তিবিলিসি, ১৫ জানুয়ারি- প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান ও প্রথম মুসলিম সিনেটরকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেট। সোমবার যখন শেখ রাহমান নামের এই সিনেটর শপথ নিতে যান তখন নানা দিক থেকে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় পরিণত হয়। জর্জিয়ার জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে তিনি শুধু প্রথম মুসলিম সিনেটরই নন, বরং একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কোনও অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত প্রথম কোনও বাংলাদেশি। শেখ রাহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি এখানে যা অর্জন করেছি তার জন্য আমি গর্বিত। সকালে যখন বাইবেল নিয়ে অন্য সিনেটররা শপথ নেন তখন শেখ রাহমানও একসঙ্গেই শপথ নেন। পরে নির্জ ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী কোরআন নিয়ে শপথ নেন জর্জিয়ার প্রথম এই মুসলিম সিনেটর। শেখ রাহমানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি দেন তার শাশুড়ি। তবে তার ৯০ বছরের অধিক বয়সী বৃদ্ধ মা এতে যোগ দিতে পারেননি। এই বয়সে তার পক্ষে এতদূর ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের একটি ধনী পরিবার থেকে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন শেখ রাহমান। তবে সেখানে গিয়ে কলেজের ব্যয় মেটাতে একটি রেস্টুরেন্টে ডিশ ওয়াশারের কাজ করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রমের অন্যান্য কাজও করতেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। তার সাফল্যের গল্প বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটিতে প্রতিধ্বনিত বা অনুরণিত হয়। এই বাংলাদেশি-আমেরিকানরা যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান কমিউনিটিগুলোর মধ্যে একটি। তাদের অনেকের জন্যই মার্কিন সিনেটর হিসেবে শেখ রাহমানের শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান একটি গর্বের মুহূর্ত। শেখ রাহমান বলেন, আমার মতো দেখতে এবং আমার মতো কথা বলে এমন লাখ লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত। এখন অন্তত টেবিলে আমাদেরও একটি আসন রয়েছে। গত বছরের গ্রীষ্মে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দলীয় প্রাইমারিতে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে সিনেটের জন্য নিজের অবস্থান সংহত করেন শেখ রাহমান। এই দলীয় প্রাইমারির মাধ্যমে নিজ নিজ দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা। কিন্তু নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে আসনটিতে রিপাবলিকান পার্টির কোনও প্রার্থী না থাকায় সিনেটে তার অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পড়ে। তিনি এখন জর্জিয়ার সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় একটি জেলার প্রতিনিধিত্ব করছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৈচিত্র্যময় জেলা। জনসংখ্যার এমন বৈচিত্র্যের মধ্যেই নিজের বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। এখানকার জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ, ২৭ শতাংশ কৃষাঙ্গ। হিস্পানিক জনগোষ্ঠীর সদস্য ২১ শতাংশ এবং এশীয় জনসংখ্যা ১১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বাংলাদেশি-আমেরিকানরা ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। তবে জর্জিয়ার সিনেটে শেখ রাহমানের প্রবেশ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ রাজ্যে দাসত্বের ইতিহাস রয়েছে। রয়েছে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের বর্ণাঢ্য ইতিহাস। জর্জিয়ার গ্রামীণ এলাকায় এখনও অনেক শ্বেতাঙ্গ বাসিন্দারা তাদের ঐতিহ্যের গর্বিত প্রতীক হিসেবে কনফেডারেট পতাকা বুকে জড়িয়ে নেয়। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এখনও কেউ কেউ শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের প্রতীক এই পতাকা প্রদর্শন করে। এ কারণেই হয়তো শেখ রাহমানের বিজয়ের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ের সংবাদমাধ্যমগুলোর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। শেখ রাহমান জানান, বাংলাদেশ সম্পর্কে তার সুউচ্চ প্রত্যাশা রয়েছে। এদেশের মানুষের জন্য তার বার্তা, গণতন্ত্রের স্পিরিটকে সতেজ রাখুন। আর/০৮:১৪/১৫ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2srKBxh
January 15, 2019 at 04:32PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন