এ কে আজাদ, চাঁদপুর : ‘মা তুমি কেমন আছ? খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করোতো? আগামী রমজানে আমি দেশে আসবো মা’। গত মঙ্গলবার মায়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলছিলেন চাঁদপুরের মতলব দক্ষিন উপজেলার নিউজিল্যান্ড প্রবাসী মোজাম্মেল হক সেলিম। কিন্তু মায়ের মুখ আর দেখা হলো না তার। এর আগেই গত শুক্রবার নিউজল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের আল নূর মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গেলে এক অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভত শেতাঙ্গ সন্ত্রাসীর নৃসংশ হামলায় নিহত হন তিনি। তার মৃত্যু সংবাদে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীদের মাঝে।
মুজাম্মেল মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদের গাঁও ইউনিয়নের হুর মাইশা গ্রামের মৃত হাবিব উল্লাহ মিয়াজীর ছেলে। তার মায়ের নাম জামিলা খাতুন (৭০)। দুই বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে মুজাম্মেল ছিল সবার ছোট। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় খোশনেয়ারা বেগম, মেঝ বোন জোছনা আক্তার, ভাইদের মধ্যে বড় মো. আব্দুল মালেক ও শাহাদাৎ হোসেন।
মোজাম্মেল হক ঢাকা মার্কস ডেন্টাল মেডিক্যাল হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করে উচ্চতর শিক্ষার জন্যে স্টুডেন্ট ভিসায় ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ড পাড়ি জমান। সেখানে স্থানীয় একটি ম্যাডিকেল কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ করতেন তিনি।
মোজাম্মেলের মা জামিলা খাতুন বলেন, গত মঙ্গলবার আমার ছেলে আমাকে ফোন দেয়। এসময় সে আমার খোঁজ-খবর নেয়। আমাকে খাওয়া-দাওয়া ঠিক মত করতে বলে। কিন্তু শুক্রবারের পর থেকে তার সাথে আর কোজ যোগাযোগ নেই। তার নম্বরে ফোন করে তাকে আর পাচ্ছি না। কথাগুলো বলছিলেন আর বিলাপ করছিলেন তিনি। এসময় তিনি আহাজারি করে তার ছেলেকে তার বুকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে মিনতি করতে থাকেন। তিনি বলেন, আমার বাবার লাশটা আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হউক।
মোজাম্মেলের বড় ভাই আব্দুল মালেক বলেন, মসজিদে হামলার পর থেকে আমার ভাই নিখোঁজ অবস্থায় ছিল। গতকাল (শনিবার) রাতে কুমিল্লা চান্দিনা এলাকার নিউজিল্যান্ড প্রবাসী মোজাম্মেলের বন্ধু মজিবুর রহমান ফোন করে জানান আমার ভাই আর বেচেঁ নেই। ওই জায়গার একটি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় বলে জানান তিনি। হামলার সময় তিনি দৌঁড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন বলে জানান।
আ. মালেক আরো বলেন, আমার বাবা ২০০১ মারা যান। আমরা অনেক কষ্ট করে আমার ভাইকে মেডিক্যালে পড়িয়েছি। ২০১৫ সালে অগ্রণী ব্যাংকের মতলব নারায়নপুর শাখা থেকে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ করে তাকে পড়াশুনার জন্যে নিউজিল্যান্ডে পাঠাই। কিন্তু আমার ভাই পড়াশুনা শেষ করে আর আমাদের মাঝে ফিরে আসলো না। আমরা হতদরিদ্র মানুষ। এতো বড় ঋণের ভোজা কিভাবে শোধ দেব জানি না। সরকারের নিকট আমাদের আবেদন আমাদের এই ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করেন।
মোজাম্মেলের মেঝ বোন জোছনা আক্তার বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর অত্যন্ত কষ্ট করে আমার ভাইকে আমরা পড়াশুনা করিয়েছে। আমাদের পরিবারের সদস্যরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে তাকে বিদেশে পাঠিয়ে ছিল পড়াশুনা করাতে। কিন্তু সন্ত্রাীদের হামলায় আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মনজুর হোসেন রিপন মীর বলেন, মোজাম্মেলকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে তার ভাই-বোনেরা। আর্থিক অবস্থা ততোটা ভালো না হলেও ব্যাংক থেকে অনেক টাকা ঋণ করে তাকে বিদেশে পড়াশুনা করতে পাঠিয়ে ছিল তারা। সরকারের কাছে দাবি জানাই তাদের পরিবারকে যেন আর্থিক ভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি মোজাম্মেলের মহদেহটা যেন দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
from প্রবাস – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2JhXPry
March 17, 2019 at 12:56PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.