ওয়াশিংটন, ০৯ ফেব্রুয়ারি- উচ্চতা খুব বেশি না। মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের সবাই যেখানে ছয় ফুটের বেশি, তখন একা স্নিগ্ধ তাদের সামনে দাঁড়ান চীনের প্রাচীর হয়ে। ভলিবলে একটা নিয়ম আছে, সাতজন খেলোয়াড়ের মধ্যে একজন সবসময় ডিফেন্সিভ স্পেশালিস্ট হিসেবে খেলেন। তাকে বলা হয় লিবারো। লিবারোর খুব লম্বা হওয়ার দরকার হয় না। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত স্নিগ্ধ আহনাফ হাসান এই পজিশনে খেলেন। সম্প্রতি ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন পুরো আমেরিকায় ম্যান ভলিবল র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে। সেখানে স্নিগ্ধর অবস্থান তিন নম্বরে। স্নিগ্ধ আহনাফ হাসান। জন্ম ১৩ জানুয়ারি, বাংলাদেশের রংপুরে। রংপুরের মিলেনিয়াম ইংলিশ স্কুলে তার স্কুল জীবন শুরু। তখন বাবা হাসানুল কবীর (ডাবলু) কারমাইকেল কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক, আর মা রংপুর জিলা স্কুলের শিক্ষক। পরে বাবা-মা ঢাকায় বদলি হয়ে গেলে স্নিগ্ধ শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এই স্কুলেই স্নিগ্ধর প্রথম ভলিবল খেলা শুরু, দিবা ও প্রভাতি শাখার প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। ২০০৯ সালে আমেরিকায় এসে পিএস ১৯৯-এ ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয় স্নিগ্ধ। তারপর পিএস ২২৬-এ ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়েই শুরু ভলিবল খেলা। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে স্নিগ্ধ নিজেকে দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে তৈরি করে। পিএস ২২৬-এর কোচ মাইকেল প্রাটের অন্যতম প্রিয় হয়ে ওঠে স্নিগ্ধর দৃষ্টিনন্দন খেলা। আন্তঃস্কুল ভলিবলে চ্যাম্পিয়ন হয় দল। মিডল স্কুল পার হয়ে স্নিগ্ধ মিডউড হাইস্কুলের ভলিবল দলে যোগ দেন। ওই সময় মিডউড হাইস্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়। স্নিগ্ধর পজিশন ছিল তখন রাইট উইং। নিজের দক্ষতা দিয়ে ভলিবল কোচের অপরিসীম স্নেহভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। দুর্ঘটনায় কোচের পা ভেঙে গেলে স্নিগ্ধ দলের কোচিং সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্নিগ্ধ বর্তমানে ব্রুকলিন কলেজ ভলিবল দলে খেলছেন লিবারো পজিশনে। ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন পুরা আমেরিকার ম্যান ভলিবল র্যাংকিং প্রকাশ করেছে, যেখানে স্নিগ্ধর অবস্থান তৃতীয়। ৭ ফেব্রুয়ারি ওহাইওতে আন্তঃকলেজ ভলিবল ডিভিশন-৩ এ খেলতে গেছেন স্নিগ্ধ। এর আগে মিশিগানের ডেট্রয়েট ও ক্যালিফোর্নিয়ায় আন্তঃকলেজ ভলিবল টুর্নামেন্টেও অংশ নিয়েছেন তিনি। আমেরিকা হলো বেসবল, বাস্কেটবল ও ফুটবলের দেশ। সেখানে এত খেলা থাকতে ভলিবলকে বেছে নেওয়ার কারণ কি, জানতে চাইলে স্নিগ্ধ বলেন, বাংলাদেশ থেকে এসে আমি প্রথমে এলিমেন্টারি স্কুলে ফিফথ গ্রেডে ভর্তি হই। তারপর মিডল স্কুলে যাই। সেখানে ক্রীড়া শিক্ষক ছিলেন মাইকেল প্র্যাট। তিনি খুব ভালো একজন ভলিবল খেলোয়াড় ও কোচ। তিনিই আমাকে অনুপ্রাণিত করেন প্রচণ্ডভাবে। ওনার কারণেই আমি মিডল স্কুল পর্যায়ে নিয়মিত ভলিবল খেলেছি। এখন যে আমি কলেজে পড়ছি, আমার কোথাও খেলা থাকলে কোচ মাইকেল সেখানে আসেন আমাকে উৎসাহিত করতে। আমার খেলোয়াড়ি জীবনে ওনার অবদানের কথা আমি কোনো দিনই ভুলব না। মিডল স্কুলে পড়ার সময় স্নিগ্ধদের দল নিউইয়র্কে যত টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে, সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এর কারণ ছিলেন কোচ মাইকেল প্র্যাট-যার ধ্যানজ্ঞানই হলো ভলিবল। নিউইয়র্কে ভলিবলের জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে। আগে অতটা আগ্রহ ছিল না খেলাটির বিষয়ে। তবে ক্যালিফোর্নিয়া, শিকাগো, নেব্রাস্কায় তুমুল জনপ্রিয় ভলিবল। সেখানে ভলিবলের কাঠামো অত্যন্ত শক্তিশালী। অনূর্ধ্ব-৬ থেকে ওখানে লিগ হয়। আমেরিকা বিশ্ব ভলিবলে একটি সমীহ জাগানো শক্তি। সর্বশেষ বিশ্ব ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে খেলেছে আমেরিকা। ২১ বছর বয়সী স্নিগ্ধ পড়াশোনার পাশাপাশি একটি কোম্পানির বিপণন ব্যবস্থাপক। তিনি চান দীর্ঘদিন ভলিবলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে। তাই খেলা ছাড়ার পরে কোচিংয়ে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দলে খেলার ডাক পেলে খেলবেন কিনা জানতে চাইলে স্নিগ্ধ বলেন, এমন কোনো কথা কখনো ভাবিনি। তবে যদি প্রস্তাব আসে, অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করে দেখব। এমইউ/০২:৫৫/০৯ ফেব্রুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2Gjm3PX
February 09, 2019 at 08:57PM
09 Feb 2019

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top