ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি- আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন। জীবদ্দশায় বেশ ঘটা করেই পালন করা হতো এ কিংবদন্তির জন্মদিন। দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজন ও রাজ্জাক স্মরণে লিখেছেন তারই কনিষ্ঠপুত্র। আব্বার জন্মদিন তিনি বেঁচে থাকতে সবসময় এক রকম হতো, এখন অন্যরকম। তাকে ছাড়া এটা দ্বিতীয় জন্মদিন। আমরা পারিবারিকভাবে কিছু আয়োজনের চেষ্টা করছি। গতবারের মতো এবারও গরিব কিছু মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণ করা, কিছু কিছু জায়গায় চ্যারেটি করা ও এতিমখানা এবং মাদ্রাসার জন্য কিছু কন্ট্রিবিউশন করা এসবই থাকছে। এছাড়া আমাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের উপস্থিতিতে আসরের নামাজের পর আব্বার জন্য দোয়ারও ব্যবস্থা করেছি। আব্বা যখন আমাদের মাঝে ছিলেন তখন তার প্রতিটা জন্মদিনে রাত বারোটায় আমরা তাকে উইশ করতাম। তিনি সব সময়ই খুব জমজমাটভাবে তার জন্মদিন পালন করতেন। তার ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর, প্রডিউসারসহ সব বন্ধুবান্ধবদের দাওয়াত করার মধ্য দিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করতেন। আব্বার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে জন্মদিনের আগের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দিন পর্যন্ত আমাদের পরিবারের মধ্যে একটা আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হতো। বাবুর্চি আসছে রান্নাবান্না হচ্ছে, দেখা যায় অনেক মেহমান এসেছেন যারা আমন্ত্রিত নয়, তাদেরও আব্বা সাদরে গ্রহণ করতেন। এখন তো তিনি নেই, জন্মদিনে ওই হইহুল্লোড়ও আর নেই। আব্বার জন্মদিনে আমরা যখন তাকে উইশ করতাম তখন তার মুখের হাসিটা এখনও চোখে ভাসে। তিনি সবসময়ই বলতেন, কখনই মনের মধ্যে অহংকার আনবে না। মানুষের সঙ্গে মন থেকে মিশবে এবং কোনো ভেদাভেদ রাখবে না। কাজের মধ্যে কখনই চিটিং বা কম্প্রোমাইজ করবে না। নিজের শতভাগ দিয়ে কাজ করবে। জীবনে যত বড় হও না কেন অহংকার জিনিসটা কখনই মনের মধ্যে আনবে না। এবং আব্বা নিজেও সেটি করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। এত নাম, যশ, মানুষের ভালোবাসা আর উঁচু অবস্থানে থেকেও তার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ অহংকার ছিল না। কেউ কখনও বিপদে পড়ে সাহায্যের জন্য এলে তিনি কখনই ফিরিয়ে দিতেন না। সাধ্য অনুযায়ী মানুষকে সাহায্য করতেন। এছাড়া দরিদ্র মানুষকে সাধ্যমতো সাহায্য করতেন, কিন্তু কাউকে কোনো কিছুই জানাতেন না। আব্বা জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছেন। স্টার হওয়ার পরও মাঝে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও ভেঙে পড়েননি। উল্টো আমাদের আরও বলতেন, জীবনে লড়াই করতে হবে, চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। ঝড় আসবে, বিপদ আসবে কখনই ভেঙে পড়া যাবে না নিজের নিষ্ঠা আর সততা নিয়ে কাজ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমি আমার ভাইবোনদের তুলনায় তাকে অনেক বেশি কাছে পেয়েছি। আমার যখন ৪-৫ বছর তখন সৎ ভাই ছবির ডাবিং চলছে। তিনি আমাকে স্টুডিওতে নিয়ে যেতেন। সারা দিন বসে থাকতাম। সব সিনিয়র শিল্পীরা আমাকে আদর করতেন। আব্বা আমাকে চুল কাটাতে সোনারগাঁও হোটেলে নিয়ে যেতেন। আমি তার সঙ্গে বের হতাম বিভিন্ন খেলনা পাওয়ার আশায়। তিনি আমাকে নানা রকমের খেলনা কিনে দিতেন। একবার তিনি আমাকে কলকাতায় নিয়ে গেছেন। আমি একটা গাড়ি পছন্দ করেছি, কিন্তু আব্বা আমাকে সেই গাড়িটা কিনে দেবেন না। যা হয়, আদরের ছেলে একটু জিদ্দি হয়ে গিয়েছিলাম। তাই আমি আব্বাকে হোটেলের চাবি ছুড়ে মেরেছিলাম। চাবিটা দেয়ালে গিয়ে লাগল। তিনি তখন আমাকে বললেন, তুই একটা খেলনার জন্য তোর বাপকে মারতে গেলি! বলেই হাসতে হাসতে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে গাড়ি কিনে দিলেন। এ জিনিসগুলো এখন খুব ফিল করি। তিনি আমাদের কোনো চাওয়াই অপূর্ণ রাখেননি। আদরের পাশাপাশি তিনি শাসনও করতেন। একবার অষ্টম শ্রেণীতে আমার রেজাল্ট খুব খারাপ হল। তখন আমাকে সাত দিন শাস্তি হিসেবে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন। আব্বার কড়া নির্দেশ ছিল, যেখানেই থাকি না কেন মাগরিবের আগে বাসাতে থাকতেই হবে। আব্বার এ শাসনগুলো মনে হলেই এখন তার জন্য মন কেঁদে ওঠে। প্রফেশনালি বাবার মতো আমি কখনই হতে পারব না। তবে তার নীতি আদর্শ অনুযায়ী আমি নিজে চলার চেষ্টা করি। আব্বাকে নিয়ে আমাদের পারিবারিকভাবে বেশ কিছু পরিকল্পনা আছে। তিনি যেমন মানুষকে সহযোগিতা করতেন তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নামে ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সরকারের কাছে একটাই চাওয়া, সিনেমার মানুষ হিসেবে পঞ্চাশ বছর সময় অতিবাহিত করা এই মানুষটির কাজকর্ম পরবর্তী প্রজন্মমের কাছে তুলে ধরার জন্য জাতীয়ভাবে কোনো পদক্ষেপ যেন গ্রহণ করা হয়। অনুলিখন : আখন্দ জাহিদ এমএ/ ০৬:৪৪/ ১৭ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2TVdIEy
January 18, 2019 at 12:54AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন