেন। পছন্দ করছেন। মাহতিম শাকিব এখনো কিশোর। সবে এসএসসি দিয়েছেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের মিউজিক একাডেমি থেকে একটি বৃত্তিও পেয়েছেন। তবে সেখানে যাচ্ছেন না তিনি পছন্দের বিষয় পাননি বলে। মাহতিম বলেন, বৃত্তিটা ক্যানসেল করে দিয়েছি। কারণ, আমি আমার কাঙ্ক্ষিত সাবজেক্টটা পাচ্ছিলাম না। অর্কেস্ট্রেশন নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু আমি মিউজিক প্রোডাকশন পেয়েছি। আমি যাচ্ছি না। আমি কানাডায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোতে। তারপর আমেরিকায় যাব। মাহতিম শাকিবের সব পরিকল্পনাই এখন গানকে ঘিরে। সারা জীবন সংগীতকে সঙ্গে করেই থাকতে চান তিনি। বুকের বাঁ পাশে, গল্পটা এমনইসহ বেশ কিছু গান গেয়েছেন মাহতিম। স্টেজ শো, গানের রেকর্ডিং নিয়েই ব্যস্ত তিনি। কিছুক্ষণ পরেই আছে গানের রেকর্ডিং। মাহতিম শাকিব উঠে পড়েন। আলাপেরও ইতি হয়। সূত্র: প্রথম আলো এইচ/১৬:২২/২৭ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2LB6Fhw
December 27, 2018 at 10:24PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন