লন্ডন, ১৯ জানুয়ারি- যুক্তরাজ্যে দিন দিন বড় হচ্ছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কারণে পুরো যুক্তরাজ্যেই ছড়িয়ে পড়ছেন বাংলাদেশিরা। এরমধ্যে দুই তিন প্রজন্ম আগে বিলেতে থিতু হয়েছেন এমন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকের সংখ্যাও এখন কম নয়। মনের ভেতরে তাদের বাংলাদেশ থাকলেও আচার-আচরণ, কৃষ্টি, সংস্কৃতিতে স্থানীয় কিংবা বৈশ্বিক সংস্কৃতিকেই ধারণ করেন বেশিরভাগই। এর প্রভাব পড়ছে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও। ফলে উন্নত জীবনযাপন করতে গিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিয়ের অনুষ্ঠানেও দিন দিন বাড়ছে আভিজাত্যের চমক। সব ঝামেলা ঝক্কি থেকে মুক্ত হতে পুরো দায়িত্ব তারা দিয়ে দিচ্ছেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে। তবে চোখ ধাঁধানো আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন জীবন শুরুর পর দীর্ঘকাল ধরে এই খরচের দায় বহন করতে হচ্ছে বর-কনে বা তাদের পরিবারকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর দায় বরের কাঁধে চাপে এবং তা থেকে অনেক পরিবারে তৈরি হচ্ছে দাম্পত্য কলহ। অনেক সময় তা বিয়ে বিচ্ছেদের কারণও হয়ে দাঁড়াচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটা করে বিয়ের আয়োজন করলেও ব্রিটেনের প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নিবন্ধন করে বিয়ে দেওয়ার চেয়ে এখনও ধর্মীয় রীতি অনুসারে নিকাহর আয়োজনই বেশি হয়ে থাকে। ফলে এ ধরনের বিয়ের কোনও তথ্য ব্রিটিশ ম্যারিজ রেজিস্ট্রারের হিসাবে তালিকাভুক্ত থাকে না। ফলে এই কমিউনিটিতে ঠিক কতগুলো বিয়ে হচ্ছে, আবার কতগুলো দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতাদের বিভিন্নজনের দাবি, আগের তুলনায় ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের সংসার জীবনের গেরো এখন আর তেমন শক্ত নয়। তুচ্ছ ঘটনায়, এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানে কেন বাড়তি ব্যয় করা হয়েছে কিংবা কেন এই ঋণ বর বা তার পরিবারকে দীর্ঘসময় টানতে হবে, তা নিয়ে ঝগড়া-কলহে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা অহরহই ঘটছে। ব্রিটেনের বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ভেন্যু মালিক ও ক্যাটারারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এখন এক একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গড়ে কমপক্ষে ত্রিশ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৪ লাখ টাকা) খরচ হয়। এমনকি তিন লাখ পাউন্ড (৩ কোটি ৩২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা প্রায়) পর্যন্ত অর্থ খরচের নজিরও কম নয়। তারা জানিয়েছেন, লন্ডনে বাংলাদেশি বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে বাঙালি ওয়েডিং ফেয়ারসহ নানা ধরনের ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এমন ব্যবসায়িক অনুষ্ঠান দেখে মানুষ জাঁকজমক আয়োজন করতে প্রলুব্ধ হচ্ছেন। চাহিদা থাকায়, বিয়ের হল ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায় এখন ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা। একজন কমিউনিটি হল মালিক জানান, একমাত্র বিয়ের অনুষ্ঠানেই এখন বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ খরচে পিছপা হন না, তারা এমনকি দামাদামিতেও যান না। এ সেক্টরে বাকির ব্যবসা নেই বললেই চলে। এ কারণে বিয়ের ফার্নিচার থেকে শুরু করে হানিমুনের হলিডে বুকিং, প্রি ওয়েডিং ভিডিওগ্রাফি সবকিছু এক প্যাকেজে বেচতে আগ্রহী ব্যবসায়ীরা। ব্রাইডবুক ইউকের ২০১৮ সালে পরিচালিত জরিপ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রিটেনে বিয়ের গড় ব্যয় ৩০ হাজার ৩৫৫ পাউন্ড। আর আশিয়ানার পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, ব্রিটেনে বাংলাদেশি, ভারতীয়,পাকিস্তানি কমিউনিটিতে এক একটি বিয়েতে গড়ে ব্যয় হয় ৫০ হাজার পাউন্ড (প্রায় সাড়ে ৫৫ লাখ টাকা)। অন্যদিকে, কস্ট হেলপারের তথ্য অনুসারে, ব্রিটেনে দেশি ওয়েডিং নামে পরিচিত এসব বিয়ের অনুষ্ঠানে ওয়েডিং প্ল্যানাররা শুধু অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়ে ফি নেন গড়ে দেড় হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় এক লাখ সত্তর হাজার টাকা। অন্যদিকে, ব্রিটেনের অফিস ফর ন্যাশন্যাল স্ট্যাটিসটিকসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ব্রিটেনে আইনগতভাবে বিয়ে বিচ্ছেদের সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৬৬৯টি। উল্লেখ্য, ইসলামিক রীতিতে মসজিদের মাধ্যমে বিয়ে বিচ্ছেদের সংখ্যা অনেক ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হয় না। ২০১৭ সালে ব্রিটেনে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, এক হাজার মুসলিম নারীর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই ইসলামি রীতিতে নিকাহের মাধ্যমে বিবাহিত। অর্থাৎ, ব্রিটিশ আইনে তাদের বিয়ে নিবন্ধিত নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, বিয়েতে জাঁকজমকের সংস্কৃতি এখন বিশ্বজুড়েই বিদ্যমান। তবে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত বিষয়গুলো পৃথক হলেও কিছু আয়োজন ও পরিবেশনের চর্চা এখন বিশ্বজুড়ে প্রায় একইরকম। কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা, কার্ড ছাপানো, বিয়ের মঞ্চের সজ্জা, আমন্ত্রিতদের খাবার পরিবেশন, গাড়ি ভাড়া করা ইত্যাদি দায়িত্ব দেশ-বিদেশের সবাই এখন সুনির্দিষ্ট ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির হাতে তুলে দিতে চান। বিয়ের খরচের একটা বিশাল অংক বাড়ে এখানেই। যদিও ইসলামি বিবাহ রীতি অনুযায়ী মসজিদে গিয়ে বিয়ে পড়ানো এবং খোরমা খেজুর দিয়ে আপ্যায়ন সুন্নত। তবে বিলেতে তো বটেই, বাংলাদেশেও এমন সাধারণ বিয়ের চল এখন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতেও কমে গেছে। তাছাড়া সমাজে বসবাস করার কারণে কিছু বিষয় তো মানতেই হয়। কিন্তু ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়ার সময় পরিবারের কারও ইচ্ছা, আগ্রহ বা আত্মীয়-স্বজনদের চাপে লোক দেখানো অনেক কিছু করতে বাধ্য হন বর বা তার অভিভাবকরা। এতে বিয়ের জাঁকজমকের সঙ্গে মোট খরচ আরও বেড়ে যায়। তিনি আরও জানান, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের দেখাদেখি বাংলাদেশিদের মধ্যে বিয়েতে অতিরিক্ত জাঁকজমকের অনুসরণ তৈরি হয়েছে। তবে অন্যান্য এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটিতে এমন খরচ বাহুল্যের সংস্কৃতি যুক্তরাজ্যে এখন আর তেমন নেই। শ্রীলঙ্কা ও সোমালীয়সহ বহু কমিউনিটির মুসলমানদের মধ্যে মসজিদে বিয়ে পড়ানোর সংস্কৃতি এখনও চালু রয়েছে। তবে মসজিদে কেবল সুন্নতি বিয়ের পরিসরকে এ দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাঙালিরা বেছে নেন নিজেদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে। ব্রিটেনের বড়লেখা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ফয়সল রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা যখন দুই যুগ আগে বিলেতে আসি তখনও এ অবস্থা ছিল না। এখন বিলেতের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এক একটি বিয়েতে গড়ে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার পাউন্ড খরচ হচ্ছে। বিয়ের এক একটি লেহেঙ্গার দাম তিন থেকে চার হাজার পাউন্ড। বর-কনের জন্য আগে লিমোজিন গাড়ি ভাড়া করার প্রবণতা থাকলেও এখন ভাড়া করা হচ্ছে হেলিকপ্টার। কে কাকে অপব্যয়ের বাহুল্যে ছাড়িয়ে যাবেন, এ ধরনের যেন প্রতিযোগিতা চলছে। ফয়সল রহমান আরও বলেন, মাস দুয়েক আগে একটি বিয়েতে গিয়েছিলাম। কনে সিলেটের একজন এমপির ভাগ্নি। ওই বিয়েতেও প্রায় এক লাখ পাউন্ড (কোটি টাকার বেশি) খরচ করা হয়। কিছু দিন আগে শুনলাম বিয়েটি ভেঙে গেছে। ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রবীণ নেতা কে এম আবু তাহির চৌধুরী জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে একটি বিয়েতে গেছি। যেখানে বরের খরচ হয়েছে ৩০ হাজার পাউন্ড। আর কনে একাই খরচ করেছেন ৩৫ হাজার পাউন্ড। তারা পূর্বপরিচিতও ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলো, বাসর রাতেই বিয়েটি ভেঙে গেছে। আরেকটি বিয়েতে ছেলেমেয়ের মধ্যে দুই বছরের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিয়ের জন্য ২০ হাজার পাউন্ড লোন তুলে ছেলেটিকে দেয়। কিন্তু ওই বিয়েও দুই মাস না পেরুতেই ভেঙে গেছে। ব্রিটেনে আমাদের কমিউনিটিতে এখন পারিবারিক-সামাজিকভাবে যত বিচার সালিশ হয়, তার শতকরা নব্বই শতাংশ স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক কলহজনিত। আর দ্বন্দ্বের একটি মূল কারণ টাকা। তিনি বলেন, আর্থিকসহ নানা কারণে অনেকে মা-বাবার লাশ দেশে না নিয়ে এ দেশে দাফন করেন। অথচ বিয়ের অনুষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে পিছপা হন না। শুধু পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বা অমুক আত্মীয় খরচ করছেন, আমাদেরও করতে হবে- এমন মনোভাব এই বিপুল অর্থের অপচয়ের জন্য দায়ী। ভুক্তভোগী পূর্ব লন্ডনের ইলফোর্ড এলাকার এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি তরুণ জানান, নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানে ৬০ হাজার পাউন্ড ব্যয় করেছিলেন তিনি। সে খরচের টাকার অর্ধেকই ছিল চড়া সুদের ক্রেডিট কার্ডের লোন। অথচ সংসারের মেয়াদ ছিল তিন দিন। তিন দিন পরই আলাদা হয়ে যান তারা। কিন্তু, সেই দেনার দায় থেকে এখনও তিনি মুক্ত হতে পারেননি। তিনি বলেন, বর-কনের অনেকে এ বিশাল অর্থের জোগান দেওয়ার জন্য ক্রেডিট কার্ড থেকেও লোন নেন চড়া সুদে। এ বিশাল বাড়তি দেনার মাসিক কিস্তির বোঝা সংসার জীবনের শুরুতেই ভুল বোঝাবুঝি ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। ব্রিটেনে সংসার ভাঙার এটিও একটি বড় কারণ। চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জুবায়ের বাবু এই বিষয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, বিলেত প্রবাসীদের প্রায়ই অসম প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা যায়। আগে ছিল দেশে ঘরবাড়ি তৈরি করার ব্যাপারে এক ধরনের প্রতিযোগিতা। এখন নতুন করে শুরু হয়েছে ছেলেমেয়েদের বিয়ের অনুষ্ঠানের জাঁকজমক নিয়ে আর একটি ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা। সর্বনাশা এই প্রতিযোগিতায় এসে অনেকে ব্যাপক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এ ধরনের প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এগুলো নতুন প্রজন্মের জন্য সর্বনাশ বয়ে নিয়ে আসছে। নিজের আয়-ব্যয়ের হিসাব না মিলিয়ে বড় অংকের টাকা খরচ করে বিয়ের আয়োজন করছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কমিউনিটি এবং নববিবাহিত দম্পতিরা। এই সর্বনাশা প্রতিযোগিতা অবশ্যই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। লন্ডনে বিয়ের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান নিকাহ-এর কর্ণধার নাহিদ জায়গিরদার এ প্রতিবেদককে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের বাড়তি জাঁকজমকে দেনার দায় পরবর্তীতে সংসারে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বহু বিয়ের অনুষ্ঠান আমি করেছি, যেখানে বিয়ের দুদিন পর বর বা কনে পক্ষ আমাদের জানান, বিয়ের ভিডিও ও স্টিল ফটোতে শুধু তার পক্ষের লোকজনের ছবি দিয়ে অন্য পক্ষের সব ফেলে দিতে হবে। তখন আমরা বুঝে নিই, সংসারটা আর টিকলো না। তিনি আরও বলেন, ব্রিটেনে অন্যান্য এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটির মতো বাংলাদেশিদের আয়-রোজগারও হঠাৎ করেই বাড়েনি। বরং বহু ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে। তারপরও দেখা যায়, কমিউনিটিতে শুধু শো-অফের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পরিবার, স্বজন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিয়েতে খরচের বাহুল্য নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমাদের সময়ের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম বলেন, এদেশে আমার বন্ধুবান্ধব পরিচিতজন বিয়েতে বিপুল ব্যয়ের করুণ পরিণতি ভোগ করছেন। আমার পরিচিত এক দম্পতির সংসার বিয়ের এক মাসের মাথায় ভেঙে গেছে। কারণ, বিয়েতে ঋণ করে উচ্চমাত্রায় খরচ করার ফলে তারা শুরুতেই অর্থসংকটে পড়েন। পারিবারিক চাহিদা মেটাতে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত দুজন দুজনের পথ বেছে নেয়। এমন আরও অনেক উদাহরণ আছে যে মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই কিংবা হানিমুন থেকে ফিরতে না ফিরতেই আলাদা হয়ে যাচ্ছেন তারা। যার মূল কারণ হচ্ছে, বিয়েতে শুধুমাত্র লোক দেখানোর নামে অতিমাত্রার খরচ। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন ভুক্তভোগী অভিভাবক কথা বলতে রাজি হন এ প্রতিবেদকের সাথে। তিনি বলেন, বিলেতে বিয়ে পড়াবার সময় কাজীরা এখন প্রথম দোয়া করেন যাতে সংসারটি টিকে থাকে। আসলে বিয়ের অনুষ্ঠানে লোক দেখাবার এ খরচের বাহুল্য প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা দরকার। আমার ছোট মেয়ের বিয়ের সময় নিজের ঘর রি-মর্টগেজ (ঘরের দেনা বাড়িয়ে) প্রায় চল্লিশ হাজার পাউন্ড খরচ করেছি। আমি পেনশনভোগী মানুষ, এছাড়া আমার কোনও উপায়ও ছিল না। কেন এত অর্থের ব্যয়- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুগের চাহিদা, পরিবারের সদস্যদের চাওয়া পূরণে, তাদের খুশি করতেই এসব করা। ব্রিটেনে আমাদের কমিউনিটিতে সাধারণত বিয়ের বড় খরচ বর-কনে নিজেরাই জোগান দেন। কিস্তু বিয়ের সময় আমার মেয়ের হাতে ভালো কাজ ছিল না। লন্ডনে কর্মরত ব্যারিস্টার শুভাশীষ রায় বলেন, বিলেতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ডিভোর্সের ক্ষেত্রে হিন্দু মুসলমানের হার আনুপাতিক হারে প্রায় সমান। ডিভোর্সের ক্ষেত্রে পাচঁটি কারণের যেকোনও একটি স্বামী বা স্ত্রী প্রমাণ করতে পারলে তিনি আইন অনুযায়ী ডিভোর্স পেতে পারেন। তবে এদেশে মুসলিম রীতিতে মসজিদের বিয়ে বা হিন্দুদের শাস্ত্রমতে সাতপাকের আনুষ্ঠানিকতার বিয়ের আইনি ভিত্তি সেভাবে নেই। সে কারণে বিয়ে ধর্মীয় মতে যেমন অনুষ্ঠিত হয়, সেগুলো সরকারি নিয়মে রেজিস্ট্রিও করতে হয়। কমিউনিটি নেতারাসহ সমাজকর্মী ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিয়েতে অপব্যয়ের এই হিড়িক প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো দরকার। এজন্য মসজিদের ইমামদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। লন্ডনের ক্রয়োডন শাহজালাল মসজিদের ইমাম শামিমুল ইসলাম বলেন, হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে বিয়ে যত কম আড়ম্বরপূর্ণ সেটি আল্লাহতায়ালার তত পছন্দনীয়। বিয়েতে অপব্যয়ের এ চলতি সংস্কৃতির ব্যাপারে সচেতন হতে ইমামরা জুমার খুতবাসহ সবখানেই কথা বলছেন। আর/১০:১৪/১৮ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2DjSye8
January 19, 2019 at 07:08AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন