জ্যোতি সরকার, জলপাইগুড়ি, ২৫ মার্চঃ জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও দার্জিলিং জেলায় প্রায় ৬০ লক্ষ তপশিলি এবং আদিবাসী ভোটার এবারের লোকসভা ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছেন। এই চার জেলার চা ও কৃষি বলয়ে মূলত তপশিলি জাতি এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস। শ্রমিক সংগঠনগুলির শক্তির নিরিখে চা বাগানগুলিতে বরাবর ভোটের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটি লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে চা বলয়ে ভোট কোনো বিশেষ দলের দিকে না গিয়ে বেশ কয়েকটি দলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে। পরিণতিতে চা বাগানগুলিতে স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়নগুলির প্রভাব বর্তমানে অনেকটাই কম। বর্তমানে জাতিসত্তার ইশ্যু চা শ্রমিকদের মধ্যে যথেষ্টই প্রভাব ফেলেছে। তাই শেষপর্যন্ত এবারে কোন ইশ্যুতে এই ৬০ লক্ষ ভোটারের ভোট কার দিকে যায়, সেদিকে সবার নজর রয়েছে।
নমশূদ্র সম্প্রদায় তপশিলি জাতিভুক্ত। এদের মধ্যে মতুয়া সম্প্রদায়ের যথেষ্টই প্রভাব রয়েছে। উত্তরবঙ্গে মতুয়া ভোট মূলত তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে ভাগাভাগি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা বিরসা তিরকি তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উত্তরের তরাই-ডুয়ার্স ও পাহাড় মিলে ৩০০রও বেশি বড়ো চা বাগান রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে চা শ্রমিকদের ভোট একটি বড়ো ফ্যাক্টর হবে। কৃষি বলয়ের তপশিলি জনসংখ্যার একটি অংশের মধ্যে জাতিসত্তার ইশ্যুটি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই ইশ্যুটি কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিজেপিকে সমর্থন না করে প্রার্থী দাঁড় না করানোর বিষয়ে কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে, কামতাপুর পিপলস পার্টি নিজেরাই আটটি আসনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কামতাপুরি ভোট বিভাজিত হবে। ভোট বিভাজনের এই সমীকরণে শেষ পর্যন্ত কোন দল লাভবান হবে সেদিকে সবার নজর থাকবে।
কামতাপুর পিপলস পার্টির নেতা সুবল রায় জানান, কামতাপুরি মানুষের স্বার্থে তাঁরা উত্তরবঙ্গের আটটি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন। নিশ্চিতভাবেই ভোট বিভাজন হবে। সুবলবাবুর বক্তব্য, রাজনৈতিক স্বার্থেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা বিরসা তিরকি বলেন, গত দুটি ভোটে চা বলয়ে ভোট বিভাজিত হয়েছে। এবারে আমরা সংগঠিতভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনীত প্রার্থীদের ভোট দেব। চা বাগান তৃণমূল কংগ্রেস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহসভাপতি মান্নালাল জৈন জানান, চা বলয়ে এবারে অবস্থান পালটাবে। সাংগঠনিক শক্তির নিরীখে ভোট হবে।
বাম প্রভাবিত ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহসম্পাদক প্রকাশ রায় বলেন, শ্রমিকরা আন্দোলনে সব সময় বামপন্থীদের পাশে থাকলেও ভোটের বাক্সে তার প্রতিলফন হচ্ছে না। তবে এবার বামপন্থীরা ভালো ভোট পাবেন বলে তাঁরা আশা করছেন বলে প্রকাশবাবু জানান। বিজেপির উত্তরবঙ্গের কোঅর্ডিনেটর দীপেন প্রামাণিক বলেন, চা শ্রমিকরা কংগ্রেস, বামফ্রন্ট ও তৃণমূল কংগ্রেসকে দেখেছেন। চা বলয়ে জাতিসত্তার ইশ্যু থাকায় এবারে আমরা ভালো ভোট পাব বলেই মনে করছি।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2FAuqoz
March 25, 2019 at 03:22PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন