বিশ্বনাথে চেয়ারম্যান পদে লড়াই হবে ত্রিমুখী

Biswanath-Pic-16.03.19মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: প্রবাসী অধ‌্যুষিত বিশ্বনাথে আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। উপজেলার সর্বত্র নির্বাচনী হাওয়া বিরাজ করলেও ভোটারদের মাঝে ভোট দেয়া নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তবে এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী কে হচ্ছে এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ, আলোচনা-সমালোচনা। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত লড়াই হবে তিন জনের মধ্যে। আর এই তিন জন প্রার্থীই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ‘নৌকা’ প্রতীকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এস এম নুনু মিয়া, ‘কাপ-পিরিচ’ প্রতীকে উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী ও ‘আনারস’ প্রতীকে যুক্তরাজ্যের কলচেষ্টার বিএনপির সভাপতি মিছবাহ উদ্দিন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে নির্বাচন করায় ইতিমধ্যে সুহেল আহমদ চৌধুরী ও মিছবাহ উদ্দিনকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া চেয়ারম্যান পদে ‘মিনার’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী রুহুল আমীন। তবে প্রচার-প্রচারণায় এই প্রার্থীর কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

এদিকে, নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুই বিএনপি নেতা প্রার্থী থাকায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী এসএম নুনু মিয়া। এমনটাই মনে করছেন অনেকেই। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভেতরে গ্রুপিং দ্বন্দ্ব থাকলেও নৌকা’র প্রার্থী এস এম নুনু মিয়ার বিজয় নিশ্চিত করতে দুটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, দুই ভাগে বিভক্ত উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি অংশ রয়েছেন সুহেল আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে এবং মিছবাহ উদ্দিনের সঙ্গে রয়েছেন উপজেলা বিএনপি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন মূল অংশের নেতাকর্মীরা। বিএনপির এমন দ্বিধাবিভক্ত অবস্থায় বিএনপি ঘরানার এই দুই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপি নেতা নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর প্রতি তার নিজ উপজেলা বিশ্বনাথের ভোটারদের আবেগ-ভালোবাসা থাকায় বিগত সংসদ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইলিয়াস পরিবারের সমর্থন নিয়ে যারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছের তারা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এবারের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় ইলিয়াস পরিবার কোনো প্রার্থীকে সমর্থন কিংবা তাদের পক্ষে কাজ করছেন না। তবুও উভয় প্রার্থী (সুহেল চৌধুরী ও মিছবাহ উদ্দিন) বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নিজেদেরকে ইলিয়াস পরিবারের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে দাবি করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে, বিগত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী অংশগ্রহণ করে প্রায় ১৬ হাজার ভোট পেয়ে পরাজিত হন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রায় ৭হাজার ভোট পেয়ে পরাজিত হন। সেই হিসেবে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের প্রায় ২৩ হাজার নেতাকমী/সমর্থক রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এবারের উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কিংবা জামায়াত ও সমমনা ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর (খেলাফত, জমিয়ত) কোনো প্রার্থী না থাকায় তাদের ভোট যদি এক বাক্সে পড়ে তাহলে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এ কে এম দুলাল জানিয়েছেন তারা কোনো প্রার্থীকে দলীয়ভাবে এখনও সমর্থন করেননি। সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহইয়া চৌধুরীর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নেতাকর্মীরা নির্বাচনে ভোট প্রদান করবেন বলে তিনি জানান। তবে উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা আবু বকর ও এম এ রব ইতিমধ্যে নৌকা’র প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছেন। উপজেলা জাতায়াতের নায়েবে আমীর মাস্টার ইমাদ উদ্দিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানিয়েছেন দলীয় নিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না।

এছাড়া এবারের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- জেলা বিএনপির সদস্য ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিন (মাইক), উপজেলা আওয়ামী লীগ মনোনীত উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আলতাব হোসেন (তালা), উপজেলা আঞ্জুমানে আল-ইসলাহর কোষাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান (বই), আওয়ামী লীগ নেতা নোয়াব আলী (গ্যাস সিলিন্ডার), জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান খালেদ (চশমা), বিশ্বনাথ ক্রিকেট এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম (টিউবওয়েল), ছাত্রদল নেতা জুবেল আহমদ (উড়োজাহাজ) ও সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন রুবেল (টিয়া পাখি)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে বর্তমান মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম স্বপ্না শাহীন (বৈদ্যুতিক পাখা), উপজেলা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জুলিয়া বেগম (কলস), সিলেট জেলা বিএনপির মহিলা নেত্রী নাজমা বেগম (প্রজাপতি), নুরুন্নাহার ইয়াসমিন (ফুটবল) ও নেহার বেগম পেয়েছেন (পদ্মফুল)।

ভোটার মনে করছেন- চেয়ারম্যান পদে এস এম নুনু মিয়া (নৌকা), সুহেল আহমদ চৌধুরী (কাপ-পিরিচ) ও মিছবাহ উদ্দিন (আনারস) এর মধ্যে মূলত ত্রিমুখী লড়াই হবে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে আহমেদ নূর উদ্দিন (মাইক), আলতাব হোসেন (তালা) ও হাবিবুর রহমানের (বই) মধ্যে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেগম স্বপ্না শাহীন (বৈদ্যুতিক পাখা), জুলিয়া বেগম (কলস) ও নুরুন্নাহার ইয়াসমিন (ফুটবল) এর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমনটাই মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে নির্বাচন কতটুকু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে এ নিয়ে ভোটার সাধারণ, প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে আশঙ্কা কাজ করছে।



from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2TKe1Xc

March 17, 2019 at 12:42PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top