ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি- সব কটা জানালা খুলে দিয়ে আমরা যতবার বিজয়ের গান গাইব, ততবার অমরত্বের সুরের পাখি বুলবুল আমাদের প্রাগ্রসর মননে দোলা দিয়ে যাবেন। হারানো স্মৃতি বেদনাতে একাকার করে মন যদি ডাক দেয় নিশ্চিতই চুপি চুপি বুলবুল এসে গান শুনিয়ে যাবেন। আর আমাদের মন ভাঙা বেদনারও নিদান হবে। চোখ থেকে অশ্রুটুকু মুছে ফেলে পরম গৌরবে মুক্তিযোদ্ধা বুলবুলকে স্মরণ করব। যিনি দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হয়ে আমাদের জন্য সুরের ইন্দ্রজাল বিনির্মাণ করে গেছেন। যার বুকেই মানায় বহু ত্যাগে পাওয়া বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। গভীর শ্রদ্ধা গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক এবং প্রাজ্ঞ সংস্কৃতিজন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। মহান একাত্তরে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সবেমাত্র ১৫ বছরের কিশোর। সেসময় দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অমর ইতিহাসে নাম লেখান কিশোর বুলবুল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের সংস্কৃতির সেবায় মনোনিবেশ করেন। একের পর বিনির্মাণ করেন জীবনমুখী ও দেশাত্মবোধক সুরের মায়াবী মূর্ছনা। সব কটা জানালা খুলে দাও না, ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে, সেই রেললাইনের ধারে, সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য, মাগো আর তোমাকে ঘুমপাড়ানি মাসি হতে দেব না, একতারা লাগে না আমার দোতারাও লাগে না, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যিখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন, আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি, ও আমার মন কান্দে, আমার একদিকে পৃথিবী একদিকে ভালোবাসা, আমি তোমার দুটি চোখে দুটি তারা হয়ে থাকব, আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি, ওই চাঁদ মুখে যেন লাগে না গ্রহণ, একাত্তরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল, আট আনার জীবনসহ অসংখ্য গান বুলবুলের নিজস্ব ঘরানার অনন্য ইতিহাস। সেই ইতিহাসের পথে আগামী প্রজন্মের অনিবার্য গমনাগমনটা তাই অবধারিতই। সংগীতজগতে অবদানের জন্য আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সত্তরের দশকের শেষ দিকে মেঘ বিজলী বাদল ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি স্বাধীনভাবে গানের অ্যালবাম তৈরি করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। তাঁর সুরে ও সংগীতে বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদী, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরীর পাশাপাশি এ প্রজন্মের অনেকে গান গেয়েছেন। দেশপ্রেমিক বুলবুলের ভালোবাসার কথাগুলোও অনন্য অসাধারণ। তাই তো তিনি লিখতে পেরেছিলেন, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি/ এই চোখ দুটি মোর খেও না/ আমি মরে গেলেও তারে দেখার সাধ/ মিটবে নারে মিটবে না। বুলবুলের কথা ও সুরে শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠ গানটিকে অন্যরকম মোহময়তা দিয়েছিল। মাটির ঘরে একা না থাকতে পারার কবির কুহকীয় আকুতিতে আমাদের ভক্তস্রোতার আবেগী ভালোবাসা নিরন্তর বয়ে চলুক। যেই সুর আমাদের অন্তরাত্মা স্পর্শ করে চলেছে অবিরাম, সেই সুরের মায়াজালে গীতিকবি বুলবুল কখনোই একা নন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেই মানুষের প্রাণে বহমান, গোঁড়ামি ও কুসংস্কারমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সমাজচিন্তা যারা এগিয়ে নিতে চান, সমঅধিকারের ভিত্তিতে মানবিক দেশটাই যাদের আরাধ্য, তেমন মানুষের অন্তর নিশ্চিতই স্পর্শ করে থাকবেন আজন্ম লড়াকু আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। আগামীকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জানানো শেষ শ্রদ্ধায় নিশ্চিতই দেশের পতাকাতেই নির্মিত হবে মুক্তিযোদ্ধা বুলবুলের কফিন। থাকবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। হাজার মানুষের প্রার্থনায় উচ্চারিত হবে ঐশ্বরিক স্তুতি। যেই ঈশ্বর তাঁকে সুরের বিহঙ্গরূপে গড়েছিলেন। এমন গীতবিহঙ্গ এই বাংলাভূমে বারবার ফিরে ফিরে আসুক। আজ মহাপ্রয়াণকালে মরমিয়া গানের অনন্ত গগন থাকুক বুলবুলীয় সুরে সুধাময়। লেখক : সংবাদকর্মী, মাছরাঙা টেলিভিশন।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2Ri7E7G
January 28, 2019 at 04:54PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন