ক্রাইস্টচার্চ, ১৫ মার্চ- নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় দুই মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় নিহতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান ভুইয়া। তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে দুজন হলেন- স্থানীয় লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদ ও তার স্ত্রী। নিহত আরেকজন হলেন- গৃহবধূ হোসনে আরা ফরিদ। নিহত ড. সামাদ বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। শফিকুর রহমান ভুইয়া আরো জানান, মসজিদে হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া গোলাগুলির ঘটনার পর থেকে তিন বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে চালানো হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে ৪৮ জন। দেশটির পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ জানিয়েছেন, আল নুর মসজিদেই নিহত হয়েছে ৪১ জন। আর বাকিরা লিনউডের আরেকটি মসজিদে নিহত হয়েছেন। এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন জানিয়েছিলেন শুক্রবার চালানো এই হামলায় ৪০ জন নিহত হয়েছে। ভয়াবহ হামলার ঘটনা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান নিউজিল্যান্ডে সফররত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা। এই হামলার পর নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যেকার তৃতীয় ও শেষ টেস্ট বাতিল করা হয়। বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জানান, আমরা যত দ্রুত সম্ভব খেলোয়াড়দের দেশের পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। শুক্রবার দুপুরে সিলেটের শাহ আমানত বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ নিয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় সরাসরি কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিউজিল্যান্ডে আমাদের কোনো মিশন নেই। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশি দূতাবাসের হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত এক নারী ও তিন পুরুষসহ চার ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ। নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও বর্তমানে হামলাস্থল ক্রাইস্টচার্চ শহরে রয়েছে। দুপুরে হ্যাগলি ওভাল মাঠে অনুশীলন শেষে তাদের আল নুর মসজিদেই নামাজ আদায় করতে যাওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলের খুব কাছেই ছিলেন। তবে তারা সবাই নিরাপদে রয়েছেন। বাংলাদেশ দলের ব্যবস্থাপক খালেদ মাসুদ পাইলটও ক্রিকেটারদের নিরাপদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দলের সদস্যদের সবাই হোটেলে ফিরে এসেছেন। তাঁদের হোটেল থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্রাইস্টচার্চের শহরতলি লিনউডের মসজিদেও সশস্ত্র পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। হ্যাগলি পার্ক এলাকা ও আশপাশের লোকজনকে বাড়ি থেকে বের হতে মানা করা হয়েছে। এই পার্কের সামনের ডিয়েন এভিনিউয়ে আল নুর মসজিদটি অবস্থিত। আরও পড়ুন : যে কারণে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা মসজিদে যেভাবে হামলা চালান শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী পুলিশ কমিশনার মাইক বুশের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সেখানকার স্কুল ও চার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গোটা এলাকা পুলিশ ঘিরে রেখেছে। আকাশে হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তারা সেখানে কয়েকটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। কিছু লোকজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে হতাহতের বিষয়টি এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে পুলিশ বা শহর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মোহন ইব্রাহিম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী নিউজিল্যান্ড হ্যারাল্ডকে বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম বৈদ্যুতিক কোনো বিভ্রাটের কারণে বোধ হয় এ রকম শব্দ হচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই দেখলাম, লোকজন দৌড়াতে শুরু করেছে। সেখানে আমার এক বন্ধুও ছিল। তাকে ডাকলেও কোনো সাড়া পাইনি। আমি তাঁর জন্য চিন্তিত। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বন্দুকধারীকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন তারা। আরএস/ ১৫ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2TGvQXo
March 15, 2019 at 11:54PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top