স্কুল ‘ফাঁকি’ নেই ১০ বছর

শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ষড়ঋতু’র বারোমাসের কোন দিনই স্কুল বাদ না দেয়ার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন দেশের উত্তর সীমান্তের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমানুল্লাহ হক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এমনকি রোগ বালাইও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ফুলকুঁড়ি ইসলামিক একাডেমির দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও শহরের পুরাতন সিএন্ডবি ঘাট এলাকার মোজাম্মেল হক ও আয়েশা বেগমের সন্তান আমানুল্লাহর। ছুটি ছাড়া ১০ বছরের প্রতিদিনই স্কুলে উপস্থিত হওয়ার রেকর্ড গড়ায় আমানুল্লাহকে সোমবার সংবর্ধনা দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মহানন্দা নদীর তীর ঘেষে গড়ে উঠা মহল্লা পুরাতন সিএন্ডবি ঘাটের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমানুল্লাহ হক ৬ বছর বয়সে ভর্তি হয়েছিলেন বাড়ির সংলগ্ন ফুলকুঁড়ি ইসলামিক একাডেমিতে। দিনে দিনে বয়স গিয়ে ঠেকেছে ১৬’র কাছে। প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী এভাবে দশম শ্রেণীর হাজিরা খাতার পাতাজুড়ে অবাক করার মত রয়েছে আমানুল্লাহ সরব উপস্থিতি। দীর্ঘ এই দশ বছরের একদিনও ‘স্কুল ফাঁকি’ নেই তার। অসুস্থ্যতা তাকে কাবু করতে পারেনি স্কুল আসা প্রশ্নে। আর আত্মীয়স্বজনের বিয়ে কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানকে আমানুল্লাহ দিয়ে এসেছে দ্বিতীয় স্তরে। সর্বদায় প্রাধান্য পেয়েছে স্কুল। প্রতিদিনের উপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের শ্রেণী শিক্ষক থেকে শুরু করে দারোয়ান আর সকল শিক্ষার্থীই তাকে চেনে এক নামে।
নিয়মিত স্কুল যাবার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী আমানুল্লাহ মেধার ক্ষেত্রেও রেখেছেন শ্রেষ্টত্বের নজির। ভর্তির পর থেকেই এপর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণীতেই প্রথম স্থান অধিকার করেছে সে।
প্রতিদিনই স্কুলে আসা আমানুল্লাহ বলেন, ‘ বাড়ির পাশেই স্কুল। স্কুল খুললেই বাড়িতে আর মন টিকেনা। যতক্ষণ স্কুলে না যায় ভাল লাগেনা। প্রতিদিনই স্কুলের মাঠ, আম গাছ আর ক্লাসরুম যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। স্কুলের সময় হলেও চলে যাই স্কুলে’। আমানুল্লাহ জানান, স্কুলে যাবার তার চেষ্টার সঙ্গে কাজ করেছে মা বাবার উৎসহ। ভবিষ্যত ইচ্ছে কি এমন প্রশ্নের জবাবে আমানুল্লাহ বলেন, ‘ মা বাবার ইচ্ছে আমি যেন ডাক্তার হই। আর আমার ইচ্ছে বড় হয়ে যোগ দিবো প্রশাসন ক্যাডারে’।
আমানুল্লাহর পিতা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ ছেলের নিয়মিত স্কুলে যাবার বিষয়টি আমার কাছে গর্বের। খুব ভাল লাগে ছেলে যখন স্কুলে যায়। আসা করি এরপর সে নিয়মিত কলেজেও যাবে এবং মানুষের মত মানুষ হবে’।
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রিয় আমানুল্লাহ লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কাউটিং এর সঙ্গেও জড়িত। সে স্কুলের স্কাউট দলের সহকারী লিডার। কৃতি আমানুল্লাহকে সোমবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংবর্ধনা দিয়েছে। বিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে ‘নিয়মিত স্কুল যাওয়া আসায়’ তাকে দেয়া সংবর্ধনা পদক তুলে দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন।
মেধাবী এই শিক্ষার্থীর নিয়মিত স্কুলে আসাকে বিরল দৃষ্টান্ত মনে করছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। তারা দেশের অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর হাজিরা তালিকা খতিয়ে দেখে আমানুল্লাহকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ নিয়মিত স্কুলে আসার এমন নজির এই স্কুলেতো বটে অন্য কোন স্কুলে আছে বলে মনে হয় না। আমি প্রথম শ্রেণী থেকে তাকে নিয়মিত স্কুলে দেখেছি। একাধিকবার জ্বর ঠান্ডা নিয়েও স্কুলে এসেছে। মেধাবী এই ছাত্রটি আমাদের সবার ভাল লাগার ছাত্রে পরিণত হয়েছে’।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ৩১-০১-১৯


from Chapainawabganjnews http://bit.ly/2sYUjaA

January 31, 2019 at 05:56PM
31 Jan 2019

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top