ঢাকা, ১৫ মার্চ- নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য। কেউই মেনে নিতে পারছেন না নিউজিল্যান্ডের মতো শান্তি প্রিয় একটি দেশে এমন সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। এই হামলা কেবল জনগণের ওপর হয়নি, হয়েছে ক্রিকেটের ওপরও। নিরাপত্তার অজুহাতে কোন দল নিউজিল্যান্ডে সফর করতে না চাইলে ক্ষতিটা ক্রিকেটেরই হবে। বাংলাদেশে এমন ঘটলে, অন্য দলগুলো কি তাই করতো? সাবেক ক্রিকেটাররা মনে করেন, বাংলাদেশের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও বিদেশি দলগুলো বাংলাদেশকে কোন সুযোগ না দিয়েই দেশে ফিরে যেত। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা কিন্তু তেমনটা করেননি। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের পরামর্শ মতোই তারা ঘণ্টা দুয়েক ক্রাইস্টচার্চ স্টেডিয়ামে অবস্থান করেছেন। এরপর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় হোটেলে ফিরে গেছেন। পরবর্তীতে দুই বোর্ডের আলোচনার মাধ্যমে টেস্টটি বাতিল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। যদিও ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা ভীত-সন্ত্রস্ত। এমন অবস্থায় শনিবার মাঠে নামা কোনওভাবেই সম্ভব ছিল না মুশফিকদের। এর সঙ্গে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষেও খেলা শুরু করা সম্ভব ছিল না। কেননা ক্রাইস্টচার্চের নাজুক পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তাই সবকিছু মিলিয়ে ম্যাচটি বাতিল হয়ে গেছে। তবে এমন ঘটনা বাংলাদেশে হলে বিদেশি দলগুলো কী করতো? বাংলাদেশ কি পারতো তাদের যেতে না দিয়ে টুর্নামেন্ট কিংবা সিরিজ চালিয়ে নিতে? বাংলাদেশ যে কঠোর নিরাপত্তার ব্যাপারে উদার এর আগে বহুবার প্রমাণ দিয়েছে। বিদেশি কোন দল বাংলাদেশে টুর্নামেন্ট খেলতে কিংবা দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অংশ নিতে এলেই নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে টিম হোটেল, ভেন্যু সব জায়গাতেই তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে। সবশেষ কয়েক মাস আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আয়োজন করা হয়েছে বিপিএল। সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু মনে করেন বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটলে বিদেশি দলগুলো বাংলাদেশকে কোন সুযোগই দিতো না, বিদেশি দলগুলো আমাদের কোন সুযোগই দিতো না। নির্দিষ্ট বোর্ড তাদের ফিরিয়ে নিতো দ্রুততার সঙ্গে। আমার মনে হয় ওরা যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে পারেনি। তাই বাংলাদেশ সঠিক কাজটাই করেছে। সাবেক এই অধিনায়ক মনে করেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ নিরাপত্তা বাহিনী দক্ষতার সঙ্গেই এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাতে করে এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনা নেই। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বকাপসহ অনেক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে করতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠছে। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে এমন ঘটনা ঘটলেও আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী সেটা সামাল দিতে পারতো। বেশ কয়েকবার নিউজিল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা আছে বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের। এমন একটি দেশে এই ঘটনা ঘটেছে দেখে বেশ হতাশ তিনি, আমি কয়েকবার নিউজিল্যান্ড সফর করেছি। ওদের ওখানে এমন ঘটনা ঘটা খুবই দুঃখজনক। যদিও সবাইকেই সচেতন থাকতে হয়। শুধু ওদের (নিউজিল্যান্ড) নয়, বাইরের সবগুলো দেশই আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে। আমাদের দেশে কোন দল খেলতে এলে তিন স্তরের নিরাপত্তা পায়, বাইরের দেশে আমরা খেলতে গেলে তার দশভাগও পাই না। শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। টিম বাস মসজিদের সামনে পৌঁছানোর পর অচেনা এক নারীর সতর্কবার্তাতে বেঁচে যায় তামিমসহ অনেকে। অথচ ৫ মিনিট আগে মসজিদে পৌঁছালে ক্রিকেট দুনিয়ার জঘন্যতম ঘটনাও ঘটে যেত পারতো। তাই কিছুটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই রাজ্জাক এ প্রতিবেদককে বললেন, আমাদের দেশে এমন হামলা হলে কোনও কথাই শুনতো না বিদেশি দলগুলো। সবাই দাবি তুলতো ক্রিকেটারদের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। আমিতো আজকে চাইলেই দাবি করতে পারি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে টার্গেট করে এই হামলা চালানো হয়েছে। স্রেফ কয়েক মিনিটের জন্য ওরা বেঁচে গেছে। আমরা এতো এতো নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েও অস্ট্রেলিয়াকে দুইবার আনতে পারিনি। সত্যিকথা হচ্ছে এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ দল সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। বাংলাদেশে এমন ঘটনা হলে বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চিতভাবেই চাইতো বিদেশি দল যেন সিরিজটা শেষ করে যায়। ক্রিকেটের স্বার্থে বাংলাদেশ দলও চাইলে এমনটি করতে পারতো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাজ্জাক বলেছেন, নিরাপত্তার অজুহাতে ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাওয়াটা কোনওভাবেই উচিত নয়। কিন্তু আমাদের ক্রিকেটারদের কথাও চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশ তো ওদের (নিউজিল্যান্ড) সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমার ধারণা আমাদের দেশে এমনটা হলে কেউই আলোচনা করতো না। নিজেদের সিদ্ধান্তটা নিজেরাই নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশ ছাড়তো। সাবেক স্পিনার মোহাম্মদ রফিক অবশ্য মনে করেন এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কখনোই পড়বে না, যারা এগুলো ঘটায় তারা ক্রিকেটের শত্রু। এমন ঘটনা বাংলাদেশে হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ক্রিকেটপ্রেমী জাতি। কেউই এমন করবে না। নিউজিল্যান্ডকে যতখানি জানি সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত। তারপরও ঘটে গেছে। ছেলেরা সবাই ভীত হয়ে পড়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনাই ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে দেখছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেছেন, ছেলেদের জন্য যেটা ভালো হয়েছে আমরা দ্রুততার সঙ্গেই সেটা করেছি। এমন মুহূর্তে কেউই চাইবে না ঘটনাস্থলে থাকতে। সবাইতো চায় নিজ দেশে খেলা হোক। নিউজিল্যান্ডে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। জাতীয় দলের সাবেক পেসার হাসিবুল হোসেন শান্তর মতে এমন হামলা হলে ক্রিকেট খেলা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর যে হামলা হয়েছিল, সেটা কিন্তু নিউজিল্যান্ডের হামলার মতো না। সুতরাং এটা ক্রিকেটকে আক্রান্ত করেছে তা বলবো না। খেলার মাঠে, কিংবা ক্রিকেটারকে টার্গেট বানিয়ে এমন ঘটনা হলে সব দেশের জন্য কঠিন হবে ক্রিকেট খেলা। নিউজিল্যান্ডের মতো শান্তি প্রিয় দেশে এই হামলার ঘটনায় ক্রিকেটারদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত বুদ্ধিমানের হয়েছে বললেন তিনি, নিউজিল্যান্ডের মতো শান্ত একটি দেশে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যা মেনে নেওয়ার মতো নয়। সামনে থেকে এমন দৃশ্য দেখে ক্রিকেট খেলা মোটেও সম্ভব নয়। ছেলেদের ফিরিয়ে নিয়ে আসাই বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দুপুরে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট বাতিল হওয়ার কারণ হিসেবে বলেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের পরিস্থিতি অনুযায়ী ওখানে টেস্ট খেলা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। সেই জন্য দুই বোর্ডের মধ্যেই আমাদের আলোচনা হয়েছে এবং আমরা খেলাটাকে বাতিল করেছি। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন আর/০৮:১৪/১৫ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2FeQDIx
March 16, 2019 at 03:48AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন