মুম্বাই, ১৪ ফেব্রুয়ারি- তোমার রূপের নাহিকো শেষ , লাইনটি যেন তাঁর জীবনের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। অল্প সময়ের জীবনে মিলেছে প্রচুর খ্যাতি। তাঁর রূপে পাগল হয়েছে একের পর এক পুরুষ। সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, ভেঙেও গিয়েছে। কিন্তু প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের কাহিনী আজও এক রহস্য। অপরূপা সেই মহিলা মধুবালা। আর তাঁর শেষের দিকের প্রেমিকদের তালিকায় যাকে রাখা হয় তিনি পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টো। জুলফিকর আলি ভুট্টো তখন পাকিস্তান পাকাপাকিভাবে বসবাস করলেও ভারতের পার্লামেন্টে তাঁকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিতর্ক এই নিয়ে যে, জুলফিকর আলি ভুট্টো যেমন পাকিস্তানের বাসিন্দা তেমনই দেশভাগ হওয়ার আগে তাঁদের ভারতেও প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে এবং সেটা মুম্বইতে। এটাই ছিল জুলফিকর আলি ভুট্টোর দাবি। তাঁর দাবি এও ছিল যে ভারতে থাকা তাঁর সমস্ত সম্পত্তি কোনওদিনই এক উদ্বাস্তুর সম্পত্তি হিসাবে পরিগনিত করা যাবে না। ১৯৫৮ সালে তিনি যখন পাকিস্তানের মন্ত্রী হন তখনই এই বিতর্ক ভারতের রাজ্যসভায় চরমে ওঠে। ষাটের দশকে তাই তাঁকে ভারতে আসতে হত। আসতে হত বোম্বেতেও। সেই সূত্রেই অনিন্দ্য সুন্দরী সুপারস্টার অভিনেত্রী মধুবালার সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। মধুবালা তখন মুঘলএআজম ছবির শ্যুটিং করছেন। মাঝে সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করেছে দিলিপ কুমারের সঙ্গে। মর্মাহত মধুবালার মন তখন কারোর কাঁধ চাইছে মাথা রাখার জন্য। সেই সময়ের কানাঘুষো শোনা যায়। মধুবালার প্রয়োজনীয় কাঁধটি নাকি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের নবম প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টো। শোনা যায় আনারকলির ঝলক পেতে তিনি প্রায়ই হাজির হতেন মুঘলএআজম-এর সেটে। বলিউডে এই প্রেম কাহিনী এখনও চর্চার মধ্যেই রয়েছে। বলা হয় জুলফিকর আলি ভুট্টোর সঙ্গে মধুবালার এই সম্পর্ক খুব বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। অনেকের মতে সম্ভবত ভুট্টো বুঝে গিয়েছিলেন তাঁদের এই সম্পর্কের কোনও ভবিষ্যৎ নেই কারন মধুবালার জন্য তিনি শুধুই একটি ভরসার কাঁধ হতে পারেন। জীবনসঙ্গী হওয়ার মতো তাঁদের সম্পর্ক নেই। আসলে তখনও মধুবালা দিলিপ কুমারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। প্রেম ব্যর্থ হওয়ার ব্যথা তিনি কোনওদিনই ভুলতে পারেননি। এখানেই শেষ হয় মধুবালা-ভুট্টো সম্পর্কের রহস্যময় কাহিনী। এরপরেই মধুবালা বিয়ে করেন কিশোর কুমারকে। চলতি কা নাম গাড়ি ছবিতে সেটেই কিশোর-মধুবালার পরিচয় এবং সম্পর্কের শুরু। ১৯৬০ সালে তাঁকেই বিয়ে করেন সুন্দরী অভিনেত্রী। মধুবালাকে নিয়ে তার বোনের লেখা জীবনীতে জানা যায়, কিশোর কুমারকে বিয়ে করলেও তিনি দিলীপ কুমারকেই ভালবাসতেন। এমনকি দিলীপ কুমারকে দেখানোর জন্যই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেছিলেন। মধুবালাকে নিয়ে পরিচালক কিদার শর্মা, কমল আমরোহি, অভিনেতা প্রেমনাথ এবং এক প্রাক্তন আইএএস অফিসার লতিফ। তিনি ছিলেন মধুবালার মেয়েবেলার প্রেম। দিল্লিবাসী মধুবালা যখন মুম্বইতে চলে আসেন তখন তাঁর দিল্লির দিলওয়ালে লতিফকে নাকি একটি গোলাপ ফুল দিয়ে এসেছিলেন। শোনা যায় মধুবালার মৃত্যুর পর প্রত্যেক ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মধুবালার মৃত্যু বার্ষিকীতে তাঁর কবরে একটি গোলাপ রেখে যেতেন। এমনই ছিল তাঁর ভালোবাসা। মধুবালা ১৯৩৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা পাকিস্তানের পেশোয়ারের এক টোব্যাকো কোম্পানিতে চাকরি করতেন; কিন্তু তার চাকরি চলে যাওয়াতে সংসারে অভাবের কারনে মধুবালা অভিনয়ে যোগ দেন। এগারো ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম. মমতাজ জাহান নাম দিয়ে অভিনয় শুরু করলেও অভিনেত্রী দেবিকা রানী তার নাম দেন মধুবালা। মধুবালা শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে অভিনয় শুরু করলেও মূল নারী চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন ১৪ বছর বয়সে কিদার শর্মার নীলকমল ছবিতে। সেই ছবির নায়ক ছিলেন রাজ কাপুর। অভিনয় জীবনে প্রায় ৭০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মুঘল-ই-আজম-ই মধুবালার জীবনের শ্রেষ্ঠ ফিল্ম।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2DGBwFJ
February 14, 2019 at 04:55PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন