একটা সময়তো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়েই সবচেয়ে বেশি সিনেমা নির্মাণ হত ভারতীয় উপমহাদেশে। এর মধ্যে ভারত বাংলাদেশ একটু বেশিই এগিয়ে ছিল। সেসময় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে নানা অ্যংগেলে দেখানো হত। বেশিরভাগ সময় সতী সাবিত্রী স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে গল্প এগুতো। কিন্তু ক্রমে বলিউড তাদের নিজস্ব ধারা পরিবর্তন করে ফেলে। সমাজিক নানা ইস্যু নিয়ে সিনেমা নির্মাণ শুরু করে। হারিয়ে যেতে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর সেই মধুর সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। তবে একেবারেও হারিয়ে যায়নি। ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে যেসব সিনেমা নির্মাণ হয়, তার মধ্যেও এসেছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। তবে সেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এসেছে ভিন্নভাবে। এখনকার সম্পর্কের গল্পে চলে আসে পরকীয়া, ইচ্ছে স্বাধীনতা নিয়ে যুদ্ধ, কর্পোরেট লাইফে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হয় এমন আরও কত কি! মোদ্দ কথা যুগটাই তো ফুটে উঠবে সিনেমার পর্দায়। লাইফ ইন অ্যা মেট্রো ছবিতে যেমন কয়েকটি সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। সেখানে শিল্পা শেঠী ও কেকে মেননের সম্পর্ক যেমন একটি ধারায় ছিল। দুজনেই পরকীয়ায় মেতে ছিল। তেমনি ধর্মেন্দ্র ও নাফিসা আলীর ছিল আরেক সম্পর্ক। কাভি আলবিদা না কেহনা ছবিতেও শাহরুখ মেতে ওঠে পরকীয়ায়। আবার কি অ্যান্ড কা ছবিতে দেখানো হয়েছে স্ত্রী বাইরে কাজ করে আর স্বামী সংসার সামলায়। সেই সম্পর্কও মধুর হতে পারে। তবে ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে কিছু নিরেট স্বামী-স্ত্রী ও সংসারের সিনেমা নির্মাণ হয়েছে। চালতে চালতের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। আজিজ মির্জা পরিচালিত ছবিটি ২০০৩ সালে মুক্তি পায়। অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান ও রানী মুখার্জি। পথিমধ্যে দেখা মেলে রানীর। আর তখনই প্রেমে পড়ে যায় শাহরুখ। রানীকে পেতে ভারত ছেড়ে ছুটে যায় স্পেন পর্যন্ত। রানীকে জয় করে ভারতে নিয়ে আসে। কিন্তু সংসারটা ঠিক সুখের হতে পারে না। এত এত প্রেমের বিয়েতে শুরু হয় নানা ঝামেলা। ছোটখাট বিষয় নিয়ে দুজনে লড়তে থাকেন। এক সময় বন্ধন ছিড়ে ফের রানী বিদেশ চলে যেতে চান। সংসারে আমাদের যে ছাড় দিতে শিখতে হয়। এমন গল্পই বলা হয়েছে এ ছবিতে। প্রেম আর একসঙ্গে সংসার করা কখনোই এক বিষয় নয়। বিবাহ ছবিটি স্বামী-স্ত্রী হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তের ছবি। ভাললাগা, ভালোবাসা আর দুজন দুজনার কাছে প্রতিজ্ঞা। যে প্রতিজ্ঞা কোন বাধাই ঠেকাতে পারে না। তাতে যদি কারো অঙ্গ হানি বা সৌন্দর্য্যও নষ্ট হয়, তাও না। সেই গল্পই বলা হয়েছে ছবিতে। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি পরিচালনা করেছেন সুরাজ ভারজাতিয়া। ছবিতে স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহিদ কাপুর ও অমৃতা রাও। ২০১৫ সালে মুক্তি পায় দম লাগাকে হাইসা। আয়ুস্মান খুরানা ও ভূমি পেডেনকার অভিনীত সিনেমা। মোটা বউ আর রোগা বরের গল্প। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাড়ির চাপে বিয়ে করতে হয় চাকরিজীবী মেয়ে সন্ধ্যাকে। কিন্তু ভারী চেহারার জন্যেই নিজের স্ত্রীকে নিয়ে খুশি ছিল না প্রেম। এনিয়েই শুরু হয় ঝামেলা, বিচ্ছেদ পর্যন্ত চলে যায় সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক কীভাবে টিকিয়ে রাখেন নায়ক, সেটা অনেকেই জানেন। ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে অন্যতম সেরা ছবি এটি। গান গুলি দেখতে দেখতে নব্বই দশকে হারিয়েও যেতে পারেন। এই সিনেমার `মোহ মোহ কে` গানের জন্য মোনালী ঠাকুর সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হন,এছাড়া নায়িকা ভূমি সে বছর সেরা নবাগত অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। ওহেনরীর ছোট গল্প গিফট অফ মেজাই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষ নির্মাণ করেন রেইনকোট। ২০০৪ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। এই সিনেমাটি একটি হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। যার সঙ্গে হেসেছি, খেলেছি, ভবিষ্যতের বহু স্বপ্নও সাজিয়েছি- সে মানুষটি যদি হঠাৎ করে অচেনা জগতের বাসিন্দা হয়ে যায়? আর অনেক বছর পর যদি আবারো তার খোঁজ মেলে? পরিচালক সিনেমাতে এই উত্তরগুলোই খোঁজার চেষ্টা করেছেন। পেয়েছেন? প্রাপ্তির কথা বলতে গেলে, হয়তো উত্তরের চাইতেও অনেক বেশিই মেলে চরিত্রকথনে। অজয় দেবগন ও ঐশ্বরিয়া স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। শাহরুখ খান-মাধুরি দিক্ষীতের হাম তুমহারি হে সনম সিনেমায় স্বামী স্ত্রীর আরেক রুপ দেখানো হয়েছে। শাহরুখ খান আর মাধুরি দম্পতির মধ্যে সালমান ঢুকে পরে বন্ধু হয়ে। আর এই বন্ধুকে সহ্য করতে পারে না স্বামী। এনিয়ে ভুল বোঝাবুঝি, অত:পর সম্পর্ক জটিল হতে থাকে। এমন সম্পর্কের গল্পই হাম তুমহারি হে সনম। শাহরুখের রাব নে বানাদে জোরিকেও এই ক্যাটাগরিতে রাখা যায়। এই সিনেমায় অল্প বয়সী আনুশকার সঙ্গে হুট করে বিয়ে হয়ে যায় শাহরুখের। শাহরুখ দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করে। আর এই সবটাই স্ত্রীকে খুশি করার জন্য। এছাড়াও ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে নির্মাণ হয়েছে অসংখ্য এ ধাঁচের সিনেমা। যার মধ্যে রয়েছে,তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস, সাথিয়া, পহেলি, বারফি, তারা রাম পাম, হাম দিল দে চুকে সনম, নমস্তে লন্ডন, মে মরি পত্নি অর ওহ, সাদি কি সাইড ইফেক্টস, প্যাডম্যান , টয়লেট এক প্রেম কথা ইত্যাদি। এমএ/ ০৬:২২/ ১৮ ফেব্রুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2IhAfdN
February 19, 2019 at 12:50AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top