ঢাকা, ২০ জানুয়ারি- আমি খুবই বিরক্ত। সকাল থেকে ফোনের যন্ত্রণায় আছি। সবার একটাই প্রশ্ন, বিয়ে করলাম, কাউকে কিছুই জানালাম না। গত বছরের মে মাসেবলেছিলেন ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় তারকা শবনম ফারিয়া। বছর শেষে জানা গেল, তিনি ঠিকই বিয়ে করেছেন, কিন্তু একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়, তাই ওই সময় তা প্রকাশ করতে চাননি। নতুন বছরের শুরুতে সংগীতশিল্পী সালমা জানান, তাঁর পরিবার থেকে পাত্র খোঁজা হচ্ছে। এ বছরই তিনি বিয়ে করবেন। কিন্তু ১৭ জানুয়ারি রাতে ঢাকার এক রেস্তোরাঁয় সংবাদকর্মীদের ডেকে সালমা জানান, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর তিনি বিয়ে করেছেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে তাঁদের বিয়ে হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশের অভিনয় ও সংগীত জগতের দুজন তারকার বিয়ের খবর এভাবেই জানা গেছে। গোপনে করা বিয়ে গোপন না থাকায় পরে নিজে থেকে ঘোষণা দেন তাঁরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করেন শবনম ফারিয়া। তাঁর স্বামী হারুনুর রশীদ অপু একটি বেসরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি তাঁদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে। সেখানে আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি অভিনয়, গান আর চলচ্চিত্রজগতের বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাবেন তিনি। বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে হবে গায়েহলুদ, মেহেদি উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় তারকাদের মধ্যে আরেকটি বিয়ের খবর চাউর হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেউ তা স্বীকার করছেন না। যাঁদের নিয়ে বিয়ের এই গুজব বা গুঞ্জন, তাঁরা হলেন পরিচালক আদনান আল রাজীব ও মডেল-অভিনয়শিল্পী মেহজাবীন। ফেসবুকে মেহজাবীন ও রাজীবের ছবি ঘুরছে অনেক দিন থেকেই। আদনান আল রাজীবের মতে, ছয় বছর ধরেই মাঝেমধ্যে এমন খবর আসছে। শোনা কথায় কান দিতে নেই। প্রেম না বন্ধুত্ব অথবা বিয়ে, এসব নিয়ে এখন আলোচনা কিংবা মানুষকে জানানোর কিছু নাই। জানা গেছে, বিয়ের খবর প্রকাশিত হয়ে যাবে, এই আশঙ্কা থেকে সংবাদকর্মীদের ডেকে নিয়ে ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় আগেভাগে তা জানিয়ে দেন সালমা। সেখানে তিনি জানান, ৩১ ডিসেম্বর দুই পরিবারের কয়েকজনের উপস্থিতিতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এটি সালমার দ্বিতীয় বিয়ে। তাঁর এবারের বর ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের সানাউল্লাহ নূরে সাগর, ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী। দুই পরিবারের সম্মতিতেই তাঁদের বিয়ে হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর তাঁর বাসায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বামী সানাউল্লাহ আবার লন্ডনে ফিরে গেছেন। চার মাস পর তাঁর স্বামী বার অ্যাট ল শেষ করে দেশে ফিরবেন। স্বামী দেশে ফিরলে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। একেবারে নীরবে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন সিয়াম আহমেদ। দীর্ঘদিনের প্রেমিকা অবন্তীর বারিধারার বাড়িতে গোপনে গায়েহলুদ হয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে কয়েকটি আলোকচিত্র চলে যায় ফেসবুকে। এরপরও এ সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক তা স্বীকার করতে চাননি। বিয়ের খবর গণমাধ্যমে আসুক, এটা যেন মানতেই পারছিলেন না সিয়াম। তাঁর বক্তব্য ছিল, আমরা একেবারে ঘরোয়াভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করছি, তাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হোক, চাই না। এদিকে অভিনয়শিল্পী মমও বিয়ে করে সংসার করছেন একজন চলচ্চিত্র ও নাট্য পরিচালকের সঙ্গে। বিয়ের বিষয়টি প্রকাশিত হোক, তা দুজনের কেউই চান না। সম্প্রতি প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এই অভিনেত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যা রটে তার কিছুটা তো বটে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমামের সঙ্গে দাম্পত্যজীবনের ৫৩ বছর পার করছেন অভিনয় ও নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান। দুজন তাঁদের ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবন দারুণ সমন্বয় করে চালিয়ে যাচ্ছেন সেই শুরু থেকে। তারকাদের গোপনে বিয়ে করার বিষয়টিকে পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করেছেন তিনি। আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে লায়লা হাসান বলেন, বিয়ে দুজন মানুষের একটি সুন্দর সম্পর্কের সূচনা। একটা সুন্দর সম্পর্ক কখনো গোপন কিংবা মিথ্যা দিয়ে শুরু হওয়া উচিত না। যে কারও বিয়ের খবর শুনলেই সবাই কিন্তু দোয়া করে, শুভকামনা জানায়। এটা ঠিক যে অনেকে ভাবেন, বিয়ের পর তার জনপ্রিয়তা কমে যাবে। আমি মনে করি, এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। যাঁর যোগ্যতা আছে, সে বিয়ের আগে কিংবা পরে, সব সময়ই ভালো করবে। বিয়ের পর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার বিষয়টি অজুহাত ছাড়া আর কিছু না। লায়লা হাসান আরও বলেন, নাচ, গান আর অভিনয়ের অনেকই বিয়ের পর আরও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। আবার কেউ তো বিয়ের পর দর্শকের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। দেশের বাইরে তাকালে এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ দেখতে পাই। খুব বেশি পেছনে না, আমাদের অভিনয় ও গানের জগতে এখন যাঁরা দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিবাহিত। তাঁরা কিন্তু দর্শকের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যও। একটা বন্ধন, একটা সুন্দর সম্পর্ক। আমার যদি জনপ্রিয়তা থাকে, যোগ্যতা থাকে, অভিনয় করতে পারি, গান গাইতে পারিতাহলে দর্শক আমাকে গ্রহণ করবে না কেন? বেশির ভাগ তারকা নার্সিসিজমে (আত্মপ্রেমে) ভোগেন। সুচিত্রা সেন শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর চেহারা পরিবার ছাড়া কাউকে দেখাতে চাননি। তারকারা এমন একটা ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চান, যা সব সময় মানুষ পূজা করবে। উদগ্রীব হয়ে থাকবে। বললেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, তারকাদের বিয়ের খবর শুনে ভক্তরা অনেক খুশি হন। অনেক তারকার ধারণা, শুধু বিয়ের কারণে তাঁদের প্রতি ভক্ত কিংবা সাধারণ দর্শকের আকর্ষণ ও আগ্রহ কমে যাবে। অবিবাহিত থাকলে তাঁদের প্রতি আকর্ষণ থাকবে অনেক বেশি। সেই আকর্ষণ তাঁরা নিজেদের প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এই কারণে বিয়ে করে ঝুঁকি নিতে চান নাআমার কাছে এমনটাই মনে হয়। তবে আমি বলব, বিয়ের কারণে তারকার জনপ্রিয়তা মোটেই হারায় না। যাঁরা বিয়ে করেছেন এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। তাই গোপনে বিয়ে নয়, সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করা উচিত। তাজুল ইসলামের মতে, বিয়ের কারণে তারকাদের ভক্তরা অনেক খুশি হন। সুন্দর জীবনসঙ্গী নিয়ে প্রিয় তারকা ভালো সময় পার করছেন, এটা দেখতেই ভক্তরা ভালোবাসেন। বিয়ের পর যদি তারকারা ভালো থাকেন, সেটা ভক্তদের জন্য অনেক বেশি অনুপ্রেরণার। বিয়ে করে সুন্দর জীবন যাপন করছেন, এটা ভক্তদের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে। আমাদের সমাজে অনেকেই তারকাদের নিজেদের আদর্শ মনে করেন। এমএ/ ১০:৩৩/ ২০ জানুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2T6MATo
January 21, 2019 at 04:41AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top