ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর- দেশে যদি ইউকেলেলে বিক্রি বেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে এর পেছনে ইমরানের নানুর হাত আছে। যে হাতে নাতির পিঠে একদিন কষে চাপড় মেরেছিলেন তিনি। অজপাড়াগাঁয়ে বসে ইংরেজি গান! নানুই বলেছিলেন, যে গান সবাই বোঝে, সেসব গাও। নকিং অন হ্যাভেনস ডোর বাদ দিয়ে ইউকেলেলে হাতে ইমরান যে বন্ধু তর লাইগারেএর মতো গানগুলো শুরু করলেন, সে তো নানুর কারণেই। এরপরেই টের পেলেন ম্যাজিক। তিনি লাইভ করলেই সেটা ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকে এখন তাঁকে ভাইরাল ইমরান বলে ডাকেন। ফেসবুক ও ইউটিউবের কল্যাণে ইমরান হোসেন সবার পরিচিত। ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে সামনে চলে আসে তাঁর ভিডিও। দেখা যায়, তিনি মনের সুখে চার তারের ছোট্ট গিটারটা (ইউকেলেলে) বাজাচ্ছেন। আর গলা ছেড়ে গাইছে একজন শিশু। মধু হই হই আঁরে বিষ হাওয়াইলি গানটির কথা নিশ্চয়ই মনে করিয়ে দিতে হবে না? ওই গানের শিল্পী ৯ বছরের জাহিদ এখন রীতিমতো তারকা। পরের ঘটনাগুলো মজার। গান গাইতে পারে, দেশের কোনো না কোনো জায়গায় এমন শিশুর খোঁজ আপনাআপনি পেতে শুরু করেন ইমরান। ফেসবুক বন্ধুরাই তাঁকে খবর দিতে শুরু করেন। ইমরান ছুটে যান। দেখেন হতদরিদ্র শিশু, কিন্তু কণ্ঠে মায়ার জাদু। ইমরান শুরু করে দেন ফেসবুক লাইভ। এই শিল্পীদের সাধারণ মিল হচ্ছে, এরা সবাই দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের হতদরিদ্র শিশু। কিন্তু লোকগানের গলা তাঁদের অসাধারণ। ইমরান মনে করেন, পেশাদার অনেক শিল্পীর কণ্ঠেও ওই রকম দরদ পাওয়া যায় না। তিনিই শোনালেন শিশুদের খুঁজে পাওয়ার কাহিনি। ঘোরাঘুরির নেশা আছে ইমরানের। পুরো দেশ ঘোরা হয়ে গেছে কয়েকবার। যেখানেই গেছেন, কাকতালীয়ভাবে পেয়ে গেছেন কোনো না কোনো শিশুকে। গান গেয়ে টাকা রোজগার করার বদলে ইমরান দাঁড়িয়েছেন তাদের পাশে। তাঁর লাইভের সুবাদে তাঁরা পরিচিতি পেয়েছে। গান করে রোজগার করতে শিখেছে। কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েই তাঁর দেখা হয় গান গেয়ে ভিক্ষা করা জাহিদের সঙ্গে। পরের কাহিনি সবারই জানা। ইমরানের লাইভে মধু হই হই গানটি জাহিদকে তারকাখ্যাতি এনে দিয়েছে। সে এখন পেশাদার শিল্পী। নেত্রকোনার বিরিশিরিতে গিয়ে ইমরান পেয়ে যান পাঁচ বছরের চাঁদকে। লাইভে ও ছেড়ি ও ছেড়ি তোরে এককালে ভালোবাসতাম গেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সে। চাঁদ এখন একটি ব্যান্ডে গান করে! নোয়াখালী থেকে ইমরান তুলে ধরেন রাশেদ নামের এক শিশুকে। নৌকা চালাতে চালাতে গান করত সে। ইমরানের লাইভের সুবাদে সেও পরিচিতি পেয়েছে। তারপর ধরা যাক চলনবিলের জেলে পরিবারের শিশু শিংড়ার জিল্লুরের কথা। যেদিন মাছ পেত না, সেদিন না খেয়ে থাকতে হতো তাদের। ফেসবুক লাইভে গান করার সুবাদে এখন আর সেটা হয় না। জিল্লুর এখন গান করার ডাক পায়। ভালো রোজগার করে। সম্প্রতি ময়মনসিংহ থেকে ইমরান তুলে এনেছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সায়েমকে। গ্রামের বাজারে গান করা সায়েম সুযোগ পায় পাঁচ তারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে প্রথম আলোর বিয়ে উৎসবে গান করার। শৈশব থেকে চোখে দেখে না সে। মোবাইল ফোনে শুনে শুনে গান শিখেছে সে। আর এখন ইমরানের হাত ধরে নানা জায়গায় গাইতে যাচ্ছে। এদের নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা জানালেন ইমরান। আমি টাকাপয়সা চাই না। আমার ইচ্ছা ওদের পকেটে দুটো পয়সা আসুক, ওরা দুটো খেয়ে-পরে ভালো থাকুক। এমন দরদভরা গলা এদের, অথচ কত কষ্টে জীবন কাটাতে হয়, বলেন ইমরান হোসেন। এই শিল্পীদের একটা জায়গা করে দিতে পারাটাই তাঁর জন্য আনন্দের। শিল্পকলা একাডেমিতে নজরুলসংগীত ও পল্লিগীতি শিখেছিলেন শৈশবে। বন্ধুদের নিয়ে গড়েছেন মেড ইন বাংলাদেশ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। হতদরিদ্রদের সাহায্য করেন তাঁরা। ইমরানের স্বপ্ন নদীর পাড়ে একদিন একটি আনন্দগ্রাম প্রতিষ্ঠা করবেন। সেখানে থাকবে ১০০ হতদরিদ্র পরিবার। তাঁর বিশ্বাস, সমাজের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা বন্ধুদের সহযোগিতা পেলেই এ স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে। সূত্র: প্রথম আলো এইচ/১৩:১৭/২৮ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2EULB46
December 28, 2018 at 07:19PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top