ঢাকা, ২৩ মার্চ- কিংবদন্তি দাবাড়ু রানী হামিদের নাম জানি না এমন কেউ নিশ্চয়ই এ দেশ নেই। তিন দেশের প্রথম ওম্যান ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার। ন্যাশনাল উইমেনস চেস চ্যাম্পিয়নশিপের রেকর্ড উনিশবারের চ্যাম্পিয়ন। রানী হামিদের পুরো নাম সৈয়দা জসিমুন্নেসা খাতুন ডাক নাম রানী। বিয়ের পর তিনি স্বামীর নাম যুক্ত করে রানী হামিদ হন। তাই ক্রীড়াজগতে তিনি রানী হামিদ নামেই পরিচিত। ১৯৮৫ সালে তিনি ফিদে আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার খেতাব পান। তিনি সংসার জীবনে যতটা সফল, তার চেয়ে অনেক বেশি সফল ৬৪ ঘুঁটির দাবায়। ঘোড়ার আড়াই চালটা যেন আঙ্গুলের ডগায় থাকে তার। একের পর এক কিস্তিমাত করতেও জুড়ি নেই সত্তুরোর্ধ্ব দাবাড়ু রানী হামিদের। রানী হামিদের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। বাবা সৈয়দ মমতাজ আলী পেশায় পুলিশ কর্মকর্তা ও মা কামরুন্নেসা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার আরেকটি পরিচয় রয়েছে। তিনি সাবেক তারকা ফুটবলার কায়সার হামিদ ও স্কোয়াশের তারকা খেলোয়াড় জাহাঙ্গীর হামিদ সোহেলের রত্নাগর্ভা মা। ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই রানীর বিয়ে হয়ে যায়। কারণ তখন ১৪-১৫ বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে চলে যান পাকিস্তান। অনেক বছর পর, করাচি থেকে ঢাকায় ফিরে ইডেন কলেজে প্রাইভেট স্টুডেন্ট হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেন তিনি। আইএ পাস করার পর সেই কলেজ থেকেই প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে বিএ পাসও করেন। এরপর এমএ পরীক্ষা দেওয়ারও খুব ইচ্ছা ছিল; কিন্তু দাবা খেলায় জড়িয়ে যাওয়ায় সেটা আর হয়নি বলে জানান রানী। রানী হামিদ বলেন, আব্বা দাবা খুব পছন্দ করতেন। ছোটবেলায় তাকে তার বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে দেখেছি। কিছুই বুঝতাম না তখন; কিন্তু এমনিতে চঞ্চল হলেও দাবা দেখলে আমার পা আটকে যেত। দাবার বোর্ড দেখলেই আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যেতাম, দেখতাম। আমার খুব আগ্রহ ছিল, খেলার সুযোগ ছিল না। আব্বার দাবার ঘুঁটি ধরার সাহস ছিল না। বিয়ের প্রথম দিকে স্বামীর সঙ্গে খেলার চেষ্টা করেছিলাম। উনি অফিস থেকে এসে খেয়েদেয়ে রেস্ট নিতেন, আমি বিছানায় বোর্ড মেলে জোর করে খেলাতে বসতাম; কিন্তু কয়েক চালের পর যখন পরের চাল নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছি-দেখতাম, উনি ঘুমিয়ে পড়েছেন! আমার খেলা ছিল ওই পর্যন্তই। তিনি বলেন, আসলে আমি ভাগ্যবতী ছিলাম। দাবায় তখনকার বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন ছিলেন ড. আকমল হোসেন। তাকে প্রতিবেশী হিসেবে পাওয়ায় একটু ভালোভাবে খেলতে শিখলাম। ১৯৭৭ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মহিলা দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের উদ্যোগে, দাবা ফেডারেশনের সহযোগিতায় এটির আয়োজন করেছিল নবদিগন্ত সংসদ। আমার স্বামী অফিস থেকে এসে বললেন, তুমি খেলবে নাকি? শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম, আমি খেলব? আমি তখন চার বাচ্চার মা। পিওর হাউসওয়াইফ। ঘর থেকে বলতে গেলে বেরই হই না। ভয় লাগল একটু; কিন্তু আমার যেহেতু উত্সাহ বেশি, তাই খেলতে গেলাম। দেখলাম, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রীরা বড় বড় দাবার বই বগলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তারা খেলবেন। আরো খেলতে এসেছেন মেডিক্যালের ছাত্রী, কয়েকজন মহিলা ও কয়েকজন স্কুলছাত্রী। আমিই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলাম। পরের দিন পত্রিকার প্রথম পাতায় নিজের ছবি দেখে অবাক হয়ে ভাবলাম, কালকে ছিলাম গৃহিণী, আজকে দেখি চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু! রানী বলেন, শারীরিক কসরত আছে- এ রকম খেলা মেয়েরা একটা বয়সের পর আর খেলতে পারবে না; কিন্তু কেউ চাইলে আমরণ দাবা খেলতে পারে। দাবা আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য সব দিক থেকেই উপযোগী। প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৮ সালের প্রতিযোগিতাসহ ন্যাশনাল উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি রেকর্ড ১৯ বারের চ্যাম্পিয়ন। আসলে তিনি ২১ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। কিন্তু দাবা ফেডারেশন যেহেতু ফিডের (ওয়ার্ল্ড চেস ফেডারেশন) মেম্বার হয়েছে ১৯৭৯ সালে, তাই আগের দুই বছরের প্রতিযোগিতা অফিশিয়ালি কাউন্ট হয় না। এমএ/ ১০:২২/ ২৩ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2JzRGqS
March 24, 2019 at 04:20AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top