কলকাতা, ০৭ মার্চ- স্নায়ুর লড়াই বাড়ছিল। রক্তচাপও বাড়ছিল রাজনীতির শিরা-ধমনীতে। সপ্তাহ খানেকের সেই টানটান রাজনৈতিক চিত্রনাট্য এখন প্রায় ক্লাইম্যাক্সে। বুধবার সন্ধ্যার পরে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করলেন রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মন্ত্রী, চালালেন মানভঞ্জনের চেষ্টা। কিন্তু দক্ষিণ কলকাতায় বেশি রাত পর্যন্ত চলা এক বৈঠকে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেল যে, ৯-১০ মার্চের মধ্যে চমকপ্রদ কোনও ঘোষণা করতে চলেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় নির্বাচন সামলানোর দায়িত্ব পেয়েছেন বিজেপির যে নেতারা, তাঁদেরই দুজন বুধবার রাতে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘন্টা দেড়েক বৈঠক করেছেন বলে জানা গিয়েছে। সোমবার থেকে বুধবারের মধ্যে এই নিয়ে তিন বার বৈশাখীর সঙ্গে বৈঠক করলেন বিজেপি তথা সঙ্ঘের নেতারা। বুধবার রাতের এই বৈঠকটি বিজেপির জন্য অনেকটাই ফলপ্রসূ হয়েছে বলে খবর। যিনি সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছিলেন বলে গোটা প্রক্রিয়াটা ঝুলে ছিল, সেই শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ প্রায় স্থির করে ফেলেছেন এবং সেই পদক্ষেপ তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াতে পারে। শোভনের ঘনিষ্ঠরাই এ কথা জানাচ্ছেন। কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ্যা তথা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বছর খানেক আগেও ছিলেন তৃণমূলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু গত এক বছরে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হয় এবং ক্রমশ বিজেপির কাছাকাছি পৌঁছে যান তিনি। বৈশাখীর সূত্র ধরে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। সে ঘনিষ্ঠতা এ বার গাঁটছড়ায় রূপান্তরিত হতে চলেছে বলে জোর জল্পনা রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। বুধবার রাতে বিজেপির যে দুই নেতা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ওই কলেজ শিক্ষিকাকে প্রার্থী করার বিষয়ে সেই দুই নেতা অত্যন্ত আগ্রহী বলে খবর। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এই নির্বাচনেই বিজেপির টিকিটে লড়তে দেখা যাক বা না যাক, বৈশাখীকে ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতেই হবে এই রকম বার্তাই বৈঠকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত দুপক্ষই গোপনীয়তা বহাল রাখার চেষ্টায়। বিজেপি কোনও প্রকাশ্য বিবৃতি এখনও দেয়নি এই বৈঠক প্রসঙ্গে। আর আনন্দবাজারকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আবার বলছি, রোজ অনেক মানুষের সঙ্গেই আমার দেখা হয়, কথা হয়। তাই কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার ব্যাপারে আলাদা করে কী বলার থাকতে পারে, আমি বুঝতে পারছি না। রাজ্য বিজেপির একাংশ অবশ্য শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে নিজেদের অনাগ্রহের কথা প্রকাশ্যেই বলছে। শোভন বা বৈশাখীকে প্রার্থী করার বিষয়ে তাঁদের আপত্তির কথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। সঙ্ঘের একটি অংশকেও রাজ্য বিজেপির এই অংশ পাশে পেয়েছে বলে খবর। কিন্তু বিজেপির অন্য একটি অংশ জানাচ্ছে, এ বিষয়ে শেষ কথা অমিত শাহ-ই বলবেন, আর কেউ নন। শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি-তে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা নতুন নয়। শোভনের সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর থেকেই এই জল্পনা বাড়ছিল। কিন্তু লোকসভায় প্রার্থী করতে চেয়ে শনিবার সকালে বৈশাখীকে মুকুল রায়ের ফোন এবং সঙ্ঘ ও বিজেপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে সোমবার প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতার একটি জায়গায় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পর থেকে শোভনের অবস্থান নিয়ে গুঞ্জন তীব্র হয়ে ওঠে। শনিবারই বেহালা এলাকার বেশ কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলর ছুটেছিলেন শোভনের বাড়ি। মঙ্গলবার আরও কয়েকজন প্রাক্তন মেয়রের সঙ্গে দেখা করে তাঁর মেজাজ বোঝার চেষ্টা করেন। শোভনের মর্জি সংক্রান্ত তথ্য দলের উপর মহলেও পৌঁছয় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। শোভন ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, বুধবার সন্ধ্যার পরে রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মন্ত্রী ফোন করেন শোভনকে। কুশল বিনিময় করেন, শোভনকে কেন আজকাল কোনও দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না, তা জানতে চান। দলকে আবার আগের মতো সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। শোভন কলকাতায় রয়েছেন, নাকি দিল্লিতে, তা-ও জানতে চান। এই জিজ্ঞাসা বিশেষ তৎপর্যপূর্ণ। মেয়র ও মন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও স্তরের নেতা-কর্মীই বেশি যোগাযোগ রাখছিলেন না। কয়েক বার মাত্র যোগাযোগ করেছিলেন সুব্রত বক্সী এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু বিজেপির দিকে শোভনের ঝুঁকে পড়ার জল্পনা অক্সিজেন পেতেই প্রথমে কাউন্সিলররা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। পরে কিছু অনুগামী তাঁকে ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দেন। সব শেষে বুধবার ওই মন্ত্রী তথা কলকাতার রাজনীতিতে বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ওই নেতার ফোন পান শোভন। মেয়র নির্বাচনের ঠিক আগেও ওই নেতার ফোন শোভন পেয়েছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে এ পর্যন্ত ওই নেতার কাছ থেকে আর কোনও ফোন তিনি পেয়েছেন কি না, শোভন তা মনে করতে পারছেন না বলেই খবর। ওই মন্ত্রীর কাছ থেকে ফোন পাওয়ার পরে কি শোভনের অবস্থান কোনও ভাবে বদলেছে? প্রাক্তন মেয়রের ঘনিষ্ঠদের দাবি, শোভন মনে করছেন যে, দলে তিনি অসম্মানিত এবং নিজের সম্মানের কথা মাথায় রেখেই তিনি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। বিজেপির যে দুই নেতা বুধবার রাতে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তাঁরা আগামী ৯ মার্চ দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শোভন-বৈশাখীর যোগদানের বিষয়টা সম্পর্কে শাহ নিজেই খোঁজখবর রাখছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তাই বাংলায় নির্বাচন সামলানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে শাহের বৈঠকের পরেই শোভন-বৈশাখী সংক্রান্ত জল্পনার চূড়ান্ত পরিণতি জানা যাবে। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত জানাচ্ছে, অঘটন না ঘটলে ৯ বা ১০ মার্চ বড় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে চলেছেন শোভন ও বৈশাখী। আর/০৮:১৪/০৭ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2NMT87J
March 07, 2019 at 07:18PM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
মাওবাদী হানায় মৃত তথা নিখোঁজ ৪ জনের পরিবারকে নিয়োগপত্র দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
07 Oct 20200টিকলকাতা, ৭ অক্টোবর- কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবারের ঘোষণা মতোই ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভা থেকে মাও...আরও পড়ুন »
ডেমোক্রেসির বদলে বাংলায় মমতাক্রেসি চলছে
06 Oct 20200টিকলকাতা, ৬ অক্টোবর- বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়...আরও পড়ুন »
বিজেপি নেতা মণীশ খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ
06 Oct 20200টিকলকাতা, ০৬ অক্টোবর- বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল খুনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি ব...আরও পড়ুন »
বিজেপি নেতা মনীশ শুক্লার মৃত্যু ঘিরে রণক্ষেত্র বারাকপুর
05 Oct 20200টিকলকাতা, ৫ অক্টোবর- অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ বিজেপির দাপুটে নেতা মণীশ শুক্লাকে খুনের ঘটনায় সোমবার সকাল থেক...আরও পড়ুন »
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা
05 Oct 20200টিকলকাতা, ৫ অক্টোবর- পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের মণীশ শুক্লা নামে এক বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.