ঢাকা, ০৩ ফেব্রুয়ারি- এক বছর আগেও সারা দেশে ৩০০-এর ওপরে সিনেমা হল চালু ছিল। এর ছয় মাসের মাথায় সেই সংখ্যা ২৫০-এ নেমে আসে। বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধেকে। সিনেমা হল মালিক বা প্রদর্শক সমিতির হিসাবমতে, এখন সারা দেশে নিয়মিতভাবে সিনেমা প্রদর্শনের জন্য মাত্র ১৭৪টি সিনেমা হল চালু আছে। সমিতির উপদেষ্টা ও সিনেমা হলমালিক মিয়া আলাউদ্দিন এ তথ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, গত শুক্রবারের হিসাবমতে, এখন সারা দেশে নিয়মিতভাবে ১৭৪টি হল খোলা আছে। গত বছর ঈদে ৩০০-এর বেশি সিনেমা হলে ছবি চলেছে। তবে ছয় মাসের মাথায় তা ২৫০এ নেমে আসে। বর্তমানে সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে এমন হলের সংখ্যা ১৭৪। জানা গেছে, বন্ধ হওয়া বড় হলের তালিকায় ঢাকার মানসী, রাজশাহীর উপহার, পঞ্চগড়ের ছায়াছন্দও আছে। মিয়া আলাউদ্দিন আরও বলেন, এই মুহূর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, মুন্সিগঞ্জ, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, রাজশাহী, পিরোজপুর, বরগুনাসহ ১৫২০টি জেলা সদরেও কোনো সিনেমা হল খোলা নেই। তবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে দুএকটি হল খোলা হয়। হল বন্ধ হওয়ার জন্য সিনেমা কমে যাওয়াকে দায়ী করলেন প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও প্রযোজক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, প্রতিবছরই ছবি নির্মাণ কমে যাচ্ছে। যাও তৈরি হচ্ছে, বেশির ভাগ ছবিই মানসম্মত না। দর্শক দেখছেন না ছবিগুলো। দেবী, স্বপ্নজাল, পোড়ামন ২ কিংবা দহনসহ শাকিব খানের কিছু ছবি দিয়ে তো সারা বছর হল চলবে না। সিনেমার যা অবস্থা, তাতে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী এক বছরে হলের সংখ্যা ১০০-এর নিচে চলে যেতে পারে। রাজধানী ঢাকায় মধুমিতা হলের মালিকও ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি আরও বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আমার নিজের হল মধুমিতাও বন্ধ করে দিতে হতে পারে। কারণ, লোকসান গুনতে গুনতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। মাসে আমার হল বাবদ খরচ প্রায় ১৫ লাখ টাকা। প্রতি মাসেই দুটি করে ভালো ছবি না থাকলে হল চালানো সম্ভব নয়। দিন দিন প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাওয়াকে প্রেক্ষাগৃহের পতন, সিনেমারও পতন বলে আখ্যায়িত করলেন সাবেক প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, যেভাবে সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে, তাতে একসময় তো সিনেমাও বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের জন্য এটি খুবই দুঃখজনক। দেশীয় ছবি কমে যাওয়ায় হল বন্ধ হচ্ছে। সিনেমা হল বন্ধ হওয়া ঠেকাতে বাইরের দেশের ছবি, বিশেষ করে কলকাতার নতুন ছবি শর্ত সাপেক্ষে এনে সিনেমা হলে চালানোর কথাও বললেন প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতির নেতারা। ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ এ বিষয়ে বলেন, কলকাতার বাংলা নতুন ছবি দুই দেশে একই সঙ্গে মুক্তির ব্যবস্থা করা হলে মালিকেরা কিছুটা হলেও বাঁচেন। এ ব্যাপারে সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা প্রদর্শক সমিতির একটি প্রতিনিধিদল দেখা করি। মন্ত্রীকে আমরা বলেছি, হলিউডের ছবি যদি বাংলাদেশে একসঙ্গে মুক্তি পেতে পারে, তবে কলকাতার ছবি বাংলাদেশে একসঙ্গে মুক্তি পেতে পারবে না কেন? মন্ত্রী এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দিতে বলেছেন। এ ব্যাপারসহ চলচ্চিত্র নিয়ে আরও কয়েকটি সমস্যা লিখিত আকারে প্রস্তুত করেছি। শিগগিরই মন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছে দেব। এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরুও বলেন, শর্ত সাপেক্ষে প্রতি মাসে নির্দিষ্টসংখ্যক কলকাতার নতুন ছবি আনা যেতে পারে। তাতে অন্তত সিনেমা হল বাঁচতে পারে। এদিকে হল বন্ধ হওয়ার পেছনে হলমালিকদেরও ভূমিকা আছে বলে মনে করেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি বলেন, অনেক হলেই ছবি চালাতে গেলে হলের মেশিন খরচও প্রযোজকদের দিতে হয়। আবার হল থেকে প্রযোজকেরা টিকিট বিক্রির স্বচ্ছ হিসাব পান না। ফলে লোকসান গুনতে গুনতে এখন অনেক প্রযোজকই আর ছবি নির্মাণ করছেন না। আর ছবির অভাবে হল বন্ধ হচ্ছে। প্রদর্শক সমিতি বা হল মালিক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন এই কথা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, এমনিতেই ছবি প্রদর্শন করে টাকা উঠে আসে না। তার ওপর মেশিন ভাড়া আমাদের দিতে হলে তো আরও লোকসান গুনতে হবে। আর টিকিট বিক্রির স্বচ্ছ হিসাবের বিষয়টিতে ঢাকার বাইরের হলগুলোতে সমস্যা থাকতে পারে।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2S7lIGj
February 04, 2019 at 02:14AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top