ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি- সুরস্রষ্টা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) । শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানো শেষে তার লাশ নেয়া হবে এফডিসিতে। সেখানে বুলবুলের দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা তার মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। শয়ে শয়ে কালজয়ী বাংলা জনপ্রিয় গানের এ সুরকার, গীতিকার ও সংগীতশিল্পীর লাশ এখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে লাশ সেখানে নেয়া হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। গুণী এ শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে আগে থেকেই নানা পেশার অসংখ্য মানুষ জড়ো হন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে একসময় তার সঙ্গে কাজ করা সংগীত, চলচ্চিত্র অঙ্গনেরও অনেকে হাজির হয়েছেন। একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন। এ সময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বুলবুলের দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা শেষবারের মতো তাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শহীদ মিনারে ১২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানো শেষে লাশ নেয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। মসজিদ প্রাঙ্গণে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে তার প্রথম জানাজা। জানাজা শেষে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পেঅরেশনে (বিএফডিসি)। সেখানেও তার জানাজা হবে। এর পর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বুলবুলের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মরদেহ নেয়া হবে এফডিসিতে। সেখানে শ্রদ্ধা ও দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। বুলবুলের লাশ রাতে ছিল বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে। সকালে লাশবাহী গাড়ি শহীদ মিনারে গেলে তা গ্রহণ করেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। সেখানে রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা জানানো হয় এই মুক্তিযোদ্ধাকে। অসংখ্য বাংলা জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল মঙ্গলবার ভোররাতে রাজধানীর আফতাব নগরের বাসায় হার্টঅ্যাটাকে মারা যান। বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সংগীত ও শিল্পাঙ্গনে। তার অকালে চলে যাওয়া সহকর্মীদের কেউ মেনে নিতে পারছেন না। শোকে স্তব্ধ সবাই। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭৮ সালে মেঘ বিজলী বাদল ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গানের অ্যালবাম তৈরি করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনকচাঁপাসহ বাংলাদেশি প্রায় সব জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর গাওয়া বহু জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি। ১৯৭৬ সাল থেকে তার নিয়মিত গান করা। প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এ জনপ্রিয় শিল্পীর জন্ম ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায়। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বুলবুল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাইফেল হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রণাঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে বহু জনপ্রিয় গান লিখেছেন ও সুর করেছেন। এই দেশ আমার সুন্দরী রাজকন্যা, আয় রে মা আয় রে, উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম, সব কটা জানালা খুলে দাও না, মাঝি নাও ছাইড়া দে, ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে, সেই রেললাইনের ধারে, মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না-এমন বহু কালজয়ী গানের স্রষ্টা এ শিল্পী। তিনি প্রেমের জন্য লিখেছেন- আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, ভাড়া কইরা আনবি মানুষ, প্রেমের তাজমহলসহ আরও বহু জনপ্রিয় গান। ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জনক ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার ছেলে সামির আহমেদ। বুলবুল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এমএ/ ০০:২২/ ২৩ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2Ht5Poz
January 23, 2019 at 06:17PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন