জোহানেসবার্গ, ০৮ জানুয়ারি- দক্ষিণ আফ্রিকার নয় প্রদেশের একটি হচ্ছে জোহানেসবার্গ (ঘাউটেং)। জোহানেসবার্গের সবচাইতে বড় লোকেশন হচ্ছে সাউথ ওয়েষ্ট টাউনশিপ সংক্ষেপে সয়েটো। জনসংখ্যার দিক থেকে সাউথ আফ্রিকায় সয়েটো সবচাইতে জনবহুল এলাকা। প্রায় ২০০ কিলোমিটার আয়তনের এই এলাকাটিতে দেড় মিলিয়নের ও অধিক লোকের বসবাস। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যতম সয়েটোতে বাংলাদেশিসহ বিদেশির সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজার। দীর্ঘদিন থেকে বিদেশি নাগরিকেরা সয়েটোতে ব্যবসা-বানিজ্য করে আসছে। সেখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী কৃষ্ণাঙ্গ বা শ্বেতাঙ্গদের সাধারণত ছোটখাট কোনো ব্যবসা করতে দেখা যায় না। তাই সেখানকার বেশিরভাগ ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছে প্রবাসীরা। অন্যান্য বিদেশির পাশাপাশি এই এলাকায় বাংলাদেশিদের দোকান রয়েছে অন্তত ৬/৭ হাজার। জোহানেসবার্গের সবচাইতে অপরাধ প্রবণ এলাকার মধ্যে সয়েটো অন্যতম। চুরি,ডাকাতি,খুন,বিদেশিদের দোকানে হামলা ও লুটপাটসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা এখানে হয় না। বিশেষ করে প্রতি বছরেই কোনো না কোন অজুহাতে স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে মিউনিসিপালিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। এই সময় মিছিল মিটিং থেকে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় বিদেশিদের দোকানপাটে। এসব হামলাসহ নানা ঘটনায় গত দশ বছরে শুধুমাত্র সয়েটোতেই খুন হয়েছে বাংলাদেশিসহ অন্তত প্রায় ৩৫০ বিদেশি। উল্লেখ্য,গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে স্থানীয়দের এক শিশু ইথিওপিয়ান ব্যবসায়ীর দোকান থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার খেয়ে মারা যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল উত্তেজনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনা। এ ঘটনার সূত্র ধরে স্থানীয় সকল কমিউনিটি নেতৃবৃন্দরা একত্রিত হয়। পূর্বের নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী,বিদেশি ব্যবসায়ীদের সোয়েটোতে থাকতে দেয়া হবে কিনা এবং হোম আফেয়ার্সকে বিদেশী ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র সংক্রান্ত বিষয়ে মেমোরেন্ডাম দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করেছেন সোয়েটোর স্থানীয় কমিউনিটি নেতা, দোকান মালিক এবং স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গরা। তখন বিদেশিদের এ দেশে থাকতে না পক্ষে মত দিয়েছিল প্রায় ৭০ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ। এসময় হোম আফেয়ার্সকে বিদেশিদের কাগজপত্র যাচাই বাচাই করাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিলো। বিদেশিদের দোকানে মেয়াদ উওীর্ন ও ভেজাল খাদ্য দ্রব্য বিক্রি এবং এক সোমালিয়ান নাগরিকের গুলিতে এক স্কুলছাত্র নিহত হওয়ার অভিযোগে পুরো সয়েটোতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছিল প্রায় এক হাজারেরও বেশি বিদেশিদের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। হামলা ও লুহটপাটের শিকার হওয়া বাংলাদেশিসহ কোনো বিদেশি এখনও ফিরে যেতে পারেনি তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তারা আর ফিরে যেতে পারবে কিনা এই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ফলে সয়েটোতে বসবাসকারী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তবে প্রবাসী ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী একজন বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক এই সংকট ও সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের প্রতিনিয়ত যে সমস্যাগুলো পোহাতে হয় তা হলো; দোকান ডাকতি, অপহরণ, কৃষ্ণাঙ্গ বা অন্যদের হাতে খুন, ছিনতাই, পারমিট জটিলতা ইত্যাদি। কিছু সমস্যা এই দেশের সরকারি আইনের ভিত্তিতে হয়ে থাকে, যেমন পারমিট বা এসাইলাম সংক্রান্ত জটিলতা। তবে এই ক্ষেত্রে অনেকেই বলে দ্রুত কাগজ বের করা যায় এবং ব্যক ডেট দিয়েও নাকি পারমিট করতে পারে। আপনাদের বলি, এসব আসলে দালালদের মুখের মিষ্টি বাণী যা দিয়ে তাদের রুটিরুজি চালায়। ইতিমধ্যে অনেক প্রবাসী এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন। কিন্তু এদের অনেকেই দেশে গিয়ে আর ফিরে আসতে পারেনি। এর মূল কারণ হচ্ছে দালাল তাদের পাসপোর্টে চুক্তিভিত্তিক দুই বা তিন মাসের জন্য একটি স্টিকার লাগিয়ে দেয় এতেই তাদের হাতে আমাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু একবারও যাচাই করিনা আবার দেশ থেকে যথাসময়ে ফিরতে পারবো কিনা। জেনে রাখা ভালো, আমরা যে প্রক্রিয়ায় পারমিট করে থাকি সেটি আপাতত বন্ধ। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা প্রতিনিয়ত যে সমস্যায় আতঙ্কিত হয়ে উঠেছি তার নাম কিডন্যাপ। আর এই শব্দের সাথে এই দেশের কালো বা সাদা কেউ অতটা পরিচিত ছিলো না। কিছু বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানি এই জঘন্য ঘৃণিত কাজে লিপ্ত। তাই আমাদের চলাফেরা ও কথাবার্তায় সতর্ক থাকতে হবে। আর যদি কাউকে সন্দেহ হয়, তার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। একা চলার অভ্যাস পরিহার করতে হবে। কারো মিষ্টি কথায় তুষ্ট হয়ে পাশে এনে বসাবেন না।পৃথিবীর যত দেশে আমরা বাংলাদেশিরা বসবাস করছি হলপ করে বলতে পারি, অপ্রত্যাশিত এবং নির্মম খুন-হত্যার স্বীকার দক্ষিণ আফ্রিকাই বেশি, যা খুবই দুঃখের ও হতাশার। তার মতে, এই বিষয়ে আমাদের আরো কয়েকটি দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই দেশের কৃষ্ণাঙ্গদের আমরা অনেকে মানুষই মনে করি না। আমরা তো তাদের দেশে এসে তাদের সামনে ব্যবসা বানিজ্য করে নিজ দেশের ভাগ্য উন্নয়ন করছি, তাইনা! একটু ভাবুন আমাদের দেশে এভাবে কাউকে এমন সুযোগ করে দিতাম কি? আমি এই হত্যাকাণ্ডগুলোর কয়েকটি কারণ দেখতে পাই। যেমন গত কয়েকদিন আগে আমাদের দুই বাংলাদেশি ভাইকে নিউক্যাস্টেলে রাতের আঁধারে গলা কেটে জঘন্য কায়দায় হত্যা করেছে কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা। এর মূল কারণ হলো পণ্যের দরদাম ও বাজে ভাষায় কথা কাটাকাটি। তাই আমরা এমন কোনো আচরণ করবো না যাতে ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। সবশেষে ওই প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন,অনেক বাংলাদেশিদের দোকানে বিদেশি কর্মচারী কাজ করছেন। এটি দোষের কিছু না। বরং কম বেতনে আমরা লোক পাচ্ছি। তবে সতর্ক থাকতে হবে, ওই কর্মচারীরা যেনো তারা আপনার দূর্বল দিকগুলো না জেনে যায়। টাকা লেনদেন ও রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। দয়া করে ওইসব কর্মচারীদের রাতে সাথে নিয়ে ঘুমাবেন না। আর আপনাদের দোকানে অবশ্যই সেফটি এলার্ম এবং সিকিউরিটি নিশ্চিত করা জরুরি। আর/১২:১৪/০৮ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2C9rkF5
January 08, 2019 at 07:53PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন