স্নাতকোত্তরে ইতিহাসে সেরা প্রত্যন্ত গ্রামের লতিকা বর্মন

শালকুমারহাট, ৭ মার্চঃ ৬৬.১৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্নাতকোত্তরে ইতিহাস বিভাগে সেরা হওয়ার সুবাদে প্রাপ্তি রাজ্যপালের হাত থেকে স্বর্ণপদক। লতিকা বর্মনের এহেন সাফল্যে তাঁর বাসস্থান জলদাপাড়া বনাঞ্চল লাগোয়া প্রত্যন্ত গ্রামে খুশির হাওয়া। পরবর্তী লক্ষ্য এমফিল। রীতিমতো দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে আদায় করা এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানাতে বিধায়ক অনিল অধিকারী লতিকার বাড়িতে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। লতিকার এই সাফল্য জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে উচ্চশিক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলে বনকর্তারাও মেনে নিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, তাঁর এই সাফল্য অন্যদেরও জীবনযুদ্ধে অক্সিজেন জোগাবে।

বুধবার কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী লতিকার হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন। পেশায় কৃষক লতিকার বাবা ঘনশ্যাম বর্মন ও গৃহবধূ মা লক্ষ্মী বর্মনও মেয়ে সঙ্গে কোচবিহারে গিয়েছিলেন। তাঁরা অবশ্য সমাবর্তন স্থলের বাইরেই ছিলেন। মেয়ে বাইরে আসতেই গর্বিত বাবা-মা  আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। লতিকা বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এমফিল করছেন। বললেন, অনেক লড়াই করে এই সাফল্য পেয়েছি। বাবা-মায়ের পরিশ্রম রয়েছে এর মূলে। আসল কষ্টটা তাঁরাই করেছেন। ভবিষ্যতে ভালো শিক্ষক হওয়াটাই আমার লক্ষ্য। লতিকার বাড়ি থেকে জলদাপাড়া জঙ্গল মাত্র দু’ কিলোমিটার দূরত্বে। শিশাগোর গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়েদের মধ্যে  লতিকাই প্রথম স্নাতকোত্তরে স্বর্ণপদক। শালকুমারহাট সহ আশপাশের প্রায় আট-দশটি গ্রামে এখনও অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়। অনেকে কলেজের গণ্ডিই পার করতে পারে না। সেখানে লতিকা রীতিমতো একটি  দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। ফালাকাটা গার্লস স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক, জলপাইগুড়ি পিডি ওমেনস কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে স্নাতক। এরপর তিনি কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন।

লতিকার বাবা ঘনশ্যাম বর্মন উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছেন। মা হাইস্কুলে গিয়েছেন। পরিবারের কেউ অবশ্য কলেজের চৌকাঠ পেরোতে পারেননি। লতিকার একমাত্র ভাই উচ্চমাধ্যমিকের পরেই ডিএডে ভরতি হয়েছে। ঘনশ্যামবাবুর কথায়, মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলব বলে জেদ ছিল। তা আজ অনেকটাই পূরণ হল। স্কুল-কলেজে পড়তেই যেখানে গ্রামের বাকি মেয়েদের বিয়ে হয় সেখানে তিনি স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছেন। বললেন, দু-একবার মেয়ে বিয়ে দেওয়ার ঝোঁক চেপেছিল। কিন্তু মেয়ে ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েছি। ওর পড়ার জন্য চাষের জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। বিধায়ক অনিল অধিকারী বলেন, অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও মানসিক জেদ যে দারিদ্র কোনো বাধা হতে পারে না তা জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মেয়ে লতিকা ফের প্রমাণ করলেন। মাদারিহাটের রেঞ্জার খগেশ্বর কার্জি বলেন, ওর আরও সাফল্য কামনা করি।

 



from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2EMLSV5

March 08, 2019 at 01:13PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top