নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট, ১৫ মার্চঃ বামফ্রন্ট বা কংগ্রেসকে তো ভোট দিযে কোনো লাভ নেই। বাকি ঘাসফুল আর পদ্মফুলেও এবার ভোট দেওযার ইচ্ছা হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ চা গাছের ফুলের উপরে ভরসা করেই দিন কাটাতে হচ্ছে বন্ধ মুজনাই চা বাগানের শ্রমিকদের। তাঁদের বক্তব্য, ঘাসফুল আর পদ্মফুলে তো পেট ভরছে না। এদিকে, আগামী রবিবার খোলা মাঠে শ্রমিকরা নিজেরাই জনসভা করবেন। সেদিনই সিদ্ধান্ত নেওযা হবে এবার মুজনাই বাগান ভোট দেবে কিনা।
বাগানের শ্রমিক হীরামণি গোপ বলেন, পেটে খাবার জোটাতেই লড়াই করতে হচ্ছে। শুধু চা ফুল, জংলি কচু খেযে দিন কাটছে শ্রমিক পরিবারগুলির। বাগান খোলার কোনো উদ্যোগ কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। ধর্মরাজ ওরাওঁ নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ঘাসফুল বা পদ্মফুলে ভোট দিয়ে পেট ভরছে না। ভোটের কাঠি ঢাকে পড়লেও বন্ধ মুজনাই চা বাগানে যেন শ্মশানের নীরবতা। কোনো উৎসাহ নেই। নদীতে পাথর ভেঙে, চা গাছের ফুল সংগ্রহ করতে এবং জঙ্গল থেকে জংলি আলু সংগ্রহ করতেই দিন পার হয়ে যাচ্ছে শ্রমিকদের।
বাগানের বাসিন্দা গণেশ গোপ জানান, ১০০ দিনের কাজ ১৪ দিন করে তিনবার, মানে একেকজন শ্রমিক ৪২ দিন করে কাজ করেছেন। কিন্তু একটি টাকাও কেউ পাননি। দোকানদার আর বাকিতে মাল দিচ্ছে না। এমনকি বাগানের আশেপাশে যে কটি দোকান রয়েছে তারা দোকানে বেশি মালপত্র রাখছে না। কারণ আর কতদিন বাকি টানবে তারা। গণেশবাবু বলেন, আগামী রবিবার বাগানের মাঠে সব শ্রমিককে ডেকেছি। সেখানে কোনো নেতার ঠাঁই নেই। শ্রমিকদের বক্তব্য শুনে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। বাগানের হাসপাতালে ৮ বছর ধরে আশ্রয নিয়েছেন চৈতুরাম মুন্ডা। ৬ জনকে নিয়ে তাঁর সংসার। হাতিতে ঘর ভাঙার পর আর ঘর হযনি। সেই থেকে বাগানের হাসপাতালই তাঁর আশ্রয়ের ঠিকানা। চৈতুরাম বলেন, ঘাসফুল বা পদ্মফুলকে ভোট দিযে কী লাভ? জীবন বেঁচে রয়েছে চা গাছের ফুল সেদ্ধ করে খেয়ে। কেউ যদি চা ফুল চিহ্নে দাঁড়ায় তাঁকে ভোট দিতে পারি। পদ্মফুল ও ঘাসফুলের নেতারা তো আমাদের খোঁজ রাখেন না।বাগানের স্বাস্থ্যকর্মী আশিস বিশ্বাস বলেন, ভযাবহ অবস্থা চলছে। ১২ ফেব্রুয়ারি বৈঠকের দিকে সবাই তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু মালিকরা কেউ এলেন না। এখন তো সবাই ভোট প্রচার নিয়ে ব্যস্ত। সকলের নজর চেয়ার দখলের। আমাদের কথা আর কে ভাববেন?
বাগানের কর্মী অজয সাউ বলেন,আরও দুমাস পেটে গামছা বেঁধে থাকতে হবে। কারণ নির্বাচনি আচরণবিধি ২৩ মে-র পর উঠবে। তার আগে কেউ বাগান খোলা নিযেয়ে ভাববে বলে মনে হয় না। আর নেতাদের বলা হলে শুধু বলেন, নির্বাচন ঘোষণা হযে গিয়েছে। এখন আর কিছু করা যাবে না। কয়েকজন শ্রমিক যাঁরা বাগানে তৃণমূল-বিজেপির সঙ্গে যুক্ত তাঁরাও জানালেন, শ্রমিকরা যেভাবে রয়েছেন বড়ো ধরনের অশান্তি না লেগে যায়। ভোট বয়কটের কথাও অনেকে ভাবছেন। মাদারিহাটের যুগ্ম বিডিও অভিজিত্ রায মুজনাই নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2W0gidx
March 15, 2019 at 01:20PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন