শুভদীপ শর্মা, লাটাগুড়ি, ২৬ মার্চঃ ভালো রাস্তা নেই, পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। যখন তখন বন্যপ্রাণীর হানাদারির ভয় রয়েছে। এত সমস্যা সত্ত্বেও এবারও নদী, জঙ্গল, রেললাইন পার করে বন্যপ্রাণীর ভয় উপেক্ষা করে বামনি বনবস্তির ভোটাররা প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে ভোট দিতে আসবেন। আশা একটাই, হয়তো সরকার মুখ তুলে চাইবে। তাঁদের এতদিনের দুঃখ-দুর্দশা সব এক নিমেষেই ভালো হয়ে যাবে।
গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া মেটেলি ব্লকের বাতাবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ২১/৯৯ বিচাভাঙ্গা বনবস্তি বুথ। জঙ্গল লাগোয়া বিচাভাঙ্গা সরস্বতী এবং বামনি বনবস্তি নিয়ে গঠিত এই বুথে ৩৯৬ জন ভোটার রয়েছেন। লাটাগুড়ি-মালবাজার ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক, লাটাগুড়ির জঙ্গল ও নেওড়া নদী এই বুথটিকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছে। জাতীয় সড়কের একপাশে বিচাভাঙ্গা বনবস্তি রয়েছে। জাতীয় সড়ক পেরোবার পর লাটাগুড়ি জঙ্গল পার করে সরস্বতী বনবস্তিতে যেতে হয। এরপর নেওড়া নদী রয়েছে।
এই নদী পেরোলে বামনি বনবস্তি রয়েছে। তিন বনবস্তিতেই তীব্র পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। বছরের বেশির ভাগ সময় বনবস্তিতে থাকা অধিকাংশ কুয়ো শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। সামান্য যে কয়েকটি কুয়ো আছে সেগুলির জল খাওয়া যায় না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সমস্যার বিষয়ে বিভিন্ন মহলের দ্বারস্থ হয়ে আজ পর্যন্ত কোনো কাজের কাজ হয়নি। এই তিন বনবস্তিতে কোনো পাকা রাস্তা নেই বললেই চলে।
সারা বছর ধরেই বন্যজন্তু বিশেষ করে হাতির দল গ্রামে ঢুকে বাড়িঘর ভাঙচুর, জমির ফসল নষ্ট করে যায়। তিন বনবস্তিতে সমস্যা এক হলেও এই বুথের বামনি বনবস্তিতে থাকা প্রায় শখানেক ভোটারকে একটু বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, এই বনবস্তি থেকে বিচাভাঙ্গা প্রাথমিক বনবস্তির বুথে আসতে হলে প্রায় ১০ কিমি পথ ঘুরে আসতে হবে।
এতে অনেকটাই সময় লাগবে। নিজেদের প্রয়োজনে এখানকার বাসিন্দারা এই রুটটিকে কিছুটা শর্টকার্ট করে নিয়েছেন। গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া লাটাগুড়ি-মালবাজার রেলপথ ধরে, নেওড়া সেতু পার করে লাটাগুড়ির জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রায় চার কিমি রাস্তা হেঁটে এই বনবস্তির বাসিন্দারা ভোটকেন্দ্রে যান। এই রাস্তায় বাইসন, হাতি, গন্ডারের মতো বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর হামলার ভয় রয়েছে। তাই এই রাস্তায় যাতায়াতে প্রাণের ঝুঁকি থেকেই যায়। তবুও নিজেদের সমস্যা মেটার আশায় বাসিন্দারা এবারও এই দুর্গম পথ পেরিয়ে ভোট দিতে যাবেন।
বিজেপির মেটেলি মণ্ডল সমতল সভাপতি দীপঙ্কর ধর বলেন, বামফ্রন্টের মতো তৃণমূল কংগ্রেসও সারা রাজ্যের পাশাপাশি এখানে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করেনি। এ নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। বিষয়টিকে ভোটের ইশ্যু করা হয়েছে বলে তিনি জানান। দীপঙ্করের কথায়, এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রচার চালিয়ে সাড়া মিলছে।
তৃণমূল কিষান খেতমজুর সংগঠনের মেটেলি ব্লক সভাপতি হুসেন হাবিবুল হাসান বলেন, ওই এলাকায় নদীভাঙনের সমস্যা আছে। সমস্যা মেটানোর কাজ চলছে। হুসেন জানান, এলাকায় সোলার লাইট দেওয়া হয়েছে। সমস্যা মেটাতে জেলাপরিষদে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা পাঠানোর পর সেগুলি পাসও হয়ে গিয়েছে। ভোটের পরই কাজ শুরু হবে বলে হুসেন সাহেব জানিয়েছেন।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2HSLvvp
March 26, 2019 at 03:47PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন