সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো- এই প্রতিপাদ্যে নিয়ে সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব নারী দিবস। বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও নারীদের অবদান অনেক। রক্ষণশীল সামাজিকতায় আবন্ধ থাকা বাংলাদেশের নারীরা, খেলা মাঠে দাপিয়ে বেড়াবেন এ কথা চিন্তা করাও ছিলো কল্পনা অতীত। শিক্ষা থেকে শুরু করে সবর্ত্র বাধা মুখে পড়া নারীরা সেই কল্পনা অতীতকে কাজটি রূপ দেন বাস্তবে। দেশের গণ্ডি পার করে নারীরা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে। বাস্তবতার সেই পথে চলে অ্যাথলেটিক্স, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, ফুটবল, ক্রিকেটে বর্তমানে নারীদের অবাধ বিচরণ। এমনকি ভারত্তোলন, কারাতে, কুস্তি, বক্সিংয়ের মতো শারীরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে বাংলাদেশের নারীরা। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও নারীরা যে সফল হতে পারে এই দৃষ্টান্ত রেখেছেন বেশ কয়েকজন। জিনাত আহমেদ, প্রথম বাঙালি নারী হিসেবে পাকিস্তান অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতেন ১৯৫৫ সালে। আরেক জনের কথা না বলেরই নয়, সুলতানা কামাল খুকী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের জীবনসঙ্গিনী। স্বাধীনতার আগে ও পরে ক্রীড়াঙ্গনকে আলোকিত করেছেন নিজ প্রতিভায়। অ্যাথলেটিক্সের হার্ডলেস, হাই জাম্প ও লং জাম্পে তিন ইভেন্টে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্বর্ণপদক জিতে অবাক করে দেন সবাইকে। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান অলিম্পিকে গড়েন নতুন রেকর্ড। ১৯৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হার্ডলসে নিজের গড়া রেকর্ডটি ভেঙে গড়েন নতুন রেকর্ড। স্বাধীনতার পর প্রথম ১৯৭৩ সালে ততৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) প্রথমবারের মতো বসে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা। সেবার মেয়েদের বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ১০০ মিটার হার্ডলস, হাই জাম্প ও লং জাম্পে স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। এছাড়া ১০০ মিটার স্প্রিন্ট অংশ নিয়ে দ্বিতীয় হন সুলতানা কামাল খুকী। এরপর ১৯৭৫ সালে ফেব্রুয়ারি হওয়ার তৃতীয় আসরে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জিতিছিলেন তিনি। সে বছর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁকেও হত্যা করে ঘাতকরা। সেই নেক্কারজনক ঘটনা না ঘটলে অনেক আগেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বর্ণপদকে দেখা পেতে পারতো পারতো বাংলাদেশ। অ্যাথলেটিক্সে সুলতানা কামাল খুকীসহ সুফিয়া খাতুন, শামীমা সাত্তার মিমুদের দেখানো পথে হেঁটে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনাম কুঁড়িয়েছেন নাজমুন নাহার বিউটি, শিরীন আক্তাররা। দাবার পরিচিত মুখ রানী হামিদ। দাবা দিয়ে বিশ্ব দরকারে পরিচিত করেছেন বাংলাদেশকে। জোবেদা রহমান লিনু, টেবিল টেনিসে ১৬বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের সঙ্গে দেশের নামও লেখান গিনেস বুকে। এছাড়া কামরুন নাহার ডানা, লায়লা নূর-রা অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা। তাদের দেখানো পথে হেঁটে আশি-নব্বইয়ের দশকে অ্যাথলেটিক্স, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস ও সাঁতারে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ছিল বেশি। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ক্রিকেট, ফুটবলেও এগিয়েছেন নারীরা। পুরুষ ফুটবল দলের ক্রমাগত ব্যর্থতার ভিড়ে, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এনে দিচ্ছেন সাফল্য। টানা দ্বিতীয়বারের মতো অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের চুড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন মারিয়া-মনিকারা। পুরুষ ফুটবল দল সেখানে সাফের পরপর চার আসরে গ্রুপপর্ব পার করতে পারেনি। সেখানে নারী ফূটবল দল গত আসরে হয়েছে রানার্সআপ। ক্রিকেটে পুরুষ দলের আগে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক শিরোপা উপহার দিয়েছে নারী দল। দলগত খেলা ছাড়া ব্যক্তিগত ইভেন্টে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে নারীরাই। ২০১৬ সালের এসএ গেমসে বাংলাদেশ স্বর্ণপদক জেতে মাত্র চারটি। এর তিনটি এসেছে নারীদের হাত ধরে। ভারত্তোলনে এসএ গেমসের ১২তম আসরে দেশকে প্রথম স্বর্ণপদক উপহার দেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। এরপর সাঁতারে দুটি স্বর্ণপদক জেতেন মাহফুজা আক্তার শীলা। এরপরও পুরুষদের তুলনায় সুযোগ-সুবিবা কম পেয়ে থাকেন নারী ক্রীড়াবিদরা। ক্রিকেটে নারী পুরুষদের বেতন কাঠামো এবং সুযোগ সুবিধার পার্থক্য বিস্তর। অন্য খেলা গুলোর চিত্র অনেকটা একই রকম। কিন্তু এরপর দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আলোকিত করছেন করছেন নারী ক্রীড়াবিদরা। হচ্ছেন আলোচিত আর দেশের সম্মানকে করছেন প্রতিষ্ঠিত। এন এ / ০৮ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2VMOol5
March 09, 2019 at 01:19AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন