সিলেট, ১৯ জানুয়ারি- রংপুর রাইডার্স বোলারদের রীতিমতো কাঁদিয়েছিলেন সাব্বির রহমান-নিকোলাস পুরানরা। চার-ছক্কায় ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন মাশরাফি, অপু, ফরহাদ, গেইলদের ওপর। সমুচিত জবাব দিলেন অ্যালেক্স হেলস-এবি ডি ভিলিয়ার্স-রাইলি রুশোরা। ইরফান, লামিচানে, তাসকিন, কাপালি ও মেহেদীর ওপর স্টিম রোলার চালালেন তারা। এনে দিলেন কাঙিক্ষত জয়। ১৯৫ রানের টার্গেটে ৪ উইকেটের অসাধারণ জয়ে জয়ের ধারায় ফিরলেন মাশরাফি বাহিনী। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় রংপুর। বিপিএলে বরাবরই প্রতিপক্ষের জন্য এক আতঙ্কের নাম ক্রিস গেইল। অতীতে মাঠে নামলেই বোলারদের রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন। তবে এবার সেই রুদ্রমূর্তির ক্যারিবীয় দানবকে খুজেঁ পাওয়া যাচ্ছে না। বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে ভীষণ রানখরায় ভুগছেন। পাওয়ার প্লের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারছেন না। সেই ধারাবাহিকতাই বজায় রাখেন। রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন টি-টোয়েন্টি কিং। দ্বিতীয় উইকেটে রাইলি রুশোকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠেন অ্যালেক্স হেলস। একপর্যায়ে জমে ওঠে তাদের জুটি। বইয়ে দিতে থাকেন রানের নহর। এতে এগোতে থাকে রংপুর। তবে আচমকা হার মানেন হেলস। অলক কাপালির স্পিনে লিটন দাসের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ফেরার আগে ২৪ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৩ রান করেন তিনি। পরে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে নিয়ে এগিয়ে যান রুশো। দারুণ সঙ্গও পান তিনি। দুই প্রোটিয়ার ব্যাটে দুরন্ত গতিতে রান তোলে রংপুর। এতে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন টম মুডি শিষ্যরা। এ পরিস্থিতিতে তাসকিনের বলির পাঁঠা হয়ে ফেরেন আগুনে ফর্মে থাকা রুশো। এদিনও ফিফটি তুলে নেন তিনি। ৩৫ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৬১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন এ প্রোটিয়া। স্বদেশী সতীর্থকে হারিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডি ভিলিয়ার্সও। তাকে সোজা বোল্ড প্যাভিলিয়নের পথ ধরান তাসকিন। বিপিএলে অভিষেকে করেন ২১ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় টর্নেডো ৩৪ রান। পরক্ষণে সময়ের দাবি মেটাতে পারেননি মোহাম্মদ মিথুন ও নাহিদুল ইসলাম। দুজনেরই শিকারী তাসকিন। মুহূর্তের মধ্যে এ পেসার ৪ উইকেট তুলে নিলে খেলা জমে ওঠে। দুদলেররই জয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত পারেনি সিলেট, পেরেছে রংপুর। সহজেই তা সম্ভব করেছেন ফরহাদ রেজা। শেষদিকে মাত্র ৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় হার না মানা ১৮ রানে ক্যামিও খেলে দুর্দান্ত জয় এনে দেন তিনি। তাকে স্ট্রাইক দিয়ে সহযোগিতা করেন মাশরাফি। অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ৬ রানে। দুজনের সুবাদে মাত্র ৩ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে উত্তরবঙ্গের দলটি। নিজেকে যেন হারিয়ে খুঁজছিলেন সাব্বির রহমান। খেলছিলেন বিপিএলের শুরু থেকেই। তবে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। মাঝে মধ্যে আভাস দিলেও ইনিংসটা বড় হচ্ছিল না। অবশেষে জ্বলে উঠেছিল তার ব্যাট। তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন জোগান নিকোলাস পুরান। দুজনে তোলেন রানের ঢেউ। তাতে রংপুরকে ১৯৫ রানের টার্গেট দেয় সিলেট। শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ফলে আগে ব্যাট করতে নামে ডেভিড ওয়ার্নারের সিলেট সিক্সার্স। অবশ্য শুরুটা আশাব্যঞ্জক হয়নি সিলেটে। ইনিংসের ভূমিকাতেই মাশরাফির শিকার হয়ে ফেরেন লিটন দাস। পরে আফিফ হোসেনকে নিয়ে খেলা ধরার চেষ্টা করেন সাব্বির রহমান। ভালোই খেলছিলেন তারা। তবে হঠাৎই ছন্দ হারান আফিফ। রাইলি রুশোর অসাধারণ থ্রোতে ব্যক্তিগত ১৯ রানে রানআউটে কাটা পড়েন তিনি। পরে ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন সাব্বির। দুজনের মধ্যে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। প্রথমে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া তোলেন তারা। জুটি বেঁধে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটান উভয়ই। তাতে বাধে বিপত্তি। তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে মাশরাফির বলে অ্যালেক্স হেলসকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১৯ রানে ফেরেন ওয়ার্নার। তাতে ভাঙে ৫১ রানের জমাট জুটি। ওয়ার্নার ফিরলে ক্রিজে এসে সাব্বিরের সঙ্গে জোট বাঁধেন নিকোলাস পুরান। জমে ওঠে তাদের জুটি। একপর্যায়ে রূদ্রমূর্তি ধারণ করেন তারা। ব্যাটতে তলোয়ার বানিয়ে রংপুর বোলারদের কচুকাটা করেন দুজনই। ছোটান রানের ফোয়ারা। তাতে উড়ন্ত গতিতে চ্যালেঞ্জিং স্কোরের পথে এগিয়ে যায় সিলেট। কোনোমতেই তাদের ঝড় থামানো যাচ্ছিল না। অবশেষে হার্ডহিটার সাব্বিরকে থামান শফিউল। স্তব্ধ হওয়ার আগে খেলেন ৮৫ রানের অনিন্দ্যসুন্দর ইনিংস। ৫১ বল মোকাবেলায় ৫ চারের বিপরীতে ৬ ছক্কায় এ ইনিংস সাজান তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ৪ উইকেটে ১৯৪ রানের পাহাড় গড়ে সিলেট। ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন পুরান। মূলত শেষদিকে সাব্বিরের চেয়ে বেশি তোপ দাগান তিনিই। মাত্র ২৭ বলে ৪ চার ও ৩ ছ্ক্কায় ৪৭ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেন ইনফর্ম এ ক্যারিবিয়ান ব্যাটার। সূত্র: যুগান্তর এইচ/১৭:৪৫/১৯ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2FCPWtX
January 19, 2019 at 11:47PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন