ঢাকা, ১৫ মার্চ- বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আসার আগে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে সিনেমা ও বিটিভির নাটকই দর্শকের বিনোদনের চাহিদা পূরণ করেছে। এখন টেলিভিশন চ্যানেলর সংখ্যাও বেড়েছে। সেই সঙ্গে দর্শকের সংখ্যাও অনেক। প্রেক্ষাগৃহ কমে যাওয়ায় সিনেমা থেকে সহজ বিনোদন মাধ্যম এখন টেলিভিশন। কিন্তু টেলিভিশনে মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে দর্শক অনুষ্ঠান দেখার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলছেন। ঠিক এ রকম অবস্থাতেই বিকল্প বিনোদন মাধ্যম হিসেবে দর্শকের কাছে ওয়েবভিত্তিক নাটক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওয়েবসিরিজ নির্মাণ শুরু হয়েছে আরও আগে থেকে। সেসব ওয়েবসিরিজে অভিনয় করেছেন বিশ্বের সব নামিদামি তারকারা। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে সেগুলো। বিশ্বায়নের প্রভাবে ওয়েবসিরিজের সেই ঢেউ এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশের বিনোদন জগতেও। টেলিভিশন চ্যানেলের বিজ্ঞাপন যন্ত্রণাকে পাশ কাটিয়ে দর্শক নিজের সুবিধাজনক সময়ে এ মাধ্যম থেকে বিনোদনের চাহিদা পূরণ করছেন এখন। ওয়েবের জন্য নাটক, শর্ট ফিল্ম অহরহ নির্মাণ হচ্ছে। জনপ্রিয় নির্মাতাদের পাশাপাশি তারকা অভিনয়শিল্পীরাও ঝুঁকছেন এ মাধ্যমে। ২০১৭ সাল থেকেই ওয়েবভিত্তিক নাটক ও সিনেমা নির্মাণের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক প্রচারের জটিল সমীকরণকে পাশ কাটিয়ে এখন ওয়েবভিত্তিক কাজের সংখ্যা বেড়েই চলছে। মূলত ২০১৪ সাল থেকে ওয়েবসিরিজ প্রচারের উদ্যোগ নেয় থার্ড বেল নামের একটি প্লাটফরম। সেখানে টিভিতে প্রচারিত জনপ্রিয় পুরনো নাটক, টেলিফিল্ম প্রচার শুরু করে সেই প্রতিষ্ঠান। পরে এ প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে কয়েকটি ওয়েব নাটক প্রচার হয়। দর্শকেরও আগ্রহ দেখা যায় তখন। বাংলাদেশি দর্শকরা সেই প্লাটফরমে প্রচারিত নাটক, টেলিফিল্ম দেখতে থাকেন। বছরখানেক পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। মূলত ২০১৮ সাল থেকেই ওয়েবভিত্তিক কাজ দিয়ে দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ শুরু হয়। এ সময়ে একাধিক প্লাটফরম গড়ে ওঠে। এসব প্লাটফরম থেকে এখন নিয়মিত সিরিজ নাটক, শর্ট ফিল্ম ও একক নাটক নির্মিত হচ্ছে। এ মাধ্যমে দর্শকের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। নাটক এবং চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত তারকারা হরদম কাজ করছেন এ মাধ্যমে। বিশেষ করে ঢাকাই সিনেমার দুর্দিনে এ ইন্ডাস্ট্রির নায়িকারাও ওয়েব নাটকের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম বলেন, আসলে ওয়েব সিরিজের কাজ এখন বেশ জনপ্রিয়। শুনেছি দর্শকও নাকি বাড়ছে এ মাধ্যমে। তাই নতুন এ মাধ্যমটিতে কাজ করছি। বিজ্ঞাপন প্রচারের ভোগান্তি ছাড়াই এখানে দর্শক বিনোদিত হচ্ছেন। ভালো গল্প এবং নির্মাতার কাজে আধুনিক এ বিনোদন মাধ্যমটিতে আশা করছি নিয়মিতই কাজ করব। প্রথম কাজটির জন্য দর্শকের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। সবাই যদি এ মাধ্যমে কাজ করে তাহলে আমি পিছিয়ে থাকব কেন। এরই মধ্যে একাধিক ওয়েবভিত্তিক কাজ করেছেন জাকিয়া বারী মম। তিনি বলেন, আসলে এ মাধ্যমে কাজের ধরনটা একটু আলাদা। তবে কাজ করে মজা পাচ্ছি। খুব দ্রুত দর্শকদের কমিউনিকেট করা যায় এ ধরনের কাজে। নাটকের পাশাপাশি একটি ওয়েব শর্ট ফিল্মেও অভিনয় করেছি। সব মিলিয়ে এ মাধ্যমে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা ভালো। ওয়েবের জন্য এখনও বেশ কয়েকটি কাজের প্রস্তাব আছে আমার হাতে। আশা করছি, ভালো গল্প পেলে নিয়মিতই ওয়েবে কাজ করব। টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোও এখন নিয়মিতই ওয়েব নাটকে অভিনয় করছেন। তিনি বলেন, অভিনয় তো অভিনয়ই। আমি আসলে কাজের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অভিনয় করার চেষ্টা করি। তবে যেহেতু ওয়েবভিত্তিক কাজ এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে কিংবা দর্শক দেখছেন, তাই আমিও এ মাধ্যমে কাজ শুরু করেছি। এতে আমার অভিনীত কয়েকটি নাটক প্রচারের পর দর্শকের কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। এখানে যেসব দর্শক ওয়েবভিত্তিক কাজ দেখছেন তাদের সংখ্যাও কিন্তু প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমার কাজ হল দর্শকদের অভিনয়ের মাধ্যমে বিনোদিত করা। তাই যদি নতুন মাধ্যম প্রচলিত হয় এবং সেটিও যদি দর্শক পছন্দ করেন, আমি সেখানেও কাজ করব। আমার মনে হয়, কিছু দিনের মধ্যে ওয়েবভিত্তিক কাজের পরিমাণ আরও বাড়বে। ওয়েবভিত্তিক একটি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমবার ওয়েবের জন্য শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছিলাম। সেটি ভারতের একটি প্লাটফরম থেকে প্রকাশ হয়েছে। দর্শকও বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন সেটা। গল্প ও নির্মাণের স্বাধীনতা পেয়েই কাজটি করি। এটি প্রচারে আসার পর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া আমার ভালো লেগেছে। নতুন ধরনের এ মাধ্যমে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভালো। ওয়েবসিরিজে এখন অনেক গুণী নির্মাতা নাটক কিংবা শর্ট ফিল্ম বানাচ্ছেন। এটা ইতিবাচক দিক। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিকল্প এ বিনোদন মাধ্যম অনেকদূর এগিয়ে যাবে। বর্তমানে নাটক ও চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকেই ওয়েব মাধ্যমে নিয়মিত কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মোশাররফ করিম, পপি, চঞ্চল চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা, পরীমনি, অপূর্ব, সম্রাট, সজল, নাঈম, নাদিয়া, অপি করিম, আইরিন, শিপন মিত্র, ভাবনা, এবিএম সুমন, আঁচল, তমা মির্জা, সাফা কবির, সাবিলা নূর, তানিয়া দিপালী, জোভান, তৌসিফ, মেহজাবিন প্রমুখ। নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সময়ের পরিক্রমায় আরও অনেক প্রতিষ্ঠিত অভিনয়শিল্পী ওয়েবসিরিজের কাজে যুক্ত হবেন। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকে বলেছেন, যে হারে ওয়েবভিত্তিক কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এক সময় দর্শক হয়তো টেলিভিশন নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। সুত্র : যুগান্তর এন এ / ১৫ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2W2Z1Rc
March 15, 2019 at 08:24PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন