বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র বিখ্যাত উপন্যাসের মজিদ একটি পরিত্যক্ত কবরস্থানকে মাজার বানিয়ে বৈত্তবৈভবের মালিক হলেও সিলেটের বিশ্বনাথের মশব আলী নামের এক ব্যক্তি কোনো কবর ছাড়াই অন্যের জায়গায় একটি মাজার বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছেন ওরুস মাহফিল। এনিয়ে সর্বত্র সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই ভূয়া মাজারকে কেন্দ্র করে চলে আসছে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। তারা এটি ভেঙ্গে দেয়ার পাশাপাশি অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের জন্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে থানা প্রশাসন ভূয়া মাজারটি ভেঙ্গে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মঙ্গলবার এটি ভেঙ্গে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য। তবে কারো কবর না থাকলেও এখানে একজন ওলী শুয়ে আছেন দাবী করে মশব আলী জানিয়েছেন, তার পীরের নির্দেশেই তিনি মাজারটি বানিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামের মৃত আইন উল্লাহ’র পুত্র মশব আলী তার বাড়ি লাগোয়া একটি জায়গায় ইটসুড়কি দিয়ে ‘মাজার’ বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবছর ২৭ মাঘ ওরস মাহফিল করে আসছেন। ওরস মাহফিলের পূর্বে তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে চাল ও টাকাপয়সা সংগ্রহ করেন। তবে, একই গ্রামের অনেক লোকজন ও এলাকাবাসীর দাবী এটি ভূয়া মাজার। যেখানে মাজারটি বানানো হয়েছে, সেখানে কোনো কবর নেই। তাছাড়া, জায়গাটিও মশব আলীর নয়। এই জায়গার মালিক মশব আলীর ভাতিজা আলমাস ও একই বাড়ির মুসলিম আলী।
সোমবার বিকেলে সরেজমিন কাবিলপুর গ্রামে গেলে দেখা যায়, মশব আলীর বসঘরের অদূরেই অবস্থিত অই মাজার। মাজারের উত্তরের দেয়ালে খোদাই করে লিখা রয়েছে ‘পীর হযরত মোহাম্মদ রমাই শাহ’। পূর্বের দেয়া লিখা ‘খাদেম মশব আলী’। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে যে রমাই শাহ’র নাম লিখা, তার মাজার ছাতকের শিবনগরে। কথা হয় কাবিলপুর গ্রামের অই মাজারের খাদেম দাবীদার মশব আলীর সাথে। এখানে কি রমাই শাহ শুয়ে আছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না। এখানে কখনোই কাউকে দাফন করা হয়নি। তবে, আমার পীর পাশ্ববর্তী মঙ্গলগীরি গ্রামের আবদুল মনাফ তার জীবদ্দশায় আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এই জায়গায় একজন ওলী আছেন। তার নির্দেশানুযায়ী আমি জায়গাটিকে মাজার বানিয়ে বিগত ৪৮ বছর ধরে ওরস মাহফিল পালন করে আসছি।’ তাহলে মাজারে রমাই শাহ’র নাম কেন খোদাই করে লিখা-এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মশব আলী। তিনি বলেন, ‘ওসি সাহেব বলেছেন, এখানে কারো কবর নেই। তাই, এটি ভেঙ্গে দেয়া হবে। আমি নিরীহ মানুষ। ওসি সাহেবের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।’
কথা হয় একই বাড়ির বাসিন্দা ও মাজারের অর্ধেক জায়গার মালিক মুসলিম আলীর সাথে। তিনি বলেন, যেখানে মশব আলী মাজার বানিয়েছেন, সেখানে কারো কোনো কবর নেই। চাল ও টাকাপয়সা রুজির ধান্ধায় এবং অসামাজিক কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে বিগত ১০/১২ বছর পূর্বে তিনি ভূয়া একটি মাজার বানিয়েছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এর প্রতিবাদ করে আসছি। গত ৬ ফেব্রুয়ারী এসব বন্ধের দাবীতে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি বরাবরে স্মারকলিপিও দিয়েছি। এর প্রেক্ষিতে আমাদের উভয়পক্ষকে নিয়ে থানায় বৈঠক করেছেন ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম। সেখানে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, মাজারটি ভেঙ্গে দেয়ার।
থানা সূত্র জানায়, পুলিশি তদন্তে অই জায়গায় কোনো কবরের অস্তিত্ব না পাওয়ায় মাজারটি ভেঙ্গে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর জন্যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্থানীয় ভুলাগঞ্জ গ্রামের আবদুন নুর মেম্বার, হামদরচক গ্রামের মতিউর রহমান ও মঙ্গলগীরি গ্রামের ইদ্রিস আলীকে।
হামদরচক গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, সোমবারই এটি ভেঙ্গে দেয়ার কথা ছিল। শ্রমিক না পাওয়ায় আজ মঙ্গলবার ভুয়া মাজারটি ভেঙ্গে দেয়া হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বখতিয়ার মিয়া ও খাজাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, থানার নির্দেশ মোতাবেক ভূয়া মাজারটি ভেঙ্গে দেয়া হলে অই জায়গায় আর কোনো অসামাজিক কার্যকলাপ হবে না।
বিশ্বনাথ থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, কারো কোনো কবর না থাকায় উভয়পক্ষের উপস্থিতিতেই ভুয়া মাজারটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://bit.ly/2N2PdDa
February 12, 2019 at 02:43PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন