কলকাতা, ২১ জানুয়ারি- সামান্য তিন অক্ষরের একটা নতুন বাংলা শব্দ ডিম্ভাত। বাঙালির অতি পরিচিত ডিমের ঝোল আর ভাতের চিরচেনা পদটিকেই এই অভিনব শব্দবন্ধে বর্ণনা করা হচ্ছে - আর গত কয়েকদিন ধরে কলকাতা-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এই ডিম্ভাত নিয়ে চলছে তুলকালাম। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজনীতির সিরিয়াস আলোচনা - সর্বত্র আলোড়ন ফেলা এই ডিম্ভাত শব্দটির উৎপত্তি একটি রাজনৈতিক দেওয়াল লিখন থেকে। গত ১৯ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে দেশের অন্তত বাইশটি বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে এক বিশাল সমাবেশ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ওই সমাবেশে মানুষকে টানার জন্য রাজ্যের নানা জায়গায় চোখধাঁধানো প্রচার চালানো হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গেরই কোনও এক জায়গায় দেওয়ালে ভুল বানানে লেখা হয়েছিল : ১৯শে জানুয়ারী বিগ্রেড চলো। তার নিচে ছোট করে আরও লেখা ছিল মেনু: ডিম্ভাত। কোথায় লেখা হয়েছিল ওই দেওয়াল, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত হওয়ার আগেই ওই ছবিটি হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুক-টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে ঝড়ের গতিতে। নিমেষের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় ডিম্ভাত। পশ্চিমবঙ্গে যখন বড় বড় রাজনৈতিক সমাবেশের অনুষ্ঠিত হয়, তখন তাতে যোগ দিতে আসা লোকজনকে সচরাচর দুপুরের খাওয়ানোরও দায়িত্ব নিয়ে থাকে আয়োজক রাজনৈতিক দল। এটা ওই রাজ্যের খুব পুরনো সংস্কৃতি। বামপন্থীরা যখন টানা চৌত্রিশ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় ছিলেন, তাদের ব্রিগেডের সমাবেশে প্রায় অপরিহার্য অনুষঙ্গ ছিল মাছভাত। তখন রাজ্যের দূরদূরান্ত থেকে কলকাতার ব্রিগেডে আসতেন মানুষজন। সভায় নেতাদের বক্তব্য শুনে, তারপর মাছভাত খেয়ে ও শহরে চিড়িয়াখানা-জাদুঘর ইত্যাদি দেখে তারা আবার গ্রামে-মফস্বলে ফিরে যেতেন। অনেকে সে সময় রসিকতা করে বলতেন, মার্ক্সবাদ নয়, গ্রামবাংলা থেকে মানুষ আসলে না কি ব্রিগেডে যোগ দিতে আসে মাছভাতের আকর্ষণে! ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস যখন রাজ্যের ক্ষমতায় আসে, ততদিনে রাজনৈতিক সমাবেশে অবশ্য ফুড প্যাকেটের রেওয়াজ চালু হয়ে গেছে। ওই সব প্যাকেটে অবশ্য মাছভাত নয়, বরং মটন বিরিয়ানি, কোর্মা বা চিকেন কষার মতো খাবারদাবারই বেশি থাকত। কিন্তু রাজনৈতিক দলের মিটিং-মিছিলে খাওয়াদাওয়ার বিলাসিতা নিয়ে লেখালেখি আর সমালোচনা শুরু হওয়ার পরই মমতা ব্যানার্জির দল আবার সচেতনভাবেই ফিরে গেছে বাঙালির সহজ, শস্তা আর সাদামাটা মেনুতে। আর সে কারণেই গত শনিবার ব্রিগেড সমাবেশে বিরিয়ানি-মটন চাপ নয়, মেনু ছিল সেই আদি ও অকৃত্রিম ডিমের ঝোল ও ভাত। শুধু বানানটাই ছিল নতুন - ডিম্ভাত। দুদিন হল ব্রিগেডের সেই সমাবেশ মিটেও গেছে, কিন্তু ডিম্ভাত নিয়ে বাঙালির আলোচনা-সমালোচনা-তর্কবিতর্কের ঝড় কিন্তু থামছে না। সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা যাচ্ছে এই শব্দটি নিয়ে নানা সৃষ্টিশীলতা। বিখ্যাত কবিতার পংক্তিকে বিকৃত করে কেউ কেউ বলছেন, ব্রিগেডের সমাবেশে ভারতীয় রাজনীতির অনেক রথী-মহারথী এলেও আসল অন্তর্যামী কিন্তু ছিলেন এই ডিম্ভাত। জনৈক অনিমেষ ঘোষ টুইট করেছেন, আজকের ব্রিগেডের ম্যান অব দ্য ম্যাচ ডিম্ভাত। লোক টানার ক্ষমতায় মাইকেল জ্যাকসন বা জাস্টিন বিবারকেও অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে ডিম্ভাত - নানা ধরনের মিম করে অনেকে সেই দাবিও করছেন। ইদানীং জনপ্রিয় হওয়া টেনইয়ারচ্যালেঞ্জের ভাবনাকে ধার করে মমতা ব্যানার্জির সমালোচকরা আবার বলছেন, দশ বছর আগে তিনি সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এখন দিচ্ছেন ডিম্ভাতের! ঋজু মিত্র নামে মুখ্যমন্ত্রীর এক অনুগামী আবার টুইট করেছেন, দেখলেন আমাদের #মমতা_বন্দ্যোপাধ্যায়_দিদির #ক্ষমতা. তার এক ডাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ জমায়েত হয়। আর হ্যাঁ যারা ওই #ডিম্ভাত নিয়ে ট্রোল করছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি সবাই খাবার লোভে আসে না, #আবেগ_ভালোবাসা বলেও একটা মনের টান হয়! আর এই তর্কবিতর্কের মধ্যেই হ্যাশট্যাগ ডিম্ভাত (#ডিম্ভাত) যথারীতি আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। ইতোমধ্যে শনিবারের ব্রিগেডের সমাবেশে যোগ দেওয়া অনেক নেতাই তাদের নিজ নিজ রাজ্যে ফিরে গিয়ে মমতা ব্যানার্জির প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনার প্রশ্নে এখন বেসুরো গাইতে শুরু করেছেন। তাদের ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে বিজেপি নেতারাও ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, ডিম্ভাত খেয়ে গিয়ে এখন বেইমানি? বাঙালির সাহিত্য-সৃষ্টিশীলতা বা কবিতার দুনিয়াতেও এরই মধ্যে ছায়া ফেলেছে ডিম্ভাত। ডিম্ভাত নামের কবিতায় এরই মধ্যে সম্ভবত এই শব্দটির সারকথা বলে ফেলেছেন কবি ও অধ্যাপক তপোব্রত ভাদুড়ি - যার অংশবিশেষ এরকম : ভালোবাসার রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে তুমুল ভয় মানুষ ভীষণ বদলে গেছে - খিদে নিয়েও খিল্লি হয়। কে-ই বা জানে তলায় তলায় কে খায় ভাতে কীসের ডিম? পার্টি বড়ো। আর কিছু না, জেনে রাখুন। অত: কিম? এভাবেই গরম ডিম্ভাত ও নিছক রাজনীতির গল্পেই আপাতত কিছুদিন ধরে মজে আছে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি। এমএ/ ০৭:৩৩/ ২১ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2MnbjAa
January 22, 2019 at 01:46AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন