শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা, ১১ মার্চঃ চিকিৎসা করানোর সাধ্য নেই হতদরিদ্র আদিবাসী দম্পতির। তাই দাঁড়াতে গেলেই মাটিতে পড়ে যাওয়া বছর পাঁচেকের বিশেষভাবে সক্ষম ছেলে নেহালকে সুস্থ করতে বাড়ির উঠোনে খোঁড়া গর্তই ভরসা। পাযে জোর বাড়াতে তাতেই রেখে দেওয়া ওই একরত্তিকে। এখনও মেলেনি কোনো সাহায্য। শুধু তাই নয়, দম্পতির বছর নয়ের মেয়ে নেহা স্কুলের মুখ দেখেনি। জলপাইগুড়ির শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুব্রত ভদ্র বলেন, খবর পেয়ে এদিন শিশু সুরক্ষা কমিটির ব্লক ও গ্রামস্তরের কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি এবং চেয়ারপার্সন-এর প্রতিনিধিরা ওই বাড়িতে যান। রিপোর্ট পাওয়ার পর শিশুটির কী ধরনের সাহায্য দরকার সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। যদি দেখা যায়, জেলাস্তরের সাহায্য প্রযোজন তবে সেটাও করা হবে। যদিও লুকসান চা বাগানের গুয়াবাড়ি লাইন শ্রমিক মহল্লার এমন দুই শিশুর খবর প্রশাসনের কাছে পৌঁছাতে এত দেরি হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ওই দম্পতির নাম ভরত ওরাওঁ ও রেণুকা ওরাওঁ। দুজনের কারোরই বাগানে কাজ নেই। ভরসা পরিবারের একমাত্র রোজগেরে বেজেনিয়া ওরাওঁ নামে এক মহিলা। তিনি সম্পর্কে ভরতের শাশুড়ি। পরিবারটি জানিয়েছে, যে বয়সে শিশুদের হাঁটাচলা শুরু হয় তখন থেকেই নেহাল অন্যরকম। নিজের পায়ে ভর দিযে দাঁড়ানোর ক্ষমতা তার নেই। এখনও মাটিতে দেহ টেনেই সে চলে। কথাও বলতে পারে না ঠিকমতো। একদিন পায়ে জোর আসবে, এমন বিশ্বাস থেকে শিশুটির বাবা-মা বাড়ির উঠোনে
প্রায ফুট দুয়েকের গর্ত খুঁড়ে এখন সেখানেই দিনভর রেখে দেয় তাকে। যদিও খানিকক্ষণ থেকেই ক্রমাগত কেঁদেই চলে নেহাল। দিনমজুরির কাজ জোটাতে সকাল হলেই মা-বাবা হন্যে হযে ঘুরে বেড়ায় ওই তল্লাটে। তখন ভাইয়ের দেখাশোনার দাযিত্ব দিদি নেহার কাঁধে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বা গর্তের ভিতর সে যখন কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত তখন তাকে তুলে এনে ফের গর্তে ঢুকিয়ে দেওয়াই তার কাজ।
লুকসান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মনোজ মুন্ডা বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ করব। সোমবার নেহা ও নেহালের বাবা ভরত বাড়ির দাওয়ায বসে সেই গর্তের দিকে তাকিয়ে বলে চলেন, একবেলা খেলে পরের বেলা কী খাব, জানা নেই। এমন অবস্থায় ছেলেকে চিকিৎসা করাব কীভাবে? যদি কেউ এগিযে আসে তাহলে খুব ভালো হয। তিনি বলেছেন, মেয়ের জন্মের শংসাপত্র নেই। আমাদের অনুপস্থিতিতে বাড়িতে ছেলেকে কে দেখবে, সেকারণে তাকে স্কুলে ভরতি করা হযনি। মঞ্জরী ওরাওঁ নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ভরত-রেণুকাদের আর্থিক পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ। পরিবারটিকেও সাহায্য করা দরকার। সম্প্রতি নেহালের বিষয়ে খোঁজখবর নিযে এসেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনি-র জলপাইগুড়ির কোঅর্ডিনেটার দিগ্বিজয় নাহা। তিনি বলেন, আরও আগে সাহায্য করা গেলে খুব ভালো হত। নাগরাকাটা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ অভিষেক মণ্ডল বলেন, শিশুটির বিষয়ে আমাদের জানা আছে। ওকে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হবে। নাগরাকাটার শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক কৃষ্ণকান্ত দাস বলেন, দ্রুত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। খতিযে দেখে প্রযোজনীয পদক্ষেপ করা হবে।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2VQU91h
March 12, 2019 at 12:04PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন