বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলায় দিন দিন শিশুশ্রম বৃদ্ধি পাচ্ছেন। শিশুরা শ্রমের সাথে জড়িয়ে পড়ার কারণে শতভাগ শিশুকে শিক্ষা গ্রহনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে উপজেলার সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম। অথচ সরকার সবাকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই দিচ্ছেন। আর্থিক সমস্যায় থাকা পরিবারের সদস্যরা যাতে নিজেদের সন্তানদেরকে লেখাপড়া করান সেজন্য দিচ্ছেন উপবৃত্তি। তারপরও বৃদ্ধি পাওয়া শিশুশ্রম ভাবনায় পেলেছে উপজেলার সুশীল সমাজকে।
‘মকা, টেবলেট, টাইগার, মস্তান, রাজা, ভাগনা, বাদশা, গোন্ডা’সহ বিভিন্ন নামে পরিচিতি শিশুরা শৈশব থেকে শিক্ষার সাথে সম্পর্ক চিহ্ন করে কাজের সাথে বন্ধুন্ত গড়ে তুলে অনেকটা তাদের অশিক্ষিত পিতামাতার অতিরিক্ত লোভ ও টাকা আয়ের চাহিদার কারণে। এসব পিতামাতা কিংবা কাজের সাথে জড়িত থাকা শিশুদের ব্যাপারে প্রশাসনের উদ্যোগে কার্যক্রর কোন প্রদক্ষেপ গ্রহন করা না হলে তা বন্ধ হওয়ার পরিবর্তে আরোও বেড়ে যাবে বলে মনে করেন সচেতন সমাজ।
দেখা গেছে, লেখাপড়া না করেও বিশ্বনাথের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত শিশু শ্রমিকদের হিসাব-নিকাশে খুবই দক্ষ, আর যদি তারা শিক্ষার মহান আলোর ছোঁয়া পায় তবে দেশ ও জাতিকে তারা কতো কিছুই না দিতে পারে। তা আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউই বলতে পারবে না। অথচ লেখাপড়া না করে কাজের সাথে শিশুকাল থেকে জড়িয়ে পরার কারণে একসময় নিজের পিতামাতার দেওয়া নামটাও হারিয়ে ফেলে বাহারী সেই নামগুলোর কাছে। ফলে তাদের জীবনের শুরুটা হয় টোকাই হিসেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজের সাথে জড়িত হওয়ার সাথে সাথে এসব শিশুরা চুরি করা, ধুমপান করা ও ডেন্ডি’সহ বিভিন্ন প্রকারের মাদক সেবন এবং নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। অনেক শিশু বাস-টেম্পু-লাইটেসের হেলপার কিংবা এর মেকানিক, কেউ সরকারি-বেসরকারি চাকুরীজীবিদের সন্তান রাখার কিংবা ঘরগুচানোর কাজ করছে, কেউ চালাচ্ছে রিক্সা-টেলা-ভ্যান-ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, কেউবা বিক্রি করছে ভাঙ্গারী, কেউবা আবার নিচ্ছে বিভিন্ন দোকানে ফুটপরমাসের চাকুরী, কেউবা আবার ডুকে পড়ছে ভিক্ষাবৃত্তি’সহ সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্টতম কাজের দিকে। ভাঙ্গারী ব্যবসার সাথে জড়িত শিশুরা আবার আক্রান্ত হচ্ছে নানান রোগে।
বিশ্বনাথ বন্ধুসভার সভাপতি ডাঃ প্রবীর কান্তি দে পিংকু বলেন, নির্দিস্ট বয়সের পূর্বে শিশুরা কাজের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আর এজন্য অবশ্যই প্রথমেই দায়ী তাদের অভিভাবকরা। তবে দায় থেকে মুক্তি পাবে না আমাদের সমাজও। কারণ শিশুদেরকে শিক্ষার আলো দেওয়া আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
বিশ্বনাথের প্রবীন সাংবাদিক আবদুল আহাদ বলেন, বিশ্বনাথের শিশুশ্রম কমাতে আমাদের সকলের সন্বয়নে প্রদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। কারণ আমরা যাদের টোকাই হিসেবে মনে করি তাদের অনেকেই আবার ডেন্ডি’সহ নানান প্রকারের মাদক সেবন করে ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসা, চুরি করা’সহ নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।
প্রবাসী নজরুল ইসলাম সেবুল বলেন, অল্প বয়সে শ্রমিক হওয়ার কারণে প্রাপ্ত বয়সে এসব শিশুরা হারিয়ে ফেলছে তাদের কর্মশক্তি। ফলে তারাও বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদেরকে শিশুকালেই কাজের সাথে জড়িয়ে দিচ্ছে। আর দিন দিন এ প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জাতি হিসেবে আমরা হচ্ছি মেধা শূন্য ও শ্রম বাজারের একটি বড় অংশ।
শিক্ষক আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতি বছরের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম সোমবার’কে ‘শিশুশ্রম দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। প্রতি বছরই ‘শিশুশ্রম’ বন্ধের ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও এবং সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মুখ থেকে নানান পদক্ষেপ গ্রহনের গল্প শুনা যায়। কিন্তু বাস্তবে প্রতি বছরে গ্রহন করা প্রদক্ষেপগুলো অজানা কারনেই কাজে পরিণত না হয়ে ফাইল বন্ধি হয়েই থাকে মাত্র। আর তাই আমাদের সমাজে শিশুশ্রম কমার পরিবর্তে অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, শিশুদের কর্মস্থলের মালিক ও তাদের অভিভাবকদের সাথে কাউন্সিলিং এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সকলের সার্বিক সহযোগীতায় বিশ্বনাথের শিশুশ্রম কমানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এর পাশাপাশি শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকা শিশুদেরকে শিক্ষার আলোয় আনা হবে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://bit.ly/2QIqTa0
January 12, 2019 at 11:09PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন