আলিপুরদুয়ার, ২৩ মার্চঃ ডুয়ার্সের চা বলয়ে নেপালি আর আদিবাসী ভোটের অঙ্ক মাথায় রেখেই আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে জন বারলাকে প্রার্থী করল বিজেপি। বৃহস্পতিবার রাতে বিজেপির প্রার্থীতালিকায় জন বারলার নাম ঘোষণা হওয়ার পর এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শুক্রবার আলিপুরদুযারে জেলা নির্বাচনি কার্যালয়ে বসে গোর্খা সম্প্রদায়ের সমস্ত ভোট তিনিই পাবেন বলে দাবি করেছেন জন। তিনি বলেন, গোর্খাদের একটা ভোটও তৃণমূলে যাবে না। সবাই বিজেপিকে সমর্থন করবে। যে কয়েকজন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা তৃণমূলে গিয়েছেন তাঁরাও আমাদের ভোট দেবেন। জনের কথায়, তৃণমূল কংগ্রেস গোর্খাদের মন জিততে পারেনি। তাদের জোর করে ভয় দেখিয়ে দলে টানা হয়েছে। যেদিন ভোট হবে সেদিনই তা বোঝা যাবে। আদিবাসী ভোট নিয়ে জন অবশ্য এখনই কোনো মন্তব্য করেননি।
একসময় ডুয়ার্সে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুংয়ের ডানহাত হয়ে উঠেছিলেন জন বারলা। তাঁর জন্যই কার্যত দু-টুকরো আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। বিরসা তিরকির নেতত্বাধীন আদিবাসী বিকাশ পরিষদ বারলার কট্টর বিরোধিতা করলেও চা বলয়ে আদিবাসীদের একাংশ বারলার সঙ্গে চলে যায়। এই দুই সমীকরণকে মাথায রেখেই এবার জনকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। বিমলের সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরে বিমলের অনুগত নেপালি ভোটাররা জনকেই সমর্থন করবেন বলে মনে করছে বিজেপি নেতত্ব। তবে,বিজেপির নেপালি ভোট পাওয়ার অঙ্ক এত সহজে মিলবে বলে মনে করছে না রাজনৈতিক মহল। বিমলপন্থী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মধুকর থাপা বলেন, জন বারলার সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। জন প্রার্থী হয়েছেন শুনেছি। আমরা কাকে সমর্থন করব, তা এখনও ঠিক করিনি।
আদিবাসী ভোটেও জনের রাস্তায় কাঁটা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পালটা আক্রমণে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকি কলকাতা থেকে টেলিফোনে বলেন, জন বারলা আদিবাসী বিকাশ পরিষদ থেকে বহিষ্কৃত নেতা। আদিবাসী-বিরোধী কাজ করার জন্য তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ২০১১ সালে মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের হাতে জন বারলা গোটা আদিবাসী সমাজটাকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন। বিমল গুরুং ৩৯৮টি মৌজা নিয়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের কথা বলেছিলেন। জন তাতে লিখিত সমর্থন দিয়েছিলেন। আদিবাসী সমাজ এখনও সেই কথা ভোলেনি। জন বারলাকে কোনো আদিবাসী ভোট দেবেন না।
বিরসাকে একহাত নিয়ে বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, বিরসা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে তিনি তৃণমূলকে সমর্থন করছেন। তিনি তো এখন তৃণমূলের হয়ে এইসব কথা বলবেনই। আর রাজ্যের মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলে দিয়েছেন এখন গোর্খাল্যান্ড ইশ্যু বলে কিছু নাই। সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। তাহলে কেন বিরসা ২০১১ সালের পুরোনো কথা টেনে আনছেন। তিনি বলেন, বিরসা নিজেও জানেন যে এখন আর আদিবাসী বিকাশ পরিষদের কোনো গুরুত্ব নেই। একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের শাখায় পরিণত করেছেন। তৃণমূল নেতারা যা শিখিযে দিচ্ছেন তিনি তাই বলছেন।
শুক্রবার সকালে জন বারলা সেবক কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে সোজা আলিপুরদুযারে আসেন। এখানে তিনি দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। নিজের নামে দেয়াল লিখন শুরু করেন। আগামী সোমবার তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2ToXaV6
March 23, 2019 at 02:18PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন